শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

জনগণ আন্দোলনের ডাক চায়

মেজর আখতার (অব.)

জনগণ আন্দোলনের ডাক চায়

তারেক রহমান-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি এই পদে আসীন আছেন সেই ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সাল থেকে। বলা হচ্ছে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। দেশের তরুণদের মধ্যে তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে প্রচার চালানো হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দিচ্ছে অন্য জায়গায়। রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে রাজনৈতিক দল। যেখানে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ঝানু রাজনীতিবিদরা রাজনীতির দাবার চাল খেলে থাকেন। তারেক রহমানকে তারুণ্যের প্রতীক বা তৃণমূলের অতি জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতা হিসেবে যে ভাবমূর্তি তৈরি করা হচ্ছে সেখানে শীর্ষ জাতীয় নেতা হিসেবে তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলানো হচ্ছে। প্রকারান্তরে তারেক রহমানের ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী তাঁর এক বক্তব্যে হাস্যরস করে প্রশ্ন করেছিলেন- বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? প্রশ্নটি খুবই হালকা ছিল; তার পরও বিএনপির নেতৃবৃন্দ স্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি। সম্প্রতি জাতীয় সরকার নিয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু জাতীয় সরকারের প্রধান তারেক রহমান হবেন তা বিএনপি স্পষ্ট করে বলতে পারছে না। নেতারা ঘুরেফিরে ধানাইপানাই করে কথা বলছেন। কিন্তু বিএনপির বক্তব্যে স্পষ্টতা দরকার। কারণ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তারেক রহমানই হবেন প্রধানমন্ত্রী যা অত্যন্ত স্পষ্ট। বর্তমানে তারেক রহমান ছাড়া বিএনপির আর কোনো নেতা নেই, যিনি বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রেখে সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। বিএনপির মূল নেতৃত্ব এখন প্রশ্নাতীতভাবে তারেক রহমানের নিয়ন্ত্রণে যা নিয়ে কারও কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকার কোনো অবকাশ নেই। বিএনপি এখন আন্দোলন, নির্বাচন এবং নির্বাচন-উত্তর জাতীয় সরকার- এ তিন ইস্যুতে সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্যের চেষ্টা করছে; যাকে বিএনপি পরিবর্তনের কর্মসূচি বলছে। অথচ তাদের সেই পরিবর্তনের কর্মসূচির নেতৃত্ব কে দেবে তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না বা বলছে না। সরকারবিরোধী জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অস্পষ্টতা রাজনীতিতে এক ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি করছে যার ফলে একটি শক্তিশালী আন্দোলন দানা বাঁধতে পারছে না। কোনো আন্দোলন বা সংগ্রাম তৈরি করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন একজন কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতার। শীর্ষ নেতার ইমেজ, ক্যারিশমা, তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা, সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা, সাংগঠনিক পারদর্শিতা, নেতার অনুগত ও অনুসারী বিশাল কর্মীবাহিনী, জনগণের কাছে আবেগপূর্ণ ও সংবেদনশীল রাজনৈতিক মতাদর্শ, জনকল্যাণ ও জনতুষ্টিমূলক কর্মসূচি বা সনদই প্রধানত একটি গণমুখী আন্দোলনকে বেগবান করে তোলে। এসব যোগ্যতা ও গুণ বিএনপি নেতৃত্বের আছে। কিন্তু তা রহস্যজনকভাবে স্পষ্ট করা হচ্ছে না। ফলে আন্দোলন যেমন তার লক্ষ্য ঠিক করতে পারছে না, তেমনি আন্দোলনে কোনো গতি আসছে না। বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে তিনটি লক্ষ্য সামনে নিয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। গোড়ায় গলদ। যে তিনটি ইস্যু নিয়ে বিএনপি সরকারবিরোধী অন্যসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবে- প্রশ্ন হবে সেই তিনটি ইস্যু কে বা কারা নির্ধারণ করে দিল? এ তিনটি ইস্যু কাদের জন্য বা কে প্রণয়ন করেছে? যে কোনো আলোচনা করতে গেলে বিষয়ের বা এজেন্ডার বাইরে আলোচনার কতটুকু সুযোগ থাকবে? আলোচনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কে নেবেন? আন্দোলন, নির্বাচন ও নির্বাচন-উত্তর জাতীয় সরকারের নেতৃত্বের কাঠামো তথা নেতৃত্বের দায়িত্ব কাদের ওপর অর্পিত হবে? জাতীয় সরকারে কারা থাকবেন? আলোচনা করতে গেলে ইত্যাকার প্রশ্ন সামনে চলে আসবে। যাদের সঙ্গে বিএনপি আলোচনা করতে চায়- কথিত তিনটি ইস্যুর ব্যাপারে তাদের আগ্রহ কতটুকু তা জেনে নেওয়ারও যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে।

কথিত তিনটি ইস্যুর প্রথমটি হলো- আন্দোলন। আন্দোলন বহুমুখী অর্থবিশিষ্ট একটি ব্যাপক শব্দ যার ব্যাপ্তি অসীম। দ্বিতীয় ইস্যুটি হলো নির্বাচন। বিএনপি মহাসচিব বলে বেড়াচ্ছেন এ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। এটি মহাসচিবের ইচ্ছা বা আকাক্সক্ষা। কারণ বিএনপির নির্বাহী কমিটির কোনো সভায় এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি- যারা দলের গৃহীত নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। স্থায়ী কমিটি অবশ্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এটি বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত যার নির্বাহী কোনো বৈধতা আছে বলে অনেকে মনে করেন না। তা ছাড়া বিএনপি যদি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সে নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো আইনগত ভিত্তিও নেই। অতীতেও অনেক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তাই বলে ওইসব নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। আগামীতেও বিএনপি ও তার শরিক রাজনৈতিক পক্ষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে সে নির্বাচন যে অবৈধ হয়ে যাবে, তারও কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে সে নির্বাচন অবশ্যই সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হবে না তার শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দুর্বলের কান্না কে শোনে! গ্রহণযোগ্যতার ধার কে-ই বা ধারে! বিশ্ব চলে শক্তির জোরে! দুর্বলের জন্য সবার সহানুভূতি, সমবেদনা থাকবে, সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে সদুপদেশ থাকবে, আপাতত মেনে নেওয়ার প্রচ্ছন্ন আভাস থাকবে। কিন্তু শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মাঠে এসে কেউ লড়বে না। দুর্বলকে মাঠে লড়ে তার নিজের অবস্থানের পরিবর্তন নিজেকেই করতে হবে। তাই বিএনপি এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না- এ ইস্যুতে আন্দোলনের সঙ্গী পাওয়া শুধু কঠিন নয়, রীতিমতো অসম্ভব হয়ে যাবে। এমনকি এ ইস্যুতে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখাও যথেষ্ট কঠিন হয়ে যাবে। দৃশ্যত মনে হবে, কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু সরকার যদি ঠিকমতো টোপ ফেলতে পারে তাহলে বিএনপির একটি ভালো সংখ্যার নেতা-কর্মীও তাদের ভোল পাল্টে ফেলতে পারে। জনগণ বিএনপির অনেক স্থানীয় নেতার প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল এবং তাদের ওপর যথেষ্ট আস্থাও রাখে। সেই সঙ্গে বর্তমান সরকারি দলের নেতাদের অপকর্মের বিপক্ষে ওইসব স্থানীয় বিএনপি নেতারা বিকল্প প্রার্থী হিসেবে জনগণের আস্থায় চলে এসেছেন যারা হয়তো দলত্যাগের ঝুঁকি নিয়েও নিতে পারেন। তা ছাড়া দলের ভিতরে শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে অসন্তোষ ক্রমে দানা বাঁধছে। শীর্ষ নেতার আচার-আচরণ ও কর্মপদ্ধতি দলের ভিতর অনেকের মধ্যে হতাশা দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে। সবাই পদ ও মনোনয়নের আশায় মুখ খুলে কিছু বলছে না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে অভিমানে ফুঁসছে। শেষ পর্যন্ত কাক্সিক্ষত পদ ও পদবি না পেলে বা মনোনয়ন না পাওয়ার ভিত্তি তৈরি হলে হতাশা থেকে বিদ্রোহ করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে। দলের সবার মধ্যে এ বিশ্বাস গেড়ে বসেছে যে সংগঠন বা আন্দোলন করে দলের কোনো পদ বা পদবি ও মনোনয়ন পাওয়া যাবে না। এগুলো এখন বেচাকেনার পণ্য! শীর্ষ নেতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ এবং তার সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক ছাড়া অথবা শীর্ষ নেতার ব্যক্তিগত সহচর যাদের প্রচন্ড ইমেজ সংকট রয়েছে তাদের আনুকূল্য ছাড়া কোনো পদপদবি ও মনোনয়ন পাওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনা নেই। দলের অনেক ত্যাগী, পরীক্ষিত ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতা এভাবে দলের পদপদবি নিয়ে বা নির্লজ্জের মতো মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে দলের কাজ করতে কখনই আগ্রহী হবেন না। এদের অনেকের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মক্ষমতা কারও চেয়ে কম নয়। বরং অনুকূল সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতা পেলে তারা যেমন বিএনপির রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অবস্থান তুঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন তেমনি হতাশা থেকে বিদ্রোহ করলে বিএনপিকে রাজনীতির সাইড লাইনে বসিয়ে দিতে পারবেন। বিএনপির এই নেতারা শুধু বিএনপির জন্যই চ্যালেঞ্জ নয়, তারা সরকারেরও যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা করলে যে কোনো অঘটন ঘটাতে পারেন। তাদের যথেষ্ট জনভিত্তি রয়েছে এবং যে কোনো নির্বাচনের জন্য তারা চ্যালেঞ্জিং প্রার্থীও। তাই সরকারও এদের প্রতি যথেষ্ট সাবধান। সরকারও এদের কখনো সামনে এগিয়ে আসতে দেবে না। তা ছাড়া দলের প্রতি তাদের কঠোর ও নিরঙ্কুশ আনুগত্যের কারণে তারা কখনই দল ভাঙতে চাইবে না। কিন্তু হতাশা অনেক সময় মানুষকে পাগল করে তোলে; তখন তাদের মূলধারায় ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বলার চেষ্টা করছি, এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার প্রত্যয় শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা যাবে না। অবস্থানটি খুবই দুর্বল রাজনৈতিক অবস্থান। শেষ পর্যন্ত এ রাজনৈতিক ইচ্ছাটি অর্জন করা সফল হবে না। তা ছাড়া দেশি ও বিদেশি খেলোয়াড়দের চাপে বিএনপি তার এ অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না বলার মধ্যেই কেমন যেন যাওয়ার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত রয়েছে! কাজেই এ অবস্থান সামনে রেখে কারও সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে সে আলোচনায় কোনো ইতিবাচক ফল আসবে না তা দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত বলা যায়।

তৃতীয় ইস্যুটি হলো- নির্বাচন-উত্তর জাতীয় সরকার। এটি একটি অসার ইস্যু। কারণ নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠন একটি অলীক কল্পনা। জাতীয় সরকারে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। না হলে সেটি জাতীয় সরকার হতে পারবে না। নিশ্চয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ও তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাবে না যে তাদের বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় সরকারে যোগদান করতে হবে! জাতীয় সরকারের ভাবনা একটি বায়বীয় কাল্পনিক তত্ত্ব যা অসার মস্তিষ্কের চিন্তা এবং আমাদের বিদ্যমান রাজনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও জিয়ার আদর্শের বহুদলীয় রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার পরিপন্থী। কাজেই নির্বাচন-উত্তর জাতীয় সরকার ইস্যুতেও জনবিচ্ছিন্ন কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক সুবিধাবাদী দল নিজেদের কায়েমি স্বার্থে আলোচনায় আসতে পারে কিন্তু আন্দোলনের মাঠে তাদের পাওয়া যাবে না। জাতীয় সরকার ইস্যুতে আওয়ামী লীগ বরং অনেক ধাপ এগিয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগ জাতীয় সরকারের ডাক দিলে সব ফড়িং উড়ে গিয়ে পড়বে!

কথিত তিনটি ইস্যুর প্রথমটি ছিল আন্দোলন। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান। এ রাজনৈতিক প্রত্যয়টি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কঠোর রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে জনগণের কাছে ইতিবাচক অবস্থান তৈরি হতো এবং জনগণও তা অর্জনের আন্দোলন করতে সামনে এগিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারত। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংবিধানিক অবস্থানটি পুনর্বহালের জন্য বিএনপি যদি সর্বাত্মক আন্দোলনের জন্য আলোচনা করতে চায় তাহলে অনেক রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্ব এগিয়ে আসবে তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে আলোচনা শুরু করতে হবে বিএনপিকেই এবং এর নেতৃত্বও দিতে হবে বিএনপিকেই। এ ইস্যুতে আলোচনা শুরুর আগেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দলের চেয়ারম্যানের পূর্ণ দায়িত্ব ও ক্ষমতা নিয়ে তার নেতৃত্বেই আন্দোলনের ঘোষণা দিতে হবে। দলের নেতৃত্বের দ্বৈত অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে তারেক রহমানের প্রতি সর্বমহলের পূর্ণ আস্থা তৈরি হবে না। বর্তমান অবস্থার মতো দ্বৈত নেতৃত্বের সুযোগ নিয়ে সরকার আন্দোলন বানচাল এবং দলে বিভক্তি আনার পথ তৈরি করে দেবে। বিষয়টি যতই তিক্ত বা অনভিপ্রেত হোক না কেন, আন্দোলনের বৃহত্তর স্বার্থে তারেক রহমানকে সর্বময় ক্ষমতাবান চেয়ারম্যান করার কোনো বিকল্প নেই। আর যদি দল তারেক রহমানকে সর্বময় ক্ষমতাবান না করতে চায়, তাহলে অবশ্যই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি অবস্থাতেই চেয়ারম্যানের পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে নিতে হবে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদ বিলুপ্ত করে তারেক রহমানকে দলের সব ধরনের দায়িত্ব থেকে আপাতত নীরব রাখতে হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সরকারের জেলে বন্দি থেকে গায়েবি আওয়াজের মাধ্যমে দল পরিচালনা করবেন। সব আন্দোলন-সংগ্রাম তাঁর গায়েবি নেতৃত্বে পরিচালিত হবে। সবাই তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে নিজেদের ক্ষমতা, বুদ্ধি, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পারঙ্গমতার মাধ্যমে আন্দোলন বেগবান ও সফল করবেন। আন্দোলন সারা দেশে একযোগে ছড়িয়ে দিতে হবে যার কোনো মধ্য পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ বা নির্দেশনা থাকবে না। দেশনেত্রীর গায়েবি নির্দেশনায় সবাই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আন্দোলনে ও সংগঠনে কোনো কেন্দ্রীয় বা উপরস্থ বা মধ্য পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। সবাই তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন ও সংগঠনকে শক্তিশালী করবে। যারাই যেখানে বিজয়ী হবেন তারাই সেখানে ‘সিকান্দর’ হবেন। জান বাজি রেখে আন্দোলনে সবার সম্মিলিত স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে যার যার জায়গায় বিজয়ী হতে পারলে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াই চূড়ান্ত বিজয়ী হবেন। বিজয়ী হয়ে তিনি জেল থেকে মুক্ত হয়ে তারেক রহমানকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে এনে প্রধানমন্ত্রী বানাবেন যা আমরা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আনন্দের সঙ্গে মেনে নেব। তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে হয় তিনি রাষ্ট্রপতি হবেন অথবা সক্রিয় রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেবেন। আমরা সবাই আমাদের অধিকার ফিরে পাব। দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। শহীদ জিয়ার পথ ধরে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমরা বহুধাপ এগিয়ে যাব।

যারা রাজনৈতিক সচেতন নন বা যাদের রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি নেই, তারা অবশ্যই আমার এ বক্তব্যে ভুল বুঝবে এবং আমাকে আবার দল থেকে বহিষ্কার করতে সোচ্চার হবে। তার পরও বলব, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ছাড়া বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার মতো কোনো নেতা নেই এবং আরও বলব, আন্দোলন ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোনো রাজনীতিও নেই। জেল, জুলুম, নির্যাতন সবকিছু মাথায় নিয়ে বিএনপির সবাইকে আন্দোলনের মাঠে নামতে হবে। আন্দোলনে মাঠে নামতে না পারলে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন না, তারেক রহমান দেশে ফিরে আসতে পারবেন না। বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাবে। তখন দেশনেত্রীর লাশ কারাগার থেকে বের করে আনা ছাড়া কোনো গত্যন্তর থাকবে না। তবে তার আগে আমি অবশ্যই পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে আমার মৃত্যু কামনা করব।

ঈদ কিন্তু চলে গেল- ‘জাগো বাহে, জাগো’।

 

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর