রবিবার, ২২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বন্যার্তদের সেবায় আল্লাহর সন্তুষ্টি

যুবায়ের আহমাদ

বন্যার্তদের সেবায় আল্লাহর সন্তুষ্টি

বাংলাদেশ প্রতিদিনের একটি খবরের শিরোনাম ‘ডুবছে নতুন নতুন এলাকা’। খবরে বলা হয়, বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত। ক্রমেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বানের পানিতে ভেসে যাচ্ছে গবাদি পশু ও মাঠের ফসল। শোচনীয় হয়ে পড়েছে বন্যার্তদের জীবনযাত্রা। পানিবন্দি হওয়ায় শ্রমিকদের কাজকর্ম বন্ধ। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট চরম আকার ধারণ করছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। হঠাৎ বন্যায় আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মানুষও অভাবে পড়েছে। সাধ্যমতো সহযোগিতা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ধর্মীয় ও মানবিক দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। যারা নিরাপদে আছেন তাদের জন্যও এ বন্যা এক পরীক্ষা। তা হলো সামর্থ্য অনুযায়ী তারা বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন কি না। যারা বন্যাক্রান্ত হননি তারাও ওই বন্যা-দুর্গতদের জন্য ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, খাবার স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার মাধ্যমে তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মর্যাদা লাভ করতে পারেন। বিত্তশালীরা যদি আল্লাহর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এই মানুষগুলোর মানবেতর জীবনযাপন দেখেও তাদের সাহায্যে এগিয়ে না এসে হাত গুটিয়ে বসে থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হবে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন (আদমসন্তানকে বলবেন) হে আদমসন্তান, আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমার সেবা করনি; আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাবার দাওনি। বান্দা বলবে, হে আল্লাহ! আপনি তো বিশ্বজগতের প্রভু। আমরা কীভাবে আপনাকে খাবার খাওয়াব (এ সাধ্য তো আমাদের নেই)। আল্লাহ বলবেন, তোমার কি মনে নেই যে আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল। তুমি কি জান না যে যদি তুমি তাকে খাবার দিতে তাহলে তা আমাকেই খাওয়ানো হতো। তুমি তা আমার কাছে ফেরত পেতে। আল্লাহ বলবেন, হে আদমসন্তান! আমি তৃষ্ণার্ত অবস্থায় তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। বান্দা বলবে, হে আল্লাহ! আপনি তো বিশ্বজগতের প্রভু। আমরা কীভাবে আপনাকে পান করাব (এ সাধ্য তো আমাদের নেই)? আল্লাহ তখন বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল। তুমি তাকে পান করাওনি। যদি তুমি তাকে পান করাতে তাহলে তুমি তা আমার কাছে পেতে। (মুসলিম) প্লাবিত এলাকায় বসবাসরত আমাদের কোনো আত্মীয় বিপদে পড়েছে কি না তার খোঁজখবর নিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করা খুবই জরুরি। সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও যারা বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না তাদের জন্য আল্লাহর দয়া সংকুচিত হয়ে আসবে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হয় না।’ (তিরমিজি) পক্ষান্তরে যারা তাদের এই দুঃখের দিনে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করে তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করবে আল্লাহ তাদের মহান পুরস্কারে ভূষিত করবেন। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জমিনে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া কর, আকাশে যিনি আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (তিরমিজি) বন্যার্তদের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করলে আল্লাহ তাদের জান্নাতে রিজিক দিয়ে সম্মানিত করবেন। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীনকে কাপড় পরাবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ রেশমি কাপড় পরাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্তকে আহার করাবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পবিত্র প্রতীকধারী শরাব পান করাবেন।’ (আবু দাউদ)

 

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফীক জামে মসজিদ গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর