করোনাভাইরাসের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই জগদ্বাসীর জন্য হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মাঙ্কিপক্স। প্রাণঘাতী না হলেও মাঙ্কিপক্সে কেউ আক্রান্ত হলে ত্বকে থেকে যায় ক্ষতচিহ্নের দাগ। বিশ্বের ১১টি দেশে অন্তত ৮০ জনের দেহে এ ভাইরাস শনাক্ত করা গেছে। ১৯৭০ সালে জায়েরে বা কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে প্রথম মানুষের মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। ওই দেশের ৯ বছর বয়সী ছেলের মধ্যে পাওয়া যায় মাঙ্কিপক্স। ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১টি আফ্রিকান দেশ- বেনিন, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গ্যাবন, আইভরি কোস্ট, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া, সিয়েরা লিওন এবং দক্ষিণ সুদানে মানুষের মাঝে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা ছিল প্রথমবারের মতো আফ্রিকার বাইরে কোনো দেশে এই রোগের সংক্রমণ। সংক্রামিত প্রাণীর রক্ত, শারীরিক তরল পদার্থ, ত্বকের ক্ষত বা শ্লেষ্মার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ফলে প্রাণী থেকে মানুষের মাঝে এই রোগ ছড়ায়। সংক্রামিত রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের ক্ষত থেকে এবং নাক, মুখ ও চোখের ভিতর দিয়ে এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মাঝে ছড়ায়। শ্বাসযন্ত্রের ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণে সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী ফেস টু ফেস যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। যা স্বাস্থ্যকর্মী, পরিবারের সদস্য এবং সংক্রামিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠদের যোগাযোগকে বেশি ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। সাধারণত এই রোগের উপসর্গ দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মাঙ্কিপক্স প্রাণঘাতী না হলেও এটি যে বিরক্তিকর ভাইরাস তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। শিশুদের ক্ষেত্রে পক্সটি তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিকর। দুনিয়াজুড়ে মাঙ্কিপক্স ঝুঁকি সৃষ্টি করলেও এটি এমন এক ভাইরাস যা সহজে চিহ্নিত করা যায়। চিকেন পক্স বা গুটি বসন্তের টিকা নিলে এ ভাইরাস থেকে ৮৫ ভাগ সুরক্ষা মেলে। তবে দুনিয়াজুড়ে গুটি বসন্ত নির্মূল হয়ে যাওয়ায় এ ভ্যাকসিনের সরবরাহ একেবারে সীমিত। আফ্রিকা থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। বানর, কাঠবিড়াল, ইঁদুরের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। মাঙ্কিপক্সে ১১টি দেশে কিছু লোকজন আক্রান্ত হলেও আক্রান্তের সংখ্যা একেবারে সীমিত। ফলে আতঙ্কে না ভুগে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে আগতদের ব্যাপারে থাকতে হবে সতর্ক।