শিরোনাম
শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

হাজিদের লাব্বাইক বলে হাজিরা দেওয়ার হাকিকত

মো. আল আমিন মুবাশশির

‘তালবিয়া’ শব্দটি ‘লাব্বা’র ক্রিয়ামূল। আর ‘লাব্বা’ অর্থ হচ্ছে মুহরিম ব্যক্তি হজ ও ওমরাতে ‘লাব্বাইক’ বলল। নবী (সা.) তাঁর ইহরাম বাঁধার সময় বলেছিলেন, ‘লাব্বাইক উমরাতান ওয়া হাজ্জাতান’। লাব্বাইক শব্দটি কারও ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য সুন্দর একটি শব্দ। রসুল (সা.) কতিপয় সাহাবিকে ডেকেছেন এবং তাঁরা লাব্বাইক বলে সাড়া দিয়েছেন মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায়। রসুল (সা.)-এর ডাকে তাঁদের কেউ কেউ বলতেন, লাব্বাইকা ইয়া রসুলাল্লাহ! আবার কেউ কেউ বলতেন, লাব্বাইকা ওয়া সাদাইক। সহি বুখারিতে এমন বেশ কয়েকটি হাদিস পাওয়া যায় (হা/১২৮, ৪৫৭, ৫৩৭৫ এবং ৬২৬৮)। ইমাম আবু দাউদ তাঁর সুনানের শিষ্টাচার অধ্যায়ে (হা/১৬৭) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এভাবে, কাউকে ডাকা হলে সে বলবে, লাব্বাইক। ইমাম বুখারি তাঁর ‘আল-আদাবুল মুফরাদ’ গ্রন্থে (৪২৭) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এভাবে, যে ব্যক্তি ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় লাব্বাইক বলবে। স্বয়ং মহান আল্লাহ মানুষকে হজ করতে ডেকেছেন। তিনি তাঁর নবী ইবরাহিম (আ.)-কে বলেন, মানুষের মধ্যে হজের জন্য ঘোষণা দিয়ে দাও। তারা দূরদূরান্ত থেকে হেঁটে এবং সকল প্রকার হালকা-পাতলা উটের পিঠে সওয়ার হয়ে তোমার কাছে আসবে। (সুরা হজ, আয়াত ২৭) অতএব, কোনো মুসলিম যখন মিকাতে এসে ইহরাম বেঁধে ফেলবে, তখন তালবিয়া পড়বে। যার অর্থ হচ্ছে, হে প্রতিপালক! আপনি আপনার পবিত্র ঘরে হজ করার জন্য আমাকে ডেকেছেন এবং আমার জন্য তা সহজসাধ্য করে দিয়েছেন। অতএব, হে আল্লাহ! আমি আপনার আহ্বানে সাড়া দিয়েছি। লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক অর্থ হচ্ছে, সাড়া প্রদানের পর সাড়া দেওয়া। রসুল (সা.) এভাবে তালবিয়া পড়তেন : লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নি’মাতা লাকা ওয়াল-মুলক, লা শারিকা লাক। (অর্থাৎ ‘আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নিয়ামত এবং সাম্রাজ্য আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই।) (বুখারি, মুসলিম) রসুল (সা.) -এর তালবিয়ায় তাওহিদের বাণী বিঘোষিত হয়েছে এবং শিরকের সঙ্গে সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করা হয়েছে। আর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর দাবিও তাই। এখানে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক অর্থ আল্লাহ ছাড়া। আর লা শারিকা লাক অর্থ কোনো মাবুদ নেই। অন্যান্য ইবাদতের মতো হজও একটি ইবাদত। সুতরাং কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং রসুল (সা.) প্রদর্শিত পদ্ধতিতেই তা আদায় করতে হবে। কেননা ইবাদত কবুল হওয়ার দুটি শর্ত হচ্ছে- আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা ও রসুল (সা.)-এর অনুসরণ। তালবিয়ায় আল্লাহর বড়ত্ব ও প্রশংসা রয়েছে। তিনিই রাজাধিরাজ, অনুগ্রহপরায়ণ এবং যাবতীয় প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।

 

লেখক : গবেষণা শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর