বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

হজ-ওমরাহর ফজিলত

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

হজ-ওমরাহর ফজিলত

দয়াময় আল্লাহর রহমত ও করুণার  দ্বার সর্বক্ষণ খোলা থাকে। অনবরত নাজিল হয় তাঁর কল্যাণের বারিধারা। তিনি তাঁর রহমত ও দয়ার বিশেষ বিশেষ অফার ও সুবর্ণ সুযোগ প্রদান করেছেন। বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে তিনি তাঁর অনেক বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। তাদের জীবনের সব পাপ মুছে দেন। পুণ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন অনেক অনেক গুণে। ওইসব অফারের শ্রেষ্ঠ এক সময় হলো হজ মৌসুম। হজ ও ওমরাহর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কল্যাণ ও ফজিলত। এর অংশবিশেষ আলোচনার প্রয়াস পাব। ১. রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হজ ও ওমরাহ পালনকারীরা আল্লাহর কাফেলা। তারা দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন, ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করেন।’ (নাসায়ি) ২. হজ হলো শ্রেষ্ঠতম আমল ও অন্যতম একটি পুণ্যকর্ম। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্র্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো শ্রেষ্ঠতম আমল কোনটি? তিনি বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি ইমান গ্রহণ করা।’ বলা হলো, এরপর কী? তিনি বলেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা।’ বলা হলো, তারপর কী? তিনি বলেন, ‘বিশুদ্ধ হজ।’ (বুখারি, মুসলিম) ৩. হজ হলো মানুষের জীবন পবিত্র করার অন্যতম উপায়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে হজ করল আর তখন নারী সম্পর্কিত পাপাচার এবং ইসলামবহির্ভূত কোনো কাজে লিপ্ত হয়নি, সে তার মায়ের গর্ভ থেকে যেমন পূতপবিত্র ভূমিষ্ঠ হয়েছিল তেমনি পাপমুক্ত অবস্থায় আপন ঘরে প্রত্যাবর্তন করবে।’ (বুখারি, মুসলিম) ৪. নিয়মিত হজ-ওমরাহ করা দারিদ্র্য বিমোচনের সহায়ক হয়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা নিয়মিত হজ-ওমরাহ পালন কর। কেননা নিয়মিত হজ ও ওমরাহ পালনের মাধ্যমে অভাব দূর হয় এবং তা সব পাপ মুছে দেয়, যেভাবে হাপর ( অগ্নি উত্তাপের যন্ত্র) লোহার মরীচিকা বিদূরণ করে দেয়।’ (তিরমিজি) ৫. বিশুদ্ধ হজের বিনিময় হলো জান্নাত। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একটি ওমরাহর পর আরেকটি ওমরাহ করা হলে তা মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় পাপের কাফ্ফারা হয়ে যায়। আর বিশুদ্ধ হজের একমাত্র বিনিময় হলো জান্নাত।’ (তিরমিজি, আহমদ) ৬. ‘হজ মুসলমানের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মিলনমেলা।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১২৫) সামাজিক ও মানবতার ধর্ম ইসলাম। এ ধর্মে প্রতিদিন পাঁচ বেলা, সপ্তাহে এক দিন ও বছরে দুই দিন মুসলমানের দেখাসাক্ষাৎ, খবরাখবর আদান-প্রদান ও সুখ-দুঃখে অবহিত হওয়া এবং সহযোগিতা করার নীতি রয়েছে। রয়েছে জীবনে অন্তত একবার বিশ্ব মহাসমাবেশে উপস্থিত হওয়ার বিধান। এ সমাবেশে মুসলমানরা দিগ্দিগন্ত থেকে ছুটে আসে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের আশায়। এখানে বর্ণ-ভাষার বৈষম্য নেই। নেই ধনী-গরিবের কোনো পার্থক্য। আছে ধৈর্য, সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও ঐক্যের শিক্ষা। সব পার্থক্য ভুলে সেদিন সবার মুখে একসঙ্গে উচ্চারণ হয় আল্লাহর প্রশংসা ও একাত্মবাদের ধ্বনি। ৭. হজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও একটি ফজিলত হলো, ইসলামের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো প্রদর্শনের সুযোগ লাভ এবং মসজিদে হারাম, হাজরে আসওয়াদ, কাবার দরজা মুলতাজাম, মাকামে ইবরাহিম, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফার মতো বরকতপূর্ণ স্থানগুলোয় দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে ইহ ও পরকাল ধন্য করার অফুরন্ত অফার। যার ফলে প্রতিটি মোমিন মুসলমান অন্তরে হজ পালনের আগ্রহ লালন করে। তবে যাদের এ প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি, তাদের জন্য সুসংবাদ হিসেবে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজর নামাজ আদায় করবে, এরপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকির করবে, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে তার জন্য পরিপূর্ণ-পরিপূর্ণ-পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহ পালনের বিনিময় নিহিত রয়েছে।’ (তিরমিজি)

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর