চিড়িয়াখানার পশুপাখির খাবারের জন্য বরাদ্দ অর্থের এক বড় অংশ মানুষবেশী পশুরা আত্মসাৎ করে এমন অভিযোগ ওপেন সিক্রেট। আর সে কারণেই জাতীয় চিড়িয়াখানার কয়েক শ প্রাণী অবহেলা ও উদাসীনতার শিকার হয়ে এখন ধুঁকছে। পশুপাখির বদৌলতে যারা চাকরিতে নিয়োজিত এবং পরিবার-পরিজনসহ খেয়েপরে বেঁচে থাকার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন তাদের একাংশের আত্মসাৎ, অবহেলা ও উদাসীনতা দেশের বৃহত্তম চিড়িয়াখানার অস্তিত্বের জন্যই হুমকি সৃষ্টি করেছে। এ চিড়িয়াখানার পশুপাখির দিকে তাকালেই অনুভব করা যায় কী জঘন্য আচরণের শিকার তারা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় চিড়িয়াখানার বোবা প্রাণীগুলোর চোখে-মুখে ফুটে উঠছে নির্যাতনের চিত্র। বিশ্বের আর কোনো প্রাণী সংগ্রহশালায় এমন অমানবিক দৃশ্য কল্পনা করাও কঠিন। বনের রাজা সিংহ মিরপুর চিড়িয়াখানার খাঁচায় এসে হয়েছে হাড্ডিসার। খাঁচায় খাবারের পরিবর্তে পড়ে রয়েছে একটুকরো হাড্ডি। সেদিকে তার দৃষ্টি নেই। উদাসীন সিংহের চোখে কান্না। পায়ের ক্ষত নিয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে শক্তিমান রয়েল বেঙ্গল টাইগার। হাড় বেরিয়ে এসেছে উল্লুকের। নড়াচড়ার শক্তিও যেন নেই। চোখ নষ্ট নিয়ে ধুঁকছে দুরন্ত ভুবনচিল। কচ্ছপের শরীরজুড়ে জমেছে শেওলার পুুরু স্তর। দেখে বোঝার উপায় নেই কচ্ছপ নাকি ঘাসের ঢিপি। পরিচর্যার অভাবে বিবর্ণ হাতি। ক্ষুধার তাড়নায় প্লাস্টিক আবর্জনা খাচ্ছে উটপাখি। চর্মরোগে খসে পড়েছে পালক, বেরিয়ে এসেছে চামড়া। আঘাতের ক্ষত ও রোগের কারণে দাঁড়াতেই পারছে না গন্ডার। ইমু পাখি দেখে কান্না আসে দর্শনার্থীদের। চর্মরোগে পাখিগুলোর শরীরে দেখা দিচ্ছে দগদগে ঘা। বিনোদনের জন্য শিশুদের নিয়ে এসে মন খারাপ করে ফিরতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। ১৮৬ দশমিক ৬৩ একর জমিতে গড়ে ওঠা জাতীয় চিড়িয়াখানায় রয়েছে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি পশুপাখি। অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার শিকার এসব অসহায় প্রাণী। এত বিশালসংখ্যক পশুপাখির স্বাস্থ্যরক্ষা ও চিকিৎসার জন্য রয়েছেন মাত্র তিন চিকিৎসক। তাঁরা পশুপাখির স্বাস্থ্য পরিচর্যায় কতটা নজর দিতে পারেন সহজেই অনুমেয়। অভিযোগ রয়েছে, চিড়িয়াখানার পশুপাখির জন্য বরাদ্দ খাদ্যের অর্থের এক বড় অংশ আত্মসাৎ হয়। আমরা আশা করব অভিযোগটা খতিয়ে দেখবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা রোধে নেওয়া হবে যথাযথ ব্যবস্থা। জাতীয় চিড়িয়াখার তত্ত্বাবধানে যাঁরা আছেন তাঁদের সুমতি ফেরাতে নজরদারির বিকল্প নেই।