ওষুধের দাম বেড়েছে ওষুধ কোম্পানি ও আমলাদের যোগসাজশে। এ মূল্যবৃদ্ধি দেশের গরিব ও নিম্নবিত্তদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ২০ জেনেরিকের ৫৩ ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৩২ শতাংশ পর্যন্ত। অভিযোগ উঠেছে, ওষুধ কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছিল অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মায়ের চেয়ে মাসির দরদ দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির ৫৮তম সভায় পুনর্নির্ধারিত দাম অনুমোদন করা হয়। এর আগে ২০১৫ সালে কয়েকটি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছিল। প্রায় সাত বছর পর আবারও বাড়ানো হয়েছে অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম। এর মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার প্যারাসিটামলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ থেকে শতভাগ। ৪০ টাকার এমোক্সিসিলিনের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭০ টাকা, ২৪ টাকার ইনজেকশন ৫৫ টাকা। ৯ টাকার নাকের ড্রপের দাম ১৮ টাকা। ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল, এক্সিপিয়েন্ট, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, পরিবহন ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয়, ডলারের বিনিময়মূল্য, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ওইসব যুক্তিতেই ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বৃদ্ধির জন্য যেসব কারণ দেখানো হয়েছে আমরা তার কোনোটিই নাকচ করতে চাই না। তবে ওষুধ বিপণনের ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি ও অসততা রয়েছে তা এড়াতে পারলে দাম বৃদ্ধির বদলে কিছুটা কমালেও উৎপাদকদের মুনাফায় ঘাটতি পড়ত না বলে আমাদের বিশ্বাস। আমাদের দেশে ওষুধ বিপণনে চিকিৎসকদের যে উৎকোচ দেওয়া হয় তা এক কথায় বিশাল। যেসব কোম্পানি চিকিৎসকদের উৎকোচ দেয় না সেসব কোম্পানির ওষুধের মান ভালো থাকলেও ডাক্তাররা তাদের প্রেসক্রিপশনে তা লেখেন না। ব্র্যান্ড নামের বদলে জেনেরিক নামে ওষুধ বিপণনের ব্যবস্থা হলে ১ টাকার ওষুধের ৩০ পয়সা অনৈতিকভাবে উৎকোচ হিসেবে ব্যয় করার ঘৃণ্য প্রথার অবসান ঘটবে। এ বিষয়ে সরকার নজর দিলে দ্বিগুণ দামে ওষুধ কেনার বিড়ম্বনা থেকে দেশবাসী রক্ষা পাবে।