পবিত্র আশুরা বা ১০ মহররম ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহাসিক দিক থেকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। বলা হয়, দুনিয়ার প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-কে এই দিনে সৃষ্টি করা হয়। বিবি হাওয়া (আ.)সহ তাঁকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নির্বাসনে পাঠানো হয় আশুরার দিনে। মহিমান্বিত এই দিনেই তাঁরা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করেন। আশুরার সঙ্গে অনেক নবীর স্মৃতি জড়িত। ১৩৮৩ বছর আগে হিজরি ৬১ সনের এই দিনে কারবালার প্রান্তরে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) শাহাদাতবরণ করেন। ইসলামী বিধানকে ভ্রুকুটি দেখিয়ে অবৈধভাবে খলিফা পদ করায়ত্ত করেন ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া। এহেন বিতর্কিত ব্যক্তিকে খলিফা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন ইমাম হোসাইন (রা.)। অন্যায়ের কাছে মাথানত করার বদলে আহলে বাইতের সদস্যরা শাহাদাতবরণকেই শ্রেয় মনে করেন। মুসলমানরা ইমাম হোসাইন (রা.) তথা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রক্তের উত্তরাধিকারী ও তাঁদের অনুসারীদের অসামান্য আত্মত্যাগের কথা এই দিনে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। শোকাবহ এই দিনটি অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার দিন। সত্যের সঙ্গে অসত্যের লড়াই এক চিরন্তন সত্য। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে চলার যে বিধান প্রবর্তন করেন তাতে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে অসত্য, অসুন্দর ও অকল্যাণের প্রতিভূরা। একপর্যায়ে তারা বাহ্যিকভাবে ইসলামী পতাকার নিচে আশ্রয় নেয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর শুরু হয় গোত্রতন্ত্র ও কায়েমি স্বার্থের ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্রে বিষপানে হত্যা করা হয় নবী-দৌহিত্র হজরত হাসান (রা.)-কে। কারবালায় ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে পরিবার-পরিজন তথা ৭২ জন অনুসারীসহ শাহাদাতবরণ করেন ইমাম হোসাইন (রা.)। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের যে লড়াই তা অপরাজেয়। ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার সৈন্যরা হোসাইন (রা.), তাঁর পরিবার-পরিজন ও সঙ্গীদের জীবন কেড়ে নিতে পারলেও ইতিহাস মহান শহীদদের আদর্শের অমরতাকেই স্মরণ করে। অন্যায় যুদ্ধে আহলে বাইত তথা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধরদের বিরুদ্ধে উমাইয়াতন্ত্র জয়ী হলেও সে জয় ছিল পরাজয়ের চেয়েও লজ্জাকর। কারবালার শহীদদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।