দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও সুনাম বৃদ্ধিতে দেড় শতাধিক বছর ধরে চা শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। কিন্তু তাঁরা সব ধরনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। চা বাগানের অনেক শিশু কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাস করলেও মাধ্যমিক স্তরে গিয়ে ঝরে পড়তে থাকে। মূলত বিদ্যালয়গুলোর অবস্থান দূরে হওয়া এবং অভাবের কারণেই এ ঝরে পড়া। যেখানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি মাত্র ১২০ টাকা, সেখানে টাকা খরচ করে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর কথা অনেকেই ভাবেন না। তাঁদের জীবনমান উন্নয়নের একমাত্র উপায় মজুরি বৃদ্ধি। চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান ধর্মঘট কর্মসূচি ষষ্ঠ দিন পেরিয়ে গেছে। সিলেটসহ সারা দেশের ১৬৭টি চা বাগানের শ্রমিকরা একযোগে কর্মসূচি পালন করছেন। এতে বাগানে চা পাতা তোলা বন্ধ থাকায় চা উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে চার দিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি এবং শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করছেন চা শ্রমিকরা। মজুরি বৃদ্ধির জন্য বাগান মালিক কর্তৃপক্ষ, মজুরি বোর্ড, চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠকের পরও দাবি পূরণ না হওয়ায় ধর্মঘট অব্যাহত আছে। ৩০০ টাকা মজুরি পেলেও বর্তমান বাজারে চার-পাঁচ সদস্যের চা শ্রমিক পরিবারের জন্য খাদ্য বাবদ প্রয়োজনীয় ব্যয় পূরণ হওয়া কঠিন। শ্রম আইনের ১১৫ ধারায় সব সেক্টরের শ্রমিক বছরে ১০ দিন ছুটি ভোগ করছেন, কিন্তু চা শ্রমিকদের জন্য শ্রম আইনে সে সুযোগও রাখা হয়নি। শ্রমিকদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে চা উৎপাদনে বাংলাদেশ নবম স্থানে উঠে এসেছে। এমনকি করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চা শ্রমিকরা উৎপাদনে সক্রিয় থাকায় ২০২১ সালে দেশে ৯৬.৫০৬ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। তার পরও চা শ্রমিকদের প্রতি অবহেলার শেষ নেই। এটা খুবই দুঃখজনক, যা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল এ ব্যাপারে আরও আগে দৃষ্টি দেওয়া।.