জলবায়ু পরিবর্তন দুনিয়ার যেসব দেশের জন্য ভয়াবহ বিপদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশের স্থান তার প্রথম কাতারে। পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ুর অশুভ পরিবর্তন বিপজ্জনক পরিণতির আভাস দিচ্ছে। পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা এখন বন্যাকবলিত। যা এ দেশটির হাজার বছরের ইতিহাসে কখনো ঘটেনি। ভারতেও এ বছর খরা ও বন্যা সমভাবে আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের অশুভ থাবা কয়েক দশক ধরে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধির প্রবণতা বাড়বে ৬ শতাংশ। ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকার আয়তন প্রায় ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার বৃদ্ধি পাবে এবং ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ সুপেয় পানি বঞ্চিত হবে। মঙ্গলবার খুলনায় জলবায়ু পরিবর্তন ও জলবায়ু অর্থায়ন বিষয়ক এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানিয়ে এ অভিঘাত মোকাবিলায় সঠিক নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত ওই কর্মশালায় বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ কারণে জলবায়ু তহবিল ব্যবহারে খুলনার উপকূলীয় এলাকাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত পানি প্রবেশ বন্ধে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। জলবায়ু তহবিলের অর্থের ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করতে হবে। কর্মশালায় জলবায়ুর অশুভ পরিবর্তন সম্পর্কে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা উদ্বেগের। চলতি বছর গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে অনাবৃষ্টির শিকার হয়েছে খুলনা অঞ্চল। আমন ও শীতকালীন শাকসবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আবহাওয়ার এ অপখেলা আগামীতে আরও বাড়তে পারে। তা মোকাবিলায় পরিপূর্ণ প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই। এজন্য দেশের উপকূলীয় এলাকার সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনা নিতে হবে। পরিবর্তিত আবহাওয়ার উপযোগী ফসল উদ্ভাবনও জরুরি।