বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নে একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনমনে চমক সৃষ্টি করেছে। এটি প্রশংসনীয় হলেও প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ক্ষেপণের নজিরও স্থাপিত হয়েছে। এ সময় ক্ষেপণ একদিকে যেমন প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করেছে, তেমন অনেক ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগও বাড়িয়েছে। সরকারের নেওয়া অবকাঠামো খাতের বৃহৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু এবং ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সুফল ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে দেশবাসী। প্রায় সমাপ্তির পথে মেট্রোরেল লাইন-৬ ও কর্ণফুলী টানেল। এ দুটি প্রকল্প চলতি বছরই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশ বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত ডিসেম্বরের মধ্যে খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সমাপ্ত এবং চলমান বৃহৎ প্রকল্পগুলোর কোনোটাই সঠিক সময়ে শেষ না হওয়া দেশবাসীর জন্য বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছে। এমনকি কোনো কোনোটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে নির্ধারিতের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি সময়ে। এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে গুণিতক হারে। এ ছাড়া পদ্মা সেতু রেলসংযোগ, দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্প, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালসহ ১১টি বৃহৎ প্রকল্পের কোনোটিই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি।
বৃহৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা ও ঠিকাদারদের গাফিলতি অনেকাংশে দায়ী। কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে ঘুরেফিরে একটি বিশেষ দেশের ঠিকাদাররা প্রাধান্য পেয়েছে। যে দেশটির ঠিকাদাররা কাজ নেওয়ার ক্ষেত্রে অসততার আশ্রয় নেয়। দরপত্রে কম টাকা দেখিয়ে বাগিয়ে নেয় কাজ। তারপর আমলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নানা অজুহাতে প্রকল্প ব্যয় দ্বিগুণ এমনকি তার চেয়ে বেশিও বাড়িয়ে নেয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ক্ষেপণ করা হয় ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টির অপউদ্দেশ্যে। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আনুকূল্যে শর্ত নির্ধারণ করেন আত্মবিকৃত আমলা এবং প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। ফলে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নে অক্ষমদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় না। এ অপকৌশলের অবসান হওয়া উচিত।