শিরোনাম
রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

রসুল (সা.)-এর ‘চরিত্র মাধুর্য’

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

রসুল (সা.)-এর ‘চরিত্র মাধুর্য’

‘আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী’ এই হলো রসুল (সা.) সম্পর্কে আল্লাহর বাণী। পৃথিবীর সব কলম যাবতীয় কল্পনা আল্লাহর এ বাণীর তাৎপর্য তুলে ধরতে অক্ষম। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐশ্বরিক মানদণ্ডে তাঁর বান্দা রসুল (সা.)-এর ব্যাপারে এ সাক্ষ্য ‘এবং নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কালাম, আয়াত ৪) এবং এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর সুমহান চরিত্রবিশিষ্ট হওয়ার দলিলও বটে। যার প্রকৃত মর্ম আল্লাহ ভালো জানেন। কোনো সৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয় এর স্বরূপ পূর্ণাঙ্গভাবে উপলব্ধি করা। এ বাণী বহুভাবে মুহাম্মদ (সা.)-এর মহত্ত্ব প্রকাশ করে। তিনিই সেই প্রতীক্ষিত নবী। যার মাধ্যমে নবুয়ত প্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এবং নবুয়তের ধারা সমাপ্ত হয়েছে। সুতরাং তাঁর মধ্যে সর্বোত্তম চারিত্রিক জ্ঞানের সমাবেশ আশ্চর্যের কিছু নয়। এটা নবুয়ত সমাপ্তির অনিবার্য বিষয়। রসুল (সা.)-এর চরিত্র ও আচরণই হলো মানদণ্ড। যার ওপর ভিত্তি করে সব আমল ও কাজের মূল্যায়ন হবে। তাঁর চরিত্রই হলো মাপকাঠি, যার মাধ্যমে সব চরিত্রের পরিমাপ করা যাবে। এমন একটি মানদণ্ড থাকা জরুরি। কারণ সময়ের পরিক্রমায়, প্রজন্মের পরিবর্তনে অনেক সময় মূল্যবোধ পাল্টে যায়। মন্দ পরিণত হয় ভালোয়, আর ভালো হয়ে যায় মন্দ। ‘তাঁর আখলাক ছিল হুবহু কোরআন’ এটা উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেছিলেন রসুল (সা.)-এর আখলাক বর্ণনা করতে গিয়ে। এ বর্ণনায় আয়েশা (রা.)-এর গভীর প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের প্রমাণ বহন করে। কোরআনে অনেক কাজ করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে, অনেক কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনেক ফজিলতপূর্ণ আমলের প্রতি উৎসাহ দান করা হয়েছে এবং অনেক বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, কোরআন যা কিছুই বলেছে তিনি তা মেনেছেন যা কিছুই নিষেধ করেছে, তিনি তা বর্জন করেছেন। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরনের অশ্লীলতা, বেহায়াপনা থেকে  নিজেকে সম্পূর্ণ পবিত্র রেখেছেন। অর্থাৎ পৃথিবীর সব মানুষ, সব সভ্যতা যদি কোনো জিনিসকে ভালো বলে আর যদি কোরআন সেটাকে খারাপ বলে তো সেটাকে তিনি খারাপ বলে তার থেকে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে সরিয়ে নিতেন এবং মনেপ্রাণে তা ঘৃণ্য ও বর্জনীয় বস্তু হিসেবে সাব্যস্ত করতেন। আর পৃথিবীর সব মানুষ, সব সভ্যতা যদি কোনো জিনিসকে খারাপ বলে অথচ  কোরআন সেটাকে ভালো বলে তখন তিনি সেটাকে প্রিয় বস্তু এবং করণীয় আমল হিসেবে মনেপ্রাণে কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই গ্রহণ করে নিতেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে তাঁর কালামের মাধ্যমে সব করণীয় ও বর্জনীয় ভালো এবং মন্দকে তিনি যথার্থভাবেই গ্রহণ করে নিতেন এবং কোনো ধরনের তারতম্য, অবহেলা, গাফিলতি ও সময় ক্ষেপণ করার কোনো সুযোগ রাখতেন না। ইমাম বায়জাবি (রহ.) বলেন, এর অর্থ কোরআনের যাবতীয় বিষয় রসুলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্রে একীভূত হয়ে গিয়েছিল। কোরআন যা উত্তম বলেছে, তিনি তা-ই করেছেন। কোরআন যে কাজের প্রশংসা করেছে, যেদিকে আহ্বান করেছে তিনি তা দিয়েই নিজেকে সাজিয়েছেন। এবং যা মন্দ বলেছে, যা কিছু নিষিদ্ধ করেছে তা তিনি বর্জন করার গৌরব অর্জন করেছেন। সুতরাং কেউ যদি রসুল (সা.) -এর চরিত্র সম্পর্কে জানতে চায় তাহলে বলা যায়, রসুলের চরিত্র ছিল হুবহু কোরআন অর্থাৎ কোরআন পড়ে নাও, রসুলের চরিত্র সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে নাও।

লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা

 

সর্বশেষ খবর