লোডশেডিংয়ের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের ১৮ কোটি মানুষ। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলে বিশ্বে জ্বালানির দাম বেড়েছে অবিশ্বাস্য গতিতে। সেই ধকলে বাংলাদেশকেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস ও জ্বালানি তেল আমদানি করতে গিয়ে নাভিশ্বাস অবস্থার শিকার হতে হচ্ছে। গ্যাস ও জ্বালানি তেলের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার আমলে দেশের প্রায় শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এলেও এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চাহিদার অনেক বেশি উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেলের অভাবে তার এক বড় অংশ বন্ধ রাখা হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং দেশবাসীর নিয়তির লিখনে পরিণত হয়েছে। পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, এক বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে কম এলএনজি থেকে রূপান্তরিত গ্যাস জাতীয় পাইপলাইনে আসছে। এলএনজি থেকে গ্যাস সরবরাহ দৈনিক ৩৮ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে, যা আগে ৭৫ থেকে ৮৫ কোটি ঘনফুটে ওঠানামা করত। দেশে এখন গ্যাসের চাহিদা ৪১০ কোটি ঘনফুটের বেশি। বিপরীতে সোমবার স্থানীয় ও আমদানি মিলিয়ে ২৬১ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির তথ্যানুযায়ী, জ্বালানি সংকট, ইঞ্জিন-যন্ত্রপাতিতে সমস্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের কারণে রবিবার পর্যন্ত দেশে চালু থাকা ১৫০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টিতে উৎপাদন হয়নি। এর বাইরেও জ্বালানির অভাবে ৪২টি কেন্দ্রে সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করা যাচ্ছে না। গ্যাস না পেয়ে আটটি কেন্দ্র এবং জ্বালানি তেল না পেয়ে দুটি কেন্দ্র চালুই করা যায়নি। ৩১টি কেন্দ্রের ইঞ্জিনে সমস্যার কারণে সক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন হয়েছে। এ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ৭১০ মেগাওয়াট। বিপরীতে দিনে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৩৮৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। বিদ্যুতের ঘাটতি দেশের শিল্পোৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। শিল্পপণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আউটসোর্সিং আয়ে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই সংকট মোচনে সরকারকে যত্নবান হতে হবে।