সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

লোক দেখানো ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়

মুহাম্মদ আশরাফ আলী

ইসলামে লোক দেখানো ভালো কাজকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। লোক দেখানো কাজে আত্মগরিমার প্রকাশ ঘটে। এমনকী ইবাদতের ক্ষেত্রে তা যাতে লোক দেখানো না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সোজা কথায় সব ধরনের ইবাদতের উদ্দেশ্য থাকতে হবে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। লোকে আমাকে ইমানদার ভাববে, সে জন্য সম্মান দেবে এ জন্য ইবাদত করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

হজরত আবু হুয়ায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন সবচেয়ে আগে যাদের বিচার-ফয়সালা করা হবে, তাদের মধ্যে প্রথমজন যে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের ময়দানে শহীদ হয়েছিল। তাকে উপস্থিত করে আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত সমুদয় নেয়ামতরাজির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে, সে সব নেয়ামতের প্রাপ্তি স্বীকার করবে। এরপর তাকে প্রশ্ন করা হবে, এসব নেয়ামতের শুকরিয়া হিসেবে তুমি (আল্লাহর) কী ইবাদত করেছ? জওয়াবে সে বলবে, আমি তোমার দ্বীনের জন্য যুদ্ধ করে শাহাদাতবরণ করেছি। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। প্রকৃতপক্ষে মানুষের কাছে তুমি বীর (মুজাহিদ) হিসাবে পরিচিত হওয়ার জন্য যুদ্ধ করেছিলে। মানুষ তো (এখন) তোমাকে বীর (সাহসী) বলছে। অবশেষে তাকে আল্লাহর নির্দেশে দোজখে ফেলে দেওয়া হবে। দ্বিতীয়জন আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রভূত অর্থসম্পদের অধিকারী হয়েছিল। তাকে উপস্থিত করে আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতরাজির কথা মনে করিয়ে দেওয়া হলে সে প্রাপ্তি স্বীকার করবে। এরপর তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি এই বিত্তবৈভব কোথায় ব্যয় করেছ? সে জওয়াব দেবে : হে আল্লাহ! আমি তোমার দীনের রাস্তায় যেখানেই যখন প্রয়োজন হয়েছে সেখানেই তোমার (দেওয়া) সম্পদ খরচ করতে কার্পণ্য করিনি।

আল্লাহ বলবেন : তুমি (সত্য নয়) মিথ্য বলছ। আমার রাস্তায় নয় বরং মানুষ যাতে তোমায় দানবীর হিসেবে প্রশংসা করে সেজন্য অর্থ ব্যয় করেছ, মানুষ তো এখন তাই বলছে। অবশেষে তাকেও দোযখে ফেলে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে।

তৃতীয়জন পার্থিব জীবনে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অপরকেও শিক্ষা দিত এবং পবিত্র কোরআন অধ্যায়ন করত। অনন্তর তাকে উপস্থিত করে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতরাজির কথা মনে করিয়ে দেওয়া হলে সে তার প্রাপ্তি স্বীকার করবে। তার কাছে জানতে চাওয়া হবে যে, তুমি (তোমার) জ্ঞান দিয়ে কী করেছ। সে উত্তর দেবে : আমি ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তা অপরের কাছে বিতরণ করেছি, এবং তোমাকে খুশি করার জন্য (নৈকট্য লাভের আশায়) তোমার বাণী পবিত্র কোরআন চর্চা (অধ্যয়ন) করেছি। আল্লাহ বলবেন : না, তুমি মিথ্যা বলছ। আমাকে খুশি করার জন্য নয়; বরং মানুষ যেন তোমায় (ভালো) কারি বলে বাহবা দেয় সে আশায় তুমি কোরআন অধ্যয়ন করেছ। অবশেষে তাকেও দোজখে ফেলে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে (মুসলিম)।

উপরের হাদিসটি প্রমাণ করে আল্লাহর ইবাদত করার ক্ষেত্রে স্রষ্টার সন্তুষ্টি ছাড়া ভিন্ন কোনো চিন্তাভাবনা অবকাশ থাকলে তা কোনো কাজে আসবে না। এ ধরনের ইবাদত জান্নাতের বদলে জাহান্নামের পথকেই উন্মোচিত করবে। আল্লাহ আমাদের সব ধরনের বিচ্যুতি থেকে দূরে থাকার এবং সব ক্ষেত্রে আল্লাহ পাক ও রসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে অটল থাকার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর