বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কসম খেয়ে পণ্য বিক্রয় অনুচিত

আবদুর রশিদ

মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে কসম করে, সে ব্যক্তি এমন অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, যখন তিনি তার ওপর ক্রোধান্বিত থাকবেন। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. বলেন, অতঃপর আল্লাহর রসুল (সা.) এ কথার সমর্থনে আল্লাহর কিতাব থেকে এই আয়াত আমাদের জন্য পাঠ করলেন : যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে স্বল্পমূল্যে বিক্রয় করে পরকালে তাদের কোনো অংশ নেই। কিয়মাতের দিন আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকিয়ে দেখবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা আলে ইমরান ৭৭)

মহানবী (সা.) বলেন, তোমরা ব্যবসা-বাণিজ্যে কসম খাওয়া থেকে দূরে থেকো। কারণ, কসম পণ্যদ্রব্য বিপণনে ভূমিকা রাখলেও তা উপার্জনের বরকত নষ্ট করে দেয়। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি নিজের কসম দ্বারা কোনো মুসলিমের অধিকার হরণ করে, সে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ দোযখ ওয়াজিব এবং বেহেশত হারাম করে দেন। লোকেরা বলল, যদিও সামান্য কিছু হয় তাও, রসুল (সা.) বললেন, যদিও বা পিল্লু (গাছের) একটি ডালও হয়। হযরত আবু যার রাযি. বলেন, একদা নবী রসুল (সা.) বললেন, তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তাকিয়েও দেখবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য হবে যন্ত্রণাপ্রদ শাস্তি। তিনি এ কথাটি পুনঃপুনঃ তিনবার বললেন। আমি বললাম, ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তারা কারা হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তারা হলো, যে ব্যক্তি গাঁটের নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, দান করে যে ‘দিয়েছি-দিয়েছি’ বলে প্রচার করে বেড়ায় এবং মিথ্যা কসম করে যে তার পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কবিরা গোনাহ হলো, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, পিতামাতার অবাধ্যাচরণ করা এবং মিথ্যা কসম করা। রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো এমন বিষয়ে জেনেশুনে মিথ্যা কসম খেল, যে বিষয়ে কাফ্ফারা অথবা গোনাহ অনিবার্য, সে যেন নিজের ঠিকানা দোজখে বানিয়ে নিল। অনেক বিক্রেতা আছে, যারা ক্রেতার মনে চমক ধরানোর জন্য কসম করে বলে, এ জিনিস এত দাম ছাড়া বিক্রি করব না। কিন্তু পরক্ষণে কসম ভঙ্গ করে তা তার থেকে কম দামে বিক্রি করে। কখনো কসম করে বলে, এই দামে বিক্রি করব না। কিন্তু পরক্ষণে সে সেই দামেই বিক্রি করে। এমন ব্যবসায়ীরা যে আল্লাহর মর্যাদা ও কসমের মান রক্ষা করে না এবং দুনিয়ার বদলে আখেরাতকে বিক্রি করে, তাতে কি কারও সন্দেহ থাকতে পারে? হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযি. বলেন, একদা এক বেদুঈন একটি বকরি নিয়ে আমার পাশ দিয়ে গেল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি এটাকে ৩ দিরহামে বিক্রি করবে? উত্তরে সে বলল, না, আল্লাহর কসম! অতঃপর সে সেটাকে ওই ৩ দিরহামেই বিক্রি করল।   আমি এ খবর রসূল (সা.) এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বললেন, সে তার দুনিয়ার বিনিময়ে আখেরাতকে বিক্রি করেছে।

ইসলাম বিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর