আল্লাহ রব্বুল আলামিন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। ইবাদত করার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে পরকালে সুখ-শান্তি পাবে আর তার জন্য রয়েছে পুরস্কার জান্নাত। আল্লাহ বলেন, আমি জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি যে তারা শুধু আমার ইবাদত করবে। (সুরা আজ জারিয়াত, আয়াত ৫৬)। আল্লাহ আরও বলেন, নিঃসন্দেহে মানুষের জীবন বিধান হিসেবে আল্লাহতায়ালার কাছে ইসলামই একমাত্র গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯)। যদি কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবন বিধান অনুসরণ করে তবে তার কাছ থেকে সে উদ্ভাবিত ব্যবস্থা কখনো গ্রহণ করা হবে না, পরকালে সে চরমভাবে ব্যর্থ হবে। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৮৫)।
মানুষের জীবন বিধান হলো কোরআন। যেখানে আল্লাহতায়ালা আমাদের জন্য সব নিয়ম-কানুন এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জীবন পরিচালনার নিয়ম ও পদ্ধতি সুচারুভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। মানুষ যাতে নিজেদের মনগড়া নিয়ম তৈরি করে তার অনুসরণে জীবন পরিচালনা না করে। কারণ মানুষকে তো তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। সে জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর বিধান মেনে চলার জন্য যুগে যুগে নবী ও রসুল প্রেরণ করেছেন।
পৃথিবীতে যত মতবাদ বা আদর্শে মানুষ নিজেকে ব্যাপৃত রাখুক না কেন আল্লাহর প্রেরিত ঐশী বাণীর সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। আল্লাহতায়ালা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন- এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সুরা মায়েদা, আয়াত ৩)। কোরআন নাজিল হওয়ার পর আল্লাহতায়ালা পূর্ববর্তী সব অজিফা ও আসমানি কিতাবসমূহকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। ফলে ইহুদি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, হিন্দুসহ যত রকমের ধর্মচর্চা করা হোক না কেন তা বাতিল বলে গণ্য হবে। একমাত্র ইসলামই আল্লাহর মনোনীত ধর্ম।ইসলাম মানবতার ধর্ম। মানবতার জন্যই ইসলাম। জাহেলিয়াতের যুগেই ইসলামের আগমন আলোর বর্তিকা হয়ে। ইসলাম ধর্ম পৃথিবীতে এসেছে মানব জাতির জন্য একমাত্র জীবন-বিধান হিসেবে। ইসলাম ধর্ম কখনই মানুষকে জোর করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়নি। মানুষকে তার যার যার ধর্ম পালনের অধিকারকে সুনিশ্চিত করেছে। কাউকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার ব্যাপারে কখনই চাপ প্রয়োগ করেনি। ইসলাম ধর্ম প্রত্যেক জাতিকে সৃষ্টির সেরা মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে। রসুল (সা.) অন্য ধর্মের কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার লাশ দেখে তিনি তার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাতেন। সুবহান আল্লাহ। অথচ আজকের জমানায় আমরা মানুষকে মূল্য দিই তার সামাজিক অবস্থান, ধন সম্পদ, দলবাজি, কোন পীরের মুরিদ, কোন জেলার বাসিন্দা, বিদেশে কোথায় থাকেন ইত্যাদির ওপর। ইসলাম সম্পদকে সুষমভাবে বণ্টনের তাগিদ দিয়েছে। জাকাত প্রদানকে উৎসাহিত করেছে যাতে গরিবরা কষ্ট না পায়। ইসলাম পৃথিবীর বুকে মানুষের কল্যাণ সাধন ও হেদায়াত দান করার জন্য এসেছে। মানুষ যে কোনো গোত্র বা বর্ণেরই হোক না কেন তার বিপদ ও দুঃখ-কষ্টের দিনে তাকে সাহায্য করার জন্য ইসলাম বারবার তাগিদ প্রদান করেছে। দেখুন, ইহুদি ধর্মে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে তাকে জন্মসূত্রে ইহুদি হতে হবে। তা না হলে সে ইহুদি ধর্মে প্রবেশ করতে পারবে না। অথচ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে হলে এ ধরনের কোনো বিধিনিষেধ নেই, বরং তার পুরনো গুনাহগুলো আল্লাহ ক্ষমা করে তা নেক আমলে পরিণত করে দেন। সুবহান আল্লাহ। এর চেয়ে বড় পুরস্কার ইসলাম ধর্মে আর কী হতে পারে? ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। আল্লাহ বলেন, তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না, আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা কাসাস, আয়াত ৭৭)। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে ইসলামের ছায়াতলে থেকে কোরআনের আলোকে জীবন পরিচালিত করার তৌফিক দান করুন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।