শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সন্তানকে লোকমান (আ.) এর উপদেশ...

মো. আমিনুল ইসলাম

সন্তানকে লোকমান (আ.) এর উপদেশ...

পবিত্র কোরআনের ৩১ নম্বর সুরাটি হলো ‘সুরা লোকমান’। লোকমান একজন মুমিন বান্দার নাম। যিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একজন প্রিয় বান্দা। তার ইবাদত আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভীষণ পছন্দ করেছিলেন এবং সন্তানকে তিনি যে শিক্ষা ও উপদেশ দান করেছিলেন তা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত মনঃপুত হয়েছিল। আল্লাহ কোরআনে তা ওহি হিসেবে রসুল (সা.)-এর মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার জন্য চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি লোকমানকে জ্ঞান দান করেছি। তুমি মহান আল্লাহতায়ালার নেয়ামতের শোকর আদায় কর’। লোকমান (আ.) তার ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল ‘হে আমার প্রিয় বৎস, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শিরক কর না, শিরক বড় জুলুম। আমি মানুষকে তাদের পিতামাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করে এবং দুই বছর পর সে সন্তান বুকের দুধ খাওয়া ছাড়ে।  তুমি তোমার নিজের সৃষ্টির জন্য আমার শোকর আদায় কর এবং পিতামাতার লালন-পালন করার জন্য তাদেরও কৃতজ্ঞতা আদায় কর। কারণ তোমাকে আবার আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। যেহেতু আল্লাহর কোনো শরিক নেই, তোমার পিতামাতা যদি তোমাকে কখনো শরিক করার ব্যাপারে চাপ দেয় তাহলে তুমি তাদের সে কথা মানবে না। তবে দুনিয়ার জীবনে তুমি তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। লোকমান আরও বলল, হে বৎস, যদি তোমার কোনো আমল সরিষার দানা পরিমাণ ছোটও হয় এবং তা যদি কোনো শিলাখণ্ডের ভিতর কিংবা আসমানসমূহে লুকিয়ে থাকে অথবা জমিনের নিচেও তাও আল্লাহতায়ালা সেদিন এনে হাজির করবেন। অবশ্যই আল্লাহতায়ালা সব বিষয়ে সম্যক অবগত। হে বৎস, তুমি নামাজ প্রতিষ্ঠা কর, ভালো কাজের আদেশ দাও, মন্দ কাজ থেকে বিরত থাক এবং তোমার ওপর কোনো বিপদ এলে তার ওপর ধৈর্য ধারণ কর। হে বৎস তুমি অহংকারবশে মানুষের সঙ্গে গাল ফুলিয়ে তাদের অবজ্ঞা কর না এবং আল্লাহর জমিনে ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে বিচরণ কর না। অবশ্যই আল্লাহতায়ালা ঔদ্ধত্যকারী অহংকারীকে ভালোবাসেন না। জমিনে চলার সময় তুমি মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর। তোমার গলার আওয়াজ নিচু কর। অবশ্যই আওয়াজসমূহের মধ্যে গাধার আওয়াজই সবচেয়ে অপ্রীতিকর। (সুরা লোকমান, আয়াত ১২-১৯.)।  আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের জীবনে সন্তান-সন্ততি হলো আল্লাহর তরফ থেকে নেয়ামত। তারা আমাদের জন্য যেমন চক্ষু শীতলকারী তেমনি আমাদের জন্য পরীক্ষাও বটে। তাদের কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন গড়ার দায়িত্ব আমাদের। আমরা যদি তা করতে ব্যর্থ হই তাহলে তা হবে আমাদের জন্য হতাশার আর অত্যন্ত দুঃখজনক। তাদের সুশিক্ষিত করা, কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন গড়া এবং সর্বোপরি দুনিয়ার জীবনে দ্বীনদার হিসেবে তাকে প্রস্তুত করা আমাদের সবার জন্য যেমন চ্যালেঞ্জ তেমনি তা করতে পারলে সাফল্যেরও। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন লোকমান (আ.) তার সন্তানকে কীভাবে উপদেশ দিয়েছিলেন তা আমাদের জন্য পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করেছেন। বাবা-মা হিসেবে সন্তানের প্রতি আমাদের অনেক দায়িত্ব আছে। তাকে সুশিক্ষিত করা, সৎকর্মশীল, ধর্মানুরাগী ও চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলা প্রতিটি বাবা-মার কর্তব্য। নেককার সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। সন্তান ছেলে কিংবা মেয়ে হোক তার জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে হবে। ছেলে হলে মহাখুশি আর মেয়ে হলে মনখারাপ যেন না হয়। সন্তান পিতামাতার জন্য আল্লাহর উপহার।  সন্তানকে শিশুকাল থেকে ইসলামী ঐতিহ্য ও নীতিমালার মধ্য দিয়ে জীবন গড়ার ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। তাহলে সেই সন্তান কখনো বিপথগামী হবে না। তার অন্তরে আল্লাহভীতির বীজ বপন করে দিতে হবে। সুরা লোকমানের আয়াতগুলো থেকে আমাদের সবাইকে সচেতন হওয়া এবং আমাদের সন্তানদেরও এ ব্যাপারে সচেতন করা ও উপদেশ দেওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

সর্বশেষ খবর