নায়াগ্রা জলপ্রপাত এক অপার বিস্ময়ের নাম। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত। নায়াগ্রা জলপ্রপাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের মধ্যবর্তী আন্তর্জাতিক সীমানায় অবস্থিত। জলপ্রপাতটি বিমান, সড়ক ও রেল পরিবহন দ্বারা সুসংযুক্ত হওয়ায় এ জলপ্রপাতে পৌঁছানো খুবই সহজ। এর নিকটবর্তী বিমানবন্দরগুলো হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাফেলো নায়াগ্রা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং কানাডার ওন্টারিওতে অবস্থিত লেস্টার বি. পিয়ারসন্ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উৎপত্তির ইতিহাসটা বেশ মজার। নায়াগ্রা নদীটি প্রায় ১২০০ বছরের পুরনো। এরও আগে ১৮০০ বছর আগে ওন্টারিওর দক্ষিণে প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার বরফে ঢাকা ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আর নিয়মিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পরিবর্তনের ফলে গলতে শুরু করে বরফ। আর গ্রেট লেকস বেসিনে প্রচুর পানি জমতে থাকে এবং লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী আর লেক ওন্টারিও থেকে আসা পানি মিলে এ বিশাল জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। জলপ্রপাতের দিকে তাকালে একদিকে যেমন ভয়ে দশনার্থীদের বুক কেঁপে ওঠে তেমনি কিছুতেই এর মোহময় আকর্ষণ তারা উপেক্ষা করতে পারবেন না। এ আকর্ষণই অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষকে টেনে আনে নায়াগ্রাকে ছুঁয়ে দেখার কিংবা তার ওপর হেঁটে যাওয়ার এক অদম্য বাসনাকে। ১৮২৯ সালের অক্টোবরের দিকে ‘স্যামপেচ’ নামের এক দুঃসাহসী অভিযাত্রী ঝাঁপ দিয়েছিলেন নায়াগ্রায়। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়, ঝাঁপ দেওয়ার পরও এই ভদ্রলোক কিন্তু বেঁচে গিয়েছিলেন। স্যামের এ অদ্ভুত কাণ্ড আরও অনেক মানুষকে দুঃসাহসী করে তোলে। কেউ দড়ির ওপর দিয়ে হেঁটে ভয়ংকর এ জলপ্রপাত পার হয়েছেন, কেউ নিজেদের একটা ব্যারেলে ভরে নিয়ে ভেসে গিয়েছেন জলপ্রপাতের উত্তাল জলস্রোতের মধ্যে, ব্যারেলসুদ্ধ আছড়ে পড়েছেন ১৬৭ ফিট উচ্চতা থেকে। এদের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ফানামবুলিস্ট’। ১৮৫৯ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত এরকম উপায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নায়াগ্রা পার হওয়া একটা নেশায় পরিণত হয়েছিল। মার্কিন গৃহযুদ্ধের কয়েকটা বছর পর এ খেলা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, নায়াগ্রার পানির স্রোত কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। প্রতিদিন প্রতি মিনিটে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে ৬০ লাখ ঘনফুট মাত্রাধিক জল প্রবাহিত করে; যার গড় পরিমাণ হলো ৪০ লাখ ঘনফুট। নায়াগ্রা সমগ্র নিউইয়র্ক ও ওন্টারিওর জলবিদ্যুৎ শক্তির এক অন্যতম প্রধান উৎস। অন্য জলপ্রপাতগুলোর চেয়ে নায়াগ্রার স্রোত ঢের বেশি। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের এ স্রোত কাজে লাগিয়ে প্রতি বছর ব্যাপক পরিমাণে তড়িৎ শক্তিও উৎপাদন করা হয়। নায়াগ্রা জলপ্রপাতে স্রোতের শব্দ এতটাই তীব্র যে অন্য কোনো শব্দ কানে পৌঁছায় না। আমেরিকায় জলপ্রপাতটি পেছন থেকে দেখতে হয়। কানাডায় সরাসরি সামনে থেকে দেখা যায়। ফলে সম্পূর্ণ জলপ্রপাত ভালোমতো দেখা যায়। রংধনু দেখতে আকাশের দিকে তাকাতে হয় না এখানে। মুগ্ধ পর্যটকদের দৃষ্টির খুব কাছেই জলপ্রপাতের জলরাশিতেই রংধনু যেন নিজেই এসে ধরা দেয়। পোলার ভার্টেক্স বা মেরুপ্রবণ ঘূর্ণাবর্তের দরুন ২০১৪ সালে নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি আংশিকভাবে হিমায়িত হয়ে নিথর হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া ১৮৪৮ সালের মার্চে বরফের কারণে নায়াগ্রা জলপ্রপাত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত কোনো পানি পড়েনি। ফলে জলবিদ্যুৎ কারখানার চাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, বিদ্যুতের অভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।