টেস্ট বাণিজ্যে জিম্মি হয়ে পড়েছেন রোগীরা। কারণে-অকারণে বিভিন্ন ধরনের টেস্টের জন্য চিকিৎসকরা রোগীদের পাঠান নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। রোগী পাঠালেই কমিশন পাওয়া যায় বলে এমন সব বিষয়ের টেস্ট দেওয়া হয় যেগুলো রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রাসঙ্গিক নয়। কেন এত টেস্ট দিচ্ছেন চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করলে রোগীরা প্রায়শই দুর্ব্যবহারের শিকার হন। টেস্টের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কোনো কথা না বলে উল্টো ধমক দেওয়া হয়। বলা হয়, এগুলোর টেস্ট করে আনেন নতুবা অন্য চিকিৎসককে দেখান। চিকিৎসকদের বেশির ভাগ ওষুধ প্রেসক্রিপশন করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করায় দেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের মধ্যেও চিকিৎসার জন্য ফের বিদেশমুখী হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দূতাবাসে মেডিকেল ভিসার জন্য মানুষের ভিড় বাড়ছে। দেশের সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা থাকায় মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে আস্থার সংকট, প্রতারণার ফাঁদ। উচ্চবিত্তের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতাকে এসব কারণ আরও উসকে দিচ্ছে। ভালো সেবার আশায় মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষও ছুটছে বিদেশে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর যত মানুষ ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে যান তার বেশির ভাগই চিকিৎসার জন্য। আস্থার সংকট এমনই ঘোরতর হয়েছে যে, অতি সাধারণ রোগের চিকিৎসার জন্য অনেকে বিদেশে যাওয়াকে নিরাপদ মনে করছেন। বাংলাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো যেখানে-সেখানে একের পর এক ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠলেও এর বেশির ভাগই মানহীন। বাংলাদেশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনো টেস্ট রিপোর্টকে পাত্তা দেন না বিদেশি চিকিৎসকরা। এমনকি চিকিৎসকদের রোগ নির্ণয় সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। যা দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থায় চির ধরাচ্ছে। এই আস্থাহীনতার অবসান হওয়া উচিত।