বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দুটি প্রধান মাধ্যমের একটি তৈরি পোশাক রপ্তানি আর দ্বিতীয়টি বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স আয়ের দিক থেকে মালয়েশিয়া শুরু থেকেই ছিল দ্বিতীয় স্থানে। সাংস্কৃতিক দিক থেকে সামঞ্জস্য থাকায় বাংলাদেশের কর্মজীবীদের শীর্ষ পছন্দ বলে বিবেচিত হয়েছে এ দেশটি। নানা কারণে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। শত চেষ্টার পর মালয়েশিয়ার সেই শ্রমবাজার খুললেও অচলাবস্থা কাটছে না। যেখানে বাংলাদেশ থেকে কর্মীর স্রোত যাওয়ার কথা মালয়েশিয়ায়, সেখানে ধীরগতিতে থমকে আছে সম্ভাবনাময় এ শ্রমবাজারটি। বাজার চালু হওয়ার পর প্রায় ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সি মিলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠিয়েছেন মাত্র ১৯ হাজার। বাংলাদেশি কর্মীদের বিপরীতে এরই মধ্যে নেপাল পাঠিয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ কর্মী। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় করোনা মহামারির পর সারা বিশ্বের শ্রমবাজারে ব্যাপক কর্মী চাহিদার সুযোগ নিতে পারছে না বাংলাদেশ। গত ১০ মাসে বিপুলসংখ্যক কর্মী বিদেশে গেলেও তারা মূলত গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ- সৌদি আরব, ওমান ও আরব আমিরাতে। মোট ৯ লাখ ৪৭ হাজার জনের মধ্যে ৭ লাখ ৭৭ হাজার জনই গেছেন এ তিন দেশে। শুধু সৌদি আরবেই গেছেন ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৭৭৪ জন। এরপর ওমানে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮১ ও আরব আমিরাতে ৮৯ হাজার ১০৮ জন। এর বাইরে কাতারে ১৯ হাজার ৭৫৫, জর্ডানে ১১ হাজার ৯১৫ ও কুয়েতে ১৫ হাজার ৭২০ জন গেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে সিঙ্গাপুরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ৫৩ হাজার ৬৯৫ জন কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় গেছেন ৪ হাজার ১২১, মরিশাসে ৪ হাজার ৬৫৮, ইতালিতে ৫ হাজার ৩০১, ব্রুনাইতে ১ হাজার ৮৯৬, জাপানে ৩৭৯, যুক্তরাজ্যে ৪৯০, সুদানে ২৪২, লিবিয়ায় ৪৪ ও ইরাকে ৫২ জন। মালয়েশিয়ার নিয়োগদাতারা বাংলাদেশি কর্মীদের বিষয়ে উৎসাহী হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঠিকমতো লোক পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সোনালি সুযোগ সদ্ব্যবহারের এ ব্যর্থতা দুর্ভাগ্যজনক। সরকার এ ব্যাপারে সজাগ হবে এমনটিই প্রত্যাশিত।