শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দান সদকার গুরুত্ব...

মো. আমিনুল ইসলাম

দান সদকার গুরুত্ব...

পবিত্র  কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান সদকা করো, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির মিসকিনকে দান করো, তবে তা আরও বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে  দেবেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭১)।  একটু চিন্তা করে দেখুন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সঙ্গে ওয়াদা করেছেন গরিব মিসকিন আর দুঃখীদের দান করলে তিনি পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। দান করা কত বড় সওয়াব। দান সদকা যেমন বিভিন্ন বালা মসিবত দূর করে তেমনি  আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের হেফাজত করেন। সদকা কী? ইসলামের পরিভাষায় সদকা হলো দান। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের সম্পদ মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা। মানুষের সবচেয়ে প্রিয় হলো সম্পদ। আর জীবন-যাপনের জন্য সম্পদ হলো মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রিয়। সেই সম্পদ গরিব-দুঃখী মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা এবং দান করাই হলো সদকা। তবে প্রচলিত অর্থে নফল দান করাকেই সদকা বলে। রসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি ছাড়া- সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান ও সৎকর্মশীল সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম শরিফ, নম্বর ১৬৩১)। পবিত্র কোরআনে দান সদকার কথা বহু আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা আপনার কাছে জানতে চায় তারা কী ব্যয় করবে? তাদের জানিয়ে দিন, যা তাদের প্রয়োজনাতিরিক্ত।’ (সুরা  বাকারা, আয়াত-২১৯)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা নিজেদের ধন সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশ শস্য দানা। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৬১)। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে দান করে কাউকে খোঁটা বা কষ্ট দেওয়া যাবে না। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ দানের কথা বলে বেড়িয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ওই ব্যক্তির ন্যায় নিষ্ফল করো না। যে নিজের সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে এবং আল্লাহ ও আখেরাতে ইমান রাখে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৬৪)। অর্থাৎ দান করে অনুগ্রহ প্রকাশ করা যাবে না এবং দান গ্রহীতাকে ঘৃণিত মনে করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো তবে তা ভালো, আর যদি গোপনে করো এবং অভাবগ্রস্তকে করো তা তোমাদের জন্য আরও ভালো এবং এতে তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করে দেবেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭১)। অর্থাৎ সব রকমের দানের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা উত্তম। কারণ এতে লোক দেখানোর সম্ভাবনা নেই। কাকে দান করতে হবে আল্লাহ তাও এই আয়াতে বলে দিয়েছেন। আমাদের সমাজের চারপাশে অভাবগ্রস্ত লোকের অভাব নেই। সুতরাং যারা ধনী ও সম্পদশালী তাদের উচিত হবে অভাবগ্রস্ত মানুষকে বেশি বেশি দান সদকা করা। এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি গুনাহ মাফেরও আশা করা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘যারা নিজেদের ধন সম্পদ রাতে দিনে গোপনে প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে রয়েছে। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৪)। দান সদকা করার ব্যাপারে কোনো সময় নির্ধারণ করে দেওয়া নেই। রাতে দিনে গোপনে প্রকাশ্যে দান করা যাবে। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দান করতে হবে। নিয়ত ঠিক রেখে দান করা উত্তম। সমাজে অনেক গরিব ও নিরীহ লোক বসবাস করে যারা কারও কাছে কিছু চাইতে সংকোচ বোধ করে। লজ্জা পায়। এদের চিনে নিয়ে দান করা উত্তম। সুরা বাকারার ২৭৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ এদের চিনে সাহায্য করতে বলে দিয়েছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে দান সদকা গুনাহ মাফ করে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায়। রসুল (সা.) বলেন, খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করো।’ (বুখারি ও মুসলিম)। রসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সাত শ্রেণির মানুষ আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয় লাভ করবে। তাদের মধ্যে এক শ্রেণি হচ্ছে, যে ব্যক্তি গোপনে দান করে যে তার ডান হাত কী দান করল বাম হাত তা জানতেই পারে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)। সুবহানাল্লাহ।  সুতরাং পরকালে মুক্তি পাওয়ার আশায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমাদের উচিত বেশি বেশি দান সদকা করা।

 

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর