শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কেদার রায়

কেদার রায়

কেদার রায় বিক্রমপুরের জমিদার এবং বাংলার বিখ্যাত বারো ভূঁইয়ার অন্যতম। কথিত আছে, তিনি সম্ভবত পনেরো শতকের গোড়ার দিকে কর্ণাট থেকে আগত এবং বিক্রমপুরের আরা ফুলবাড়িয়ায় বসতি স্থাপনকারী জনৈক নিম রায়ের বংশধর। নিম রায় ছিলেন কায়স্থ হিন্দু। সম্ভবত তিনিই ছিলেন এ বংশের প্রথম ভূঁঁইয়া এবং পুরুষানুক্রমে ‘ভূঁইয়া’ উপাধি ধারণের পক্ষে তৎকালীন শাসকের মঞ্জুরিও লাভ করেছিলেন। কেদার রায় ছিলেন যাদব রায়ের ছেলে। তাঁর রাজধানী ছিল কালীগঙ্গা নদীর তীরবর্তী শ্রীপুরে। বিপুলসংখ্যক রণতরীর অধিকারী কেদার রায় একটি সুশিক্ষিত নৌবাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি কতিপয় ভাগ্যান্বেষী পর্তুগিজকে তাঁর রণতরীর অধ্যক্ষ নিয়োগ করেন। এদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন কার্ভালো।

কেদার রায় ঈশা খাঁ মসনদ-ই-আলার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখেন এবং তাঁর সঙ্গে মিলিতভাবে মুঘলদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ কর্তৃক সম্রাট আকবরের দরবারে প্রেরিত দূত রালফ ফিচ উল্লেখ করেছেন, তাঁর শ্রীপুর সফরকালে (১৫৮৬) তথাকার শাসক আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হন। কুতলু লোহানি (ওড়িশার লোহানি রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা) বংশের আফগান নেতাদের সঙ্গে কেদার রায়ের সখ্য ছিল। তিনি খাজা সুলায়মান লোহানির সহযোগিতায় মুঘল দুর্গাধিপতির কাছ থেকে ভূষণা দুর্গ দখল করেন (১৫৯৩) এবং ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ দুর্গ স্বীয় অধিকারে রাখেন। ওই বছরই দুর্জন সিংহের নেতৃত্বে মুঘল বাহিনী ভূষণা দুর্গ আক্রমণ করে। মুঘল অবরোধকালে দুর্গের অভ্যন্তরে কামানের গোলা বিস্ফোরণে সুলায়মান লোহানি নিহত এবং কেদার রায় আহত হন। কেদার রায় পালিয়ে সোনারগাঁয়ে ঈশা খাঁর আশ্রয় গ্রহণ করেন (জুন ১৫৯৬)। ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে মানসিংহ কেদার রায়ের বিরুদ্ধে এক বাহিনী প্রেরণ করে তাঁকে সম্রাট আকবরের আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করেন। ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে আরাকানের মগদের বিশাল নৌবহর জলপথে ঢাকা অভিমুখে আক্রমণ পরিচালনা করে এবং ত্রিমোহনীতে মুঘল দুর্গের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। কিন্তু মুঘল বাহিনী তাদের তাড়া করলে সংঘর্ষে বহুসংখ্যক মগ নিহত হয়। এ সময় কেদার রায় তাঁর নৌবাহিনী নিয়ে মগদের সঙ্গে যোগ দেন এবং শ্রীনগরে মুঘল সেনাঘাঁটি আক্রমণ করেন। বিক্রমপুরের অনতিদূরে দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কেদার রায় আহত ও বন্দি হন। বন্দি অবস্থায় তাঁকে রাজা মানসিংহের কাছে নেওয়ার পরপরই তাঁর মৃত্যু হয় (মার্চ ১৬০৩)। আরা ফুলবাড়িয়ায় কেদার রায়ের পরিবারের আদি বাসস্থল এখন চিহ্নিত করা যায়। এখানে একটি উঁচু বিস্তৃত ভিটা এখনো কেদারবাড়ি নামে পরিচিত। আরা ফুলবাড়িয়ায় কেদার রায় কর্তৃক খনিত একটি দিঘি এখনো বর্তমান। কেদার রায়ের অগ্রজ চাঁদ রায়ের সময় খনিত অন্য একটি দিঘিও টিকে আছে। চাঁদ রায়ের এক দাসীর নামে দিঘিটির নামকরণ হয় ‘কেশব মা কা দিঘি’। শ্রীপুর জমিদারদের নির্মিত সর্বাধিক সুবিদিত স্থাপত্য নিদর্শন সুউচ্চ রাজবাড়ি মঠ। একসময় পদ্মার তীরে যেখান থেকে শ্রীপুর শহর শুরু হয় তার অনতিদূরেই নির্মিত হয়েছিল মঠটি। এ সুউচ্চ মঠটি কয়েক মাইল দূর থেকেও পরিদৃষ্ট হতো।

                মো. আবদুর রশিদ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর