শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক

আজ ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ- জাপান কূটনৈতিক সম্পর্ক সংস্থাপনের একান্নতম বার্ষিকী। অর্থনৈতিক অবস্থানের দিক দিয়ে ব্যাপক ব্যবধান সত্ত্বেও এশিয়ার এ দুটি দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক সুদৃঢ়করণ ও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা সম্প্রসারণের ঐকান্তিক ইচ্ছা কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বার্ষিকী উদযাপনের নানান আগ্রহ-আয়োজনের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স্বার্থ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের আধুনিক পর্যায়ে প্রাধান্য পেলেও বর্তমান সম্পর্কের ভিত্তি সুদীর্ঘ সময়ের গভীরে প্রোথিত। ওইসিডি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শিল্পোন্নত জাপানই সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এশিয়ার সমৃদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শোচনীয় পরাজয়ের প্রেক্ষাপটে মিত্রশক্তির নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্র“য়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় জাপান তখনো মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রভাব বলয়েরই একটি দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তির বদৌলতে জাপান ওকিনাওয়া দ্বীপের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় সে বছর। ১৯৭২ সালেই জাপানের সঙ্গে চীনের দীর্ঘদিনের বিরোধ প্রশমিত হয়ে সিনো জাপান কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় চীনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তানের মিত্র দেশ হিসেবে বিপরীত অবস্থানে ছিল। ঠিক এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জাপানের সরকার ও জনগণের সমর্থন এবং বিজয়ের অব্যবহিত পরে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে জাপান নিঃসন্দেহে তাৎপর্যবাহী ও সুদূরপ্রসারী কূটনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেয়।

জাপানিদের ভৌগোলিক অভিজ্ঞানে বর্তমান বাংলাদেশ হচ্ছে তাদের নিজেদের নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অর্থনীতির বলয়ভুক্ত দেশমন্ডলীর সীমান্ত। তাদের বিবেচনায় বার্মা বা অধুনা মিয়ানমারই হচ্ছে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পশ্চিম প্রান্ত। হিমালয়, আসাম, লালমাই পাহাড় পেরিয়ে সমতলভূমিতে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা আরব বণিকদের প্রবেশ এবং মধ্যএশিয়া থেকে আসা মুঘল ও ইউরোপ থেকে আসা ইংরেজ শাসনাধীনে দীর্ঘদিন থাকার কারণে এতদঞ্চলকে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপীয় ভাবধারায় অবগাহনে গড়ে ওঠা দেশমন্ডলীর সদস্য ভাবা হয়। বাংলাদেশ এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং মধ্যএশীয়-ইউরোপীয় দেশমন্ডলীর ঠিক মধ্যবর্তী দেশ। বাংলাদেশকে এই দুই ভিন্ন ধারার মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টির দ্যোতক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এশীয় ঐকতান সৃষ্টিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রয়াস এবং এর ভৌগোলিক-রাজনৈতিক অবস্থানকে বিশেষ তাৎপর্যবহ বলে জাপান মনে করে। বাংলাদেশ এবং এর জনগণের প্রতি জাপানিদের আগ্রহ বেশি হওয়ার যেসব কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, তার মধ্যে প্রথমটি হলো নৃতাত্ত্বিক। বাংলাদেশের উপজাতীয় সম্প্রদায়ের মুখ-নিঃসৃত ভাষা ও তাদের শারীরিক আকার-আকৃতির সঙ্গে জাপানিদের কিছু মিল লক্ষ্য করা যায়। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড এমনকি চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবন ও সংস্কৃতির প্রভাব বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিশেষ করে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। দ্বিতীয় কারণ, ধর্মীয়। জাপানিদের একটি বড় অংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ নেপালের কপিলা বস্তুতে জন্মগ্রহণ করেন এবং পাল ও মৌর্য যুগে বাংলাদেশ অঞ্চলেই বৌদ্ধ ধর্মের সর্বাধিক প্রচার ও প্রসার ঘটে। বাংলাদেশের পাহাড়পুর, মহাস্থানগড় আর ময়নামতিতে প্রাচীন বৌদ্ধবিহার প্রতিষ্ঠা এবং এসব বিদ্যায়তন ও ধর্মশালাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটে। বিক্রমপুর অঞ্চলে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের জ্ঞান সাধনার দীপ্তি এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে এক সময় বাংলা অঞ্চলই বৌদ্ধ জ্ঞান-বিজ্ঞান বিস্তারের তীর্থক্ষেত্র ছিল। বাংলাদেশের প্রতি জাপানিদের আগ্রহ সেই নাড়ির টানেই। তৃতীয় কারণটি হলো ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। বাংলাদেশের গাঢ় সবুজ অরণ্য শোভিত পাহাড়ের পাদদেশে সমতলভূমির সমন্বিত সমাহার, অবারিত নৌপথ আর কৃষিজমি, পাহাড় আর সমুদ্র মেখলা ও নদী-নালা বিধৌত অববাহিকা ও এর আবহাওয়া যেন জাপানেরই প্রতিচ্ছবি। সমপর্যায়ের ভৌগোলিক ও নৈসর্গিক অবস্থানে জীবনযাপনকারী বাংলাদেশ ও জাপানের জনগণের অন্যতম খাদ্য ভাত ও মাছ। দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ হলো চতুর্থ কারণ।

আধুনিক জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পথিকৃৎ তিনজনই বাঙালি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪২), নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু (১৮৯৭-১৯৪৫) এবং বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল (১৮৮৬-১৯৬৭)। পুরো বিংশ শতাব্দীতে সাহিত্যে এশিয়ার মাত্র তিনজন নোবেল পুরস্কার পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন। এদের মধ্যে প্রথমজন বাঙালি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪২) আর বাকি দুজনই জাপানি, ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা (১৮৯৯-১৯৭২) এবং কেনজাবুরে ওয়ে (১৯৩৫-)। রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে, কাওয়াবাতা ১৯৬৮ সালে আর ওয়ে নোবেল পুরস্কার পান ১৯৯৪ সালে। এশিয়ার তাবৎ ভাষাসমূহের মধ্যে বাংলা আর জাপানির এই সগৌরব বিশ্ব¦ স্বীকৃতি বাংলাদেশ আর জাপানের জনগণের মধ্যকার ভাব-বন্ধনের একটি উজ্জ্বল উপলক্ষ ও প্রেরণা। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়ে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা অবিসংবাদিত। রবীন্দ্রনাথ ১৯১৬, ১৯১৭, ১৯২৪ (২ বার) এবং ১৯২৯ সালে, মোট পাঁচবার জাপান সফর করেন।

জাপানিদের কাছে ‘চান্দ্র বাসো’ নামে খ্যাত নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আজও জাপানে বিশেষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। এখনো তার দেহভস্ম টোকিও শহরের রিংকিয়োজি মন্দিরে সংরক্ষিত আছে। বিচারপতি ড. রাধাবিনোদ পাল জাপানিদের কাছে বাংলাদেশ-জাপান মৈত্রী ও বন্ধুত্বের সেতু হিসেবে বিবেচিত ও স্মরণীয় হয়ে আছেন। কুষ্টিয়ার সলিমপুরে ড. রাধাবিনোদের জন্ম। তিনি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারক (১৯৪১-৪৩) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (১৯৪৩-৪৪) ছিলেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ফার ইস্ট (আইএমটিএফই), যা টোকিও ট্রায়াল নামে খ্যাত, এ ব্রিটিশ সরকার মনোনীত একজন সদস্য বিচারক হিসেবে জাপানিদের সপক্ষে বিভক্ত রায় দেন। ১২৩৫ পৃষ্ঠা টাইপ করা তাঁর রায়ে পরাজিত জাপানিদের স্বস্তি, সাহস, আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে এবং জাপানিদের প্রতি বাঙালিদের উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সহানুভূতি বোধ করে। বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল যুদ্ধ-উত্তরকালে জাপানে দক্ষিণ এশীয় জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। টোকিও ট্রায়াল শুরু হয় ১৯৪৬ সালের ৩ মে এবং শেষ হয় নভেম্বর ১৯৪৮।

জাপানিদের মধ্যে তাকেশি হায়াকাওয়া (১৯১৭-১৯৮২) জাপান- বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। তিনি একটানা ৪০ বছর জাপানের জাতীয় সংসদ ‘ডায়েট’ এ নির্বাচিত সদস্য ছিলেন এবং ‘ফাদার অব দ্য ডায়েট’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে অবর্ণনীয় ক্ষয়ক্ষতির সংবাদে এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণ তাকেশি হায়াকাওয়ার চিন্তা-চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। জাপানের ডায়েটে প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে হায়াকাওয়া বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি-সংগ্রামের প্রতি জাপানি জনগণ ও সরকারের সমর্থন সম্প্রসারণের নেপথ্যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু করে হায়াকাওয়া তার প্রতি জাপান সরকারের উদ্বেগ প্রকাশ এবং বিশেষ করে জাপানি জনগণ এর প্রতিবাদ জানানোর প্রেক্ষাপট তৈরিতে সাংগঠনিক উদ্যোগ নেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাপানি মিডিয়ায় বিশেষ গুরুত্ব পায়। বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহে এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি জাপানিদের সমর্থন সমন্বয়ে জাপানের বুদ্ধিজীবী, শিল্প মালিক, শ্রমিক, ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন তিনি। সে সময় জাপান প্রবাসী পূর্ব পাকিস্তানিদের প্রয়াস-প্রচেষ্টার সঙ্গেও একাত্ম হয়েছিলেন হায়াকাওয়া। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমেরিকা বলয়ের দেশ হওয়া সত্ত্বেও উন্নত বিশ্বের শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে জাপানই প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় তারই প্রচেষ্টায় ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্র“য়ারি। স্বীকৃতিদানের এক মাসের মধ্যে ঢাকায় জাপানি দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৩-১৪ মার্চ হায়াকাওয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের জাপানি সংসদীয় প্রতিনিধি দল প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসে। দেশে ফিরে ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী সাতোর কাছে পেশ করা রিপোর্টে তিনি প্রস্তাব রাখেন (ক) বাংলাদেশকে ১০ মিলিয়ন ডলারের জরুরি অনুদান অবিলম্বে প্রদান এবং (খ) পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের হিস্যা আদায়ে জাপানের মধ্যস্ততা। তার সুপারিশ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী সাতোর নির্দেশে ২৮ মার্চ ১৯৭২ জাপান বাংলাদেশে প্রথম অর্থনৈতিক সার্ভে মিশন পাঠায়। ওই বছর ৬ জুন জাপান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন এবং কিছুকাল পর জাপান বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হলে হায়াকাওয়া তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন এবং আমৃত্যু এর নেতৃত্বে ছিলেন।

বাংলাদেশ জাপানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি বড় অনুষঙ্গ হলো বিগত ঊনপঞ্চাশ বছরে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক আদান-প্রদানের প্রসারতা। এ কথা প্রণিধানযোগ্য যে, আধুনিক পর্যায়ে দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা এবং গতি-প্রকৃতিতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের উত্থান-পতন বিশেষ নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরে জাপান সরকার বাংলাদেশের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনে এগিয়ে আসে। বাংলাদেশে জাপানি বাণিজ্য ও সে সুবাদে বিনিয়োগে জাপানিরা বরাবরই আগ্রহ দেখিয়ে এসেছে। জাপানই হচ্ছে এশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম গন্তব্যস্থল। আবার জাপানি পণ্য বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যের সিংহভাগ দখল করে আছে।

 

লেখক : সরকারের সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান; জাপানে বাংলাদেশের সাবেক বাণিজ্য দূত

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর