মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম প্রেম মেলে না

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম প্রেম মেলে না

একটা সময় ছিল বিবাহবহির্ভূত প্রেম-ভালোবাসা ব্যাপারটা আমাদের পরিবারগুলোতে দারুণ অপছন্দনীয় ছিল। ধর্মীয় কারণে হারাম তো বটেই, আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতেও বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হতো না। ক্রমেই আমরা পাশ্চত্য সংস্কৃতির দিকে এগিয়ে চলছি। ধর্ম ধর্মের জায়গায় আছে, কিন্তু সংস্কৃতিটা বদলে গেল। অনেক ধর্মীয় পরিবারের ছেলেমেয়েরাও এখন বিয়ের আগে নানা অসুস্থ সম্পর্কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ছে। আগে এসব বিষয় মানুষ লুকিয়ে আড়ালে আবডালে করত। এখন প্রকাশ্যে অবৈধ প্রেম-প্রণয়ের খবর জানান দিচ্ছে আমাদের ছেলেমেয়েরা। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রেমের কথা তো বলছেই, ছবি ও ঘোরাফেরার ভিডিও শেয়ার করছে তারা। অবস্থা এতই নাজুক যে, এসব নিয়ে কথা বলতে গেলেও সমর্থন পাওয়া যায় না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি, হাজী, পরহেজগার কোনো মুসল্লিকে যদি বলি আপনার সন্তান তো হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে আছে, তখন তিনি পাল্টা জবাব দেন, ‘আরে এই বয়সে একটু-আধটু না করলে কবে করবে’। জবাব শুনে দারুণ হতাশ হই। একটি হারাম ব্যাপার এতটা গা সওয়া হয়ে গেছে আমাদের মধ্যে! এরই মধ্যে প্রতি বছর হাজির হয় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা দিবস যদি হয় বাবা-মা-ভাই-বোন-স্ত্রী-সন্তান অর্থাৎ পরিবার ও সর্বজনীন ভালোবাসাকে উৎসাহিত করার জন্য, তাহলে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু ভালোবাসা দিবস তো আসে বেহায়াপনাকে উসকে দিতে। গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড নামক পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিষ আমাদের সুখী পরিবারে ছড়িয়ে দিতে। নব্বই দশক বা চলতি শতাব্দীর শুরুর দিকে আমাদের পারিবারিক বন্ধন ও সংস্কৃতির মূল্যবোধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছিল। সুখী দেশের তালিকায় আমরা ছিলাম এগিয়ে। কিন্তু হায়! যেই আমরা তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার শুরু করে আরও আধুনিক হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গেলাম তখনই আমাদের সুখ-শান্তি উড়ে গেল। অবৈধ প্রেম-প্রণয় ও পরকীয়ার বিষ আমাদের জীবন ও সমাজকে বিষিয়ে তুলেছে। আত্মহত্যা, খুন-খারাবি ও ইজ্জত হরণ থেকে শুরু করে কি না হচ্ছে এই প্রেম-ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে।

প্রেম হলো মানুষের জন্য জান্নাতি উপহার। স্রষ্টার ভিতর প্রেম ছিল বলেই তিনি সৃষ্টিরাজ্য সাজিয়েছেন। আমাকে আপনাকে সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। শুধু তাই নয়। সৃষ্টিরাজ্য টিকিয়েও রেখেছেন তিনি প্রেম মন্ত্রবলে। সন্তানের জন্য যদি মায়ের বুকে সীমাহীন প্রেম না থাকত তাহলে কি আমরা কেউ বাঁচতে পারতাম? আবার মানুষের ভিতর মানুষের জন্য, পশুপাখির জন্য যদি মমতা না থাকত তাহলে কি পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় থাকত? প্রেম আছে বলেই সব আছে। তাই বলা হয়ে থাকে, প্রেম স্বর্গী। কথাটা ঠিক। স্বর্গের প্রেম মানুষ কলুষিত করে ফেলে। কথিত এই প্রেম-ভালোবাসা দুই দিনের। তৃতীয় দিন শেষে এরা আবার সঙ্গী পাল্টায়। সুখের আশায় এই পাল্টাপাল্টি খেলার ফাঁকে কখন যে সুখটুকুই জীবন থেকে হারিয়ে যায় আমরা বুঝতে পারি না। আমরা ভাবি, এই মানুষটির সঙ্গে ঠিকঠাক সুখ পাচ্ছি না, মানুষ পাল্টালে বুঝি সুখ পাব। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়, এমনই মায়ার ছলনা।’ মায়ার ছলনা ভুলে আমাদের সত্যিকারের প্রেমসাগরে নাও ভাসাতে হবে। জীবন সমুদ্রে যে প্রেম নাওয়ের মাঝি হতে পারল না তার কোনো সফলতা নেই। এই মাঝিকে হতে হবে দায়িত্বশীল প্রেমিক। স্ত্রীর প্রতি দায়িত্বশীল। সন্তান ও নিজের বাবা-মা সবার প্রতি প্রেমিক।

 

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

সর্বশেষ খবর