বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রক্তে কেনা স্বাধীনতা সূর্যস্নাত হোক

নূরে আলম সিদ্দিকী

রক্তে কেনা স্বাধীনতা সূর্যস্নাত হোক

যুগে যুগে কালে কালে সর্বস্তরে সমাজে মোসাহেব, চাটুকারদের একটা অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। মিষ্টি থাকলে মাছি বা পিঁপড়ার যে অনিবার্য উপস্থিতি তাকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। সর্বকালের এ যেন একটা অঘোষিত নিয়ম। এভাবেই যেন সময় বহমান হয়। কিন্তু কখনো কখনো চাটুকারিতা মোসাহেবি এমন ভয়াবহ রূপ নেয় যে, যে কোনো মানুষ তার ন্যূনতম বিবেক অবশিষ্ট থাকলে মোসাহেবির অথবা চাটুকারিতার এ বীভৎসতা দেখে চমকে উঠতে হয়।   সমাজে একটা অস্বস্তিকর, অসহনীয় ও দুঃসহ যন্ত্রণার মতো বিবেকবানদের পীড়া দিতে থাকে। নীরবে, নিঃশব্দে বিবেকবানরা মোসাহেবি ও চাটুকারিতার দৌরাত্ম্য অবলোকন করে অনেকেই ভাবতে বাধ্য হন, গণতন্ত্রের কোনো অস্তিত্ব সমাজে আছে কি না। রাজনৈতিক ক্ষমতাই দেশ ও জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। জাতিসত্তার এখানে ওখানে কোনো ছোটখাটো ব্যামো হলে রাজনীতিবিদরা চরম সহিষ্ণুতার মাধ্যমে জাতীয় জীবনের নানাবিধ অসুখ ও ব্যাধির চিকিৎসা করে থাকেন। এভাবেই সমাজের পরিবর্তন আসে, বিবর্তন সংঘটিত হয়। কিন্তু মোসাহেবের দৌরাত্ম্য প্রগাঢ় ও প্রকট হলে সুস্থ রাজনীতির বিকাশ তো বটেই, গণতন্ত্রের চলমান প্রবাহে একটা নিষ্ঠুর ভাটার সৃষ্টি করে। সম্মুখের পথ মোসাহেবি চাটুকারিতার ঘৃণিত ঔদ্ধত্যে কেমন যেন মুখ থুবড়ে পড়ে। বৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত গাছপালার মতো সমাজ ও জাতীয় জীবনের আঙ্গিক হতে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য যেন অপরাহ্ণের গোধূলিবেলার মতো সমস্ত আলো হারিয়ে ফেলে।

বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির আজ বড়ই বেহাল অবস্থা। তারা অনেকটাই অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে বলে মনে হয়। বিএনপির এতদিনকার নেতৃত্ব বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক নানাবিধ অসুস্থতার কারণে এবং জানা-অজানা অসংখ্য কারণে তার মানসিক বিপর্যস্ততা আজকে অনেকটাই সর্বজনবিদিত। বেগম খালেদা জিয়ার অবর্তমানে তার জ্যেষ্ঠ সন্তান তারেক রহমানের যে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করার একটা প্রয়াস ছিল, সেটা কেন জানি না যথাযথ বিকাশ লাভ করেনি। তারেক রহমান রাজনীতিতে কতখানি উল্লেখযোগ্য সেই প্রশ্নটি এখন আর মুখ্য নয়। মুখ্য বিষয় হলো- রাজনীতিতে যথাযোগ্য দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে ঝুঁকি মোকাবিলা করার মনন ও মননশীলতা তার মধ্যে দেখা যায়নি। লন্ডনে প্রবাসে একটি বিলাসবহুল জীবনের মধ্যে তার সময় কাটছে। ঝুঁকি বিবর্জিত অভিজাত জীবনের আস্বাদন তাকে জনতার কাছে কোনো বীর বেশে উপস্থাপিত করতে পারেনি। বরং মানুষের মনে বারবার একটি প্রশ্নেরই উদ্রেক হয়েছে, তিনি দেশে এসে মিছিলের সম্মুখভাগে দাঁড়িয়ে গণআন্দোলনের নেতৃত্ব না দিলে মানুষ আন্দোলনের পথ ধরে সম্মুখের দিকে এগোবে কোন সাহসে? আমাদের ব্যক্তিজীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা একত্রিত করলে তার যোগ ও সমষ্টিও কম হবে না। সেই ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন থেকে আমাদের প্রজন্মের পথচলা। তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দাবি ছিল স্বায়ত্তশাসন। তারপর বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে একটি আন্দোলনের ডাক দিলেন তখন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানেই আন্দোলনে একটি নতুন মোড় নেয়। স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধিকারের উত্তরণের সেই মোড়ের চালিকাশক্তি ছিল এদেশের ছাত্রসমাজ, যার অগ্রদূত ছিল ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধুকে সামনে নিয়ে আন্দোলনের একেকটি সোপান তারা বিনির্মাণ করেছিল। তাদের দুই চোখে ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক মুক্তি, বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির দিগন্ত উন্মোচন। বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা কর্মসূচিটি তখনকার রাজনীতিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে উপস্থাপন করেন, তখনকার পাকিস্তানের গোটা রাজনীতির অবয়বটি যেন চমকে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধুর নিজ দল খোদ আওয়ামী লীগ যখন দ্বিধাগ্রস্ত ছিল ছয় দফার প্রশ্নে, যখন ইতস্তত করছিল, তাদের মননে একটা সংশয় দ্বিধা এবং জড়তা যখন নিষ্ঠুরভাবে কাজ করছিল, তখন ছাত্রলীগ দৃপ্ত মানসিকতায় উদ্বেলিত সত্তায় এবং প্রত্যয়দৃঢ় চিত্তে সামনের দিকে এগিয়ে এসে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে স্বাধিকারের মন্ত্র নিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপে পথপরিক্রমণ শুরু করে। তখন বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ বিদর্ভ নগরীর এক অবিশ্রান্ত পথিকের মতো কালজয়ী ভূমিকা পালন করে।

আজ এ দিগন্তবিস্তৃত অবমুক্ত দেশে ছাত্রসমাজ রয়েছে, ছাত্রলীগ রয়েছে। তবে সবাইকে স্বীকার করতে হবে, কোথায় যেন একটু চেতনায় বিভ্রাট না বললেও ব্যত্যয় রয়েছে। এটি সর্বজনবিদিত যে, ষাট দশক থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়কালীন পর্যন্ত ছাত্রসমাজ তথা ছাত্রলীগের কাছে সময়ের দাবি ছিল শৃঙ্খল ভাঙার, পরাধীনতার বক্ষ বিদীর্ণ করার, দুই হাত বাড়িয়ে স্বাধীনতার সূর্যকে আলিঙ্গন করার এবং সেই দুর্দমনীয় অভিযাত্রায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ যার অগ্রদূত হিসেবে ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গোটা জাতিকে একটি মিলনের মোহনায় দাঁড় করাতে পেরেছিল। আর তাই ২৫ মার্চের পাশবিক শক্তির আক্রমণের পর এদেশের নিরস্ত্র জনতা উদ্বেলিত সত্তায় চিরউন্নত শিরে তাদের আক্রমণে বিপথগ্রস্ত হয়নি। বরং স্বাধীনতার অগ্নিঝরা আকাক্সক্ষায় বাংলার নগরে-বন্দরে, প্রতিটি কন্দরে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলে আঘাতকে প্রতিহত করতে পেরেছিল। তারা সেদিন সীমান্ত পাড়ি দিয়েছিল আশ্রয় প্রার্থনা করে নয়, প্রশিক্ষণ নিয়ে অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধের সূর্যস্নাত যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করার সুদৃঢ় প্রত্যয় ও অবারিত আকাক্সক্ষায়। কিন্তু আজকের প্রজন্মের কাছে দেশমাতৃকার দাবি ভিন্ন আঙ্গিকের। রাজনৈতিক সচেতনতার আবির মেখে অধিকারবঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সুকঠিন দায়িত্বকে চেতনায় রেখে তাদের এমনভাবে এগিয়ে যেতে হবে, যার ফলশ্রুতি হবে স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ যেন এদেশের প্রতিটি মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়া যায় এবং বাস্তবে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তিতে প্রতিটি মানুষের হৃদয় উচ্চকিত হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স আজ ৫২ বছর। জাতীয় অর্থনীতির বিনির্মাণ ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে ৫২ বছর অনেক দীর্ঘ সময়। এ ৫২ বছরে নানাবিধ উন্নয়ন সংঘটিত হয়েছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সাম্প্রতিককালে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, উড়ালসেতু, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণসহ অনেক অর্জন অনায়াসেই চোখে পড়ে। কিন্তু একটি কথা কখনোই বিস্মৃত হওয়া যাবে না যে, পাকিস্তান আমলের ২৩টি বছর ছিল গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের স্পর্ধিত সংগ্রাম ও আন্দোলনে ভরপুর। বঙ্গবন্ধুকে সামনে নিয়ে আমরা যখন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ পরিক্রমণ করেছি, তখন আমাদের ওপর নির্যাতন-নিগ্রহের যে অযুত কাহিনি তাকেও বিস্মৃত হওয়া যাবে না। কিন্তু স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৫২ বছর পরে যদি রাজনৈতিক অঙ্গনের দিকে ফিরে তাকাই তবে এদেশের গণতান্ত্রিক সত্তার অবলুপ্তির করুণ কঙ্কালসার চেহারা দৃষ্টির সম্মুখে ভেসে ওঠে। আজকে দেশে কার্যত একদলীয়, এমনকি তার চেয়েও নির্মম এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজকে রাজনৈতিক সব কর্মযজ্ঞ এক ব্যক্তির ইঙ্গিতে-ইশারায়, নির্দেশ ও নির্দেশনায় পরিচালিত হচ্ছে। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার শাসনামলে কোনো অবস্থাতেই তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের জাগ্রত জনতাকে কেউ কখনো নতজানু হতে দেখেনি। আইয়ুব-ইয়াহিয়ারা তখনকার পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণের চারণক্ষেত্র বানিয়েছিল। তখনকার পূর্ব পাকিস্তান ছিল সর্বপ্রকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত, শুধুই শোষণের লীলাক্ষেত্র। কিন্তু তখনকার পূর্ব পাকিস্তান ছিল অগ্নিগর্ভা। এ বাংলার গভীরে ছিল আগ্নেয়গিরির গলিত লাভা। ওরা চেয়েছে নির্যাতন করে তখনকার বাংলাকে নীরব, নিস্পৃহ ও নিস্তব্ধ করে দিতে। আর আমরা চেয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আগ্নেয়গিরির গলিত লাভার মতো প্রজ্বলিত হতে, ভিসুভিয়াসের মতো জ্বলে উঠতে। ওদের আঘাত যতই তীব্র হয়েছে আমরা ততই উদগ্র চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধিকার এবং স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার আন্দোলনে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমরা আন্দোলনকে এমন সুসংহত, সুশৃঙ্খল এবং সর্বসম্মতভাবে পরিচালনা করতে পেরেছিলাম বলেই আমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হইনি এবং আন্দোলনকেও বিপথগামী হতে দিইনি।

পয়লা মার্চ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন যখন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিল তখন আন্দোলনের অববাহিকায় বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে অগ্নিস্নাত করে আমরা স্বাধীনতার ডাক দিতে পেরেছিলাম। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় আমরা পয়লা মার্চ থেকেই ২৫ মার্চ পর্যন্ত যে আন্দোলন পরিচালনা করেছিলাম, সেটি জাতিকে একটি বজ্রকঠিন প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ করেছিল। আমাদের আন্দোলন যেন ভুল পথে প্রবাহিত না হয়, উচ্ছৃঙ্খল না হয় এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য না হারায়, সে জন্য বঙ্গবন্ধু ৩ মার্চ ছাত্রলীগ আহূত পল্টনের সভায় উপস্থিত হয়ে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানিয়েছিলেন, আন্দোলনে উচ্ছৃঙ্খলতা যেন ঢুকে না পড়ে। যারা আন্দোলনের নামে ছদ্মবেশে আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে পড়ে, উচ্ছৃঙ্খলতার মাধ্যমে তারা আন্দোলনকেই বিপথগামী করে, সাফল্যের সৈকতে পৌঁছাতে দেয় না। সেদিনের সেই আহ্বানের পর ৭ মার্চের বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সুস্পষ্ট আহ্বান জানালেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে বিশ্বজনমতের সম্মুখে উপস্থাপন করতে পারেনি।

আমরা ১ মার্চ স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করি। এ নামকরণ থেকেই বোঝা যায়, আমরা পাকিস্তানের বন্দিত্ব থেকে বেরিয়ে এসে জাতিকে স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশের স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হই। পাকিস্তানের আবর্ত থেকে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন স্পষ্টতই স্বাধিকারের আন্দোলন ছাপিয়ে স্বাধীনতার উচ্চকিত সংগ্রামে রূপ নেয়। সেদিন আমরা প্রত্যয় ও প্রতীতি ঘোষণা করেছিলাম, এখন আর আঘাতের পরিবর্তে প্রতিবাদ নয়। মিছিল ও বিবৃতির রাজনীতি শেষ। এখন থেকে আঘাতের পরিবর্তে প্রত্যাঘাত হানতে হবে। তাই বাংলার প্রতিটি শহরে-নগরে-বন্দরে এমনকি গ্রামগঞ্জের নিভৃত কন্দরেও ছাত্রলীগের নির্দেশনায় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অনুকরণে সর্বত্রই সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হতে থাকে। শুধু সংগ্রাম পরিষদের গঠন প্রক্রিয়ায়ই নয়, প্রতিটি অঞ্চলেই প্রতিটি তরুণ তাজা দীপ্ত-প্রাণের উচ্ছ্বসিত যুবকেরা সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। সমগ্র রাজনৈতিক আবহাওয়াটাই তখন ছিল আঘাতের বিপরীতে প্রত্যাঘাত হানার। আজ আমরা স্বাধীন, মুক্ত; উদ্যত-উদগত-উদ্ধত একটি স্বাধীন জাতি। এখনকার প্রজন্মের দায়িত্ব হলো- এ স্বাধীনতাকে ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে তাদের নিজেদের চরিত্র বিনির্মাণ করতে হবে, সততার সমুদ্রে অবগাহন করতে হবে। শিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশকে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে হবে।

আজকের সমাজে দুর্নীতি যে সর্বগ্রাসী রূপ পরিগ্রহ করেছে তা থেকে দেশ ও সমাজকে বিমুক্ত করার দায়িত্ব আজকের নতুন প্রজন্মকেই নিতে হবে। আর এ জন্য দরকার নিজেদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা, সততার মনন তৈরি করা, অন্তরের নিভৃত কন্দরে দেশপ্রেমকে জাগ্রত রাখা। সততা, শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম এবং মূল্যবোধসম্পন্ন বিবেক ব্যতিরেকে একটি জাতি হিমাচলের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। আমরা সেদিন যারা স্বায়ত্তশাসনের পথ ধরে রাজনৈতিক পদচারণ শুরু করেছিলাম, তারা আজ জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে। আজকে আমরা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ও নিষ্প্রভ হলেও বুক ভরে নতুন প্রজন্মকে আজ আশীর্বাদ করতে পারি, তোমরা এ প্রজন্মের যারা রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবস্থান করছ তাদের চেতনায় শানিত হতে হবে, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হতে হবে এবং সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে হিমাচলের মতো মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। ভেজাল ও দুর্নীতি আজ দেশ ও জাতিকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এ অসহনীয় নির্মম ও নিষ্ঠুর অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তরুণ প্রজন্মকেই দায়িত্ব নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর ইতিহাসে সব ইতিবাচক পরিবর্তনের অগ্নিমশাল তুলে ধরেছে সেই দেশ ও সমাজের তরুণ তাজা তপ্ত-প্রাণ।

আজকে জাতীয়ভাবে অনেক কিছু অর্জনের পরও আমাদের নতুন প্রজন্ম যদি সৎ, নিষ্কলুষ এবং আলোকস্নাত না হয়, তাদের বিবেক যদি প্রজ্বলিত না থাকে, তারা যদি জ্ঞানপ্রদীপ্ত হতে না পারে, তারা যদি সত্যিকারের ন্যায়নিষ্ঠ এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত না হয়- তাহলে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, উড়ালসেতু, নিজস্ব স্যাটেলাইট এমনকি মধ্যম আয়ের বাংলাদেশও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। এটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য হবে চরম বেদনাদায়ক ও অবমাননাকর। আমি সুদৃঢ়চিত্তে বিশ্বাস করি, রক্তস্নাত স্বাধীনতা কোনো কারণেই ব্যর্থ হতে পারে না, বিলুপ্ত হয় না। কোটি কোটি মানুষের শুচিশুদ্ধ কামনা ও স্বাধীনতা অর্জনে জাগ্রত জনতার যে অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগ ও অবদান, শাশ্বতভাবেই তা জাতীয় চরিত্রকে প্রজ্বলিত আকাক্সক্ষায় উদ্ভাসিত করে এবং স্বাধীনতার ফসলকে যথাযথভাবে ভোগ করতে জনগণকে তা অবশ্যই একান্তভাবে সাহায্য করবে।

লেখক : স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।

সর্বশেষ খবর