বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাল্টে যাচ্ছে গ্রাম শহর পাল্টে যাচ্ছে দেশ

মো. খসরু চৌধুরী

পাল্টে যাচ্ছে গ্রাম শহর পাল্টে যাচ্ছে দেশ

বাঙালির আত্মপরিচয় অন্বেষণের মাস ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম পাতালরেল নির্মাণের কাজ  উদ্বোধন করেছেন। এর মাধ্যমে পাতালরেল যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ ঘটল। ২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জে আয়োজিত এক সুধীসমাবেশ থেকে দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের উদ্বোধনে উৎসবী পরিবেশ সৃষ্টি হয় এলাকাজুড়ে। পাতালরেল নির্মাণকাজ ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী এ পাতালরেল পথে যাতায়াতের সুযোগ পাবেন। ৫২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার উড়াল ও পাতালরেল পথ। এর মধ্যে জাপানি ঋণ থাকবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। দুটি রুটে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ হবে। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এ রুটে মাটির নিচ দিয়ে চলবে রেল। ২০৩০ সালের মধ্যে আরও তিন রুটে মেট্রোরেল তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে। ঢাকাকে বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থা আধুনিকীকরণের কার্যক্রম।

পাতালরেল দেশবাসীকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির নতুন যুগের সঙ্গে যুক্ত করবে। মানুষ কম খরচে শহরের বাইরে থাকতে পারবে এবং অফিস ও অন্যান্য কাজে সহজে ঢাকায় আসতে পারবে। প্রকল্প এলাকার বাণিজ্যিক উন্নয়ন ঘটবে এবং রুটের চারপাশের সুবিধাগুলোর মূল্য বাড়বে। ওইসব এলাকায় বসবাসকারী স্বল্প আয়ের লোকজন কম ভাড়ার জায়গায় চলে যাওয়ার গরজ অনুভব করবে এবং এতে মানুষ রাজধানীর শহরতলিতে বিকেন্দ্রীভূত হবে। ঢাকা এ মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম মেগা সিটি। বিশ্বের বৃহৎ নগরীগুলোর মধ্যে ঢাকা সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিসম্পন্ন। জনসংখ্যার তুলনায় সড়কের সংখ্যা কম হওয়ায় যানজট অনিবার্য হয়ে ওঠে। মেট্রোরেল, পাতালরেল সেই দুর্বিষহ অবস্থা সহনশীল পর্যায়ে আনতে সহায়তা করবে।

এদিকে, গত বছরের ডিসেম্বরে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার প্রথম এই বৈদ্যুতিক গণপরিবহনের গার্ডের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তিনি সবুজ পতাকা দুলিয়ে মেট্রোরেলের যাত্রার সংকেত দিলেন। প্রথম দিন প্রথম যাত্রীও হয়েছেন সরকারপ্রধান। মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক দিতে পারলাম ঢাকাবাসীকে, আরেকটি পালক সংযোজিত করতে পারলাম।’

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব কিছু পরিকল্পনামাফিক চললে মেট্রোরেলের মাধ্যমে গণপরিবহনের নতুন রূপের সঙ্গে পরিচিত হবে নগরবাসী। তাদের মতে, ঢাকার বর্তমান অবস্থায় মেট্রোরেল লাইফলাইনের কাজ করবে। এমআরটির আরামদায়ক ও নির্ভরতা যাত্রীর ভ্রমণকে উপভোগ্য করে তুলবে। কোনো উন্নয়নই এক প্রান্তিক নয়। অবকাঠামো উন্নয়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। দেশে বিনিয়োগ বাড়ে। মানুষের কর্মসংস্থান হয়, জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। আর তার জন্য একটি শুভ সূচনার প্রয়োজন। মেট্রোরেল হাজার হাজার কর্মঘণ্টা সাশ্রয় করবে। মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও নতুন আবাসন গড়ে উঠছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী এবং বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল শহর থেকে গ্রামে সবাই পাচ্ছে। ঘরে বসে দেশে-বিদেশে তথ্য বিনিময়সহ। অনলাইনে প্রয়োজনীয় অনেক কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। ইন্টারনেটের কারণে বিশ্ব একেবারেই হাতের মুঠোয়। এই ইতিবাচক পরিবর্তন ও ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সত্যিই যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হবে। শিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে সব পাঠ্যবই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আগে মেয়েরা পড়াশোনায় অনগ্রসর ছিল, এখন উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রণোদনার কারণে মেয়েদের শিক্ষিত করার ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতনতা বেড়েছে এবং মেয়েরাও শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়েছে।

দেশপ্রেমী প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের কষ্টার্জিত উপার্জন দেশে পাঠাচ্ছে। বাড়ছে রেমিট্যান্স, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ হচ্ছে সুনিশ্চিত। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে।

এক সময় বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত ছিল। বলা হতো অনুন্নত দেশ, তারপর বলা হতো উন্নয়নকামী দেশ। নিম্ন বা গরিব দেশ থেকে এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের বড় অবদান রয়েছে। আমরা যদি দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে পারি তাহলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারলে শিল্প-কারখানা আরও গড়ে উঠবে, বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে। বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে সত্যিই এক উদাহরণ। এই উদাহরণ অগ্রগতির উদাহরণ। অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক বেশির ভাগ সূচকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে। বাংলাদেশ আজ বড় সম্ভাবনার দেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নের এই অগ্রগতিকে একটি ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

ব্যবসা-বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয়, উৎপাদন, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। দেশের শহর থেকে গ্রামগঞ্জ সবখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। দেশের অথর্নীতি আজ চাঙা হয়েছে। তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত বাংলাদেশ আজ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আজ মডেল ইকোনমিক কান্ট্রি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রীড়া, পরিবেশ, কৃষি, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এমন কোনো খাত নেই যে খাতে অগ্রগতি সাধিত হয়নি।  গত কয়েক বছরে দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি, মাতৃত্ব এবং শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যা দেশের গন্ডি পেরিয়ে প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও।

লেখক : সিআইপি, পরিচালক বিজিএমইএ

সর্বশেষ খবর