শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

কোরআন ও হাদিসের আলোকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়

মো. আমিনুল ইসলাম

কোরআন ও হাদিসের আলোকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়

পৃথিবীতে যত রকমের প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসে সবই আল্লাহ রব্বুল আলামিনের নির্দেশে। তাঁর নির্দেশেই মহামারি, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে, ফলে তিনি তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি দেন, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা রুম, আয়াত ৪১)। অর্থাৎ জলে-স্থলে তথা সারা বিশ্বে মানুষের নাফরমানির বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। বিপর্যয় অনেক রকমের হতে পারে। যেমন মহামারি, দুর্ভিক্ষ, অগ্নিকান্ড, ভূমিকম্প, বরকত উঠে যাওয়া, আপদ-বিপদ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিপদাপদ, ঘূর্ণিঝড়,  জলোচ্ছ্বাস, মহামারি দেখা দিলে মহানবী বিচলিত হতেন এবং সাহাবাদের তওবা, ইস্তিগফার করার জন্য পরামর্শ দিতেন। রসুল (সা.) কেন বিপর্যয় আসে বা মানুষের ওপর আল্লাহ দুর্যোগ মহামারি নাজিল করেন তার বেশ কিছু কারণ তিনি সাহাবাদের জানিয়ে দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, ‘হে মুহাজিররা, তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও।’ আর তা হলো- ১) যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা বেড়ে যায় এবং তা ছড়িয়ে পড়ে তখন মহামারি আকারে নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যা আগে কখনো দেখা যায়নি। পৃথিবীর মানুষ গত কয়েক বছর করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেভাবে মারা গেছে তা আমাদের একটু চিন্তা করে দেখা উচিত। ২) যখন কোনো জাতি ওজনে ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের ওপর নেমে আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন বিপদ, দুর্ভিক্ষ ও মুসিবতসহ নানা ধরনের গজব ও শাস্তি। ৩) যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় বন্ধ রাখে তখন আল্লাহ রব্বুল আলামিন বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেন। চতুষ্পদ জন্তু ও অন্যান্য প্রাণী যদি পৃথিবীতে বিচরণ না করত তবে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। ৪) যখন কোনো জাতি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করা থেকে দূরে সরে যায় ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করে তখন তাদের ওপর বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করা হয় আর তারা মানুষের অর্থ-সম্পদ সব কেড়ে নেয় এবং শোষণ ও উৎপীড়ন করে। ৫) আর যখন শাসকবর্গ আল্লাহর দেওয়া কিতাব অনুযায়ী মীমাংসা করে না এবং তাঁর নাজিলকৃত বিধান মেনে চলে না, তখন আল্লাহতায়ালা পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন। (ইবনে মাজাহ)। ভূমিকম্পের প্রকৃত রূপ কত ভয়াবহ সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যখন প্রবল কম্পনে কম্পিত হবে জমিন এবং চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে পড়বে পর্বতমালা, অতঃপর তা পর্যবসিত হবে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায়’। (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৪-৬)। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম।’ (সুরা আনয়াম, আয়াত ৬৫)। তাফসিরবিদদের মতে, এর ব্যাখ্যা হলো- ভূমিকম্প। এ ছাড়া মহান আল্লাহ ভূমিকম্পের মাধ্যমেই  কিয়ামত সংঘটিত করবেন, যা তিনি সুরা যিলযালে বর্ণনা করেছেন। পৃথিবীতে খরা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা, ভূমিধস, মহামারি সবকিছুই মানুষের নাফরমানির জন্য এবং পাপের ফল। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে তখন দুর্ভিক্ষ তাদের ঘিরে ধরবে। যখন ঘুষ, সুদ বৃদ্ধি পাবে তখন ভয়ভীতি ও সন্ত্রাস তাদের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ)। সমাজে ক্রমাগত পাপাচার বেড়ে গেলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে এবং আল্লাহই তা মানুষের ওপর চাপিয়ে দেন যাতে সে আল্লাহর পথে ফিরে আসে। অর্থাৎ যারাই আল্লাহর অবাধ্য হয়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়েছে তিনি তাদের পাকড়াও করছেন। নুহ (আ.) এর কওমকে তিনি বন্যা আর অতিবৃষ্টি দিয়ে ধ্বংস করেছেন শুধু তাদের আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণে। জাকাত না দেওয়ার জন্য সম্পদশালী কারুনকে মাটির নিচে দাবিয়ে দিয়েছেন। ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন। মানুষ সবসময় অন্যায় ও পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে, আল্লাহর হুকুম, আদেশ- নিষেধ মেনে জীবনযাপন করছে না। অবাধ্য হচ্ছে। ফলে আল্লাহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগব্যাধি, ফসলহানি, ভূমিকম্প দিয়ে শাস্তি দিচ্ছেন। অতীতেও তিনি তা করেছেন।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার 

সর্বশেষ খবর