বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপির প্রতিবাদ ও সৈয়দ বোরহান কবীরের বক্তব্য

বাংলাদেশ প্রতিদিনের ৪ মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘তারেক জিয়ার রাষ্ট্রদ্রোহের একটি নমুনা’ শীর্ষক কলামের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। প্রতিবাদলিপিতে তিনি বলেন, সৈয়দ বোরহান কবিরের লেখা ‘তারেক জিয়ার রাষ্ট্রদ্রোহের একটি দৃষ্টান্ত’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ ৪ মার্চ, ২০২৩-এর বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রিন্ট, অনলাইন ও ইংরেজি ভার্সনে প্রকাশিত হয়েছে।

নিবন্ধটির রচয়িতা কবির সাহেব তার সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার জন্য নয় বরং অনির্বাচিত সরকারের প্রচারণার জন্য সমধিক পরিচিত। কোনো মানদন্ডেই তার কর্মকান্ড সাংবাদিকতার পর্যায়ে পড়ে না। তিনি বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে বিষময় করে তুলতে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে চলেছেন। বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার হরণকারী গোষ্ঠীর লাঠিয়াল হিসেবেই তিনি ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। শেখ সাদি বলেছেন, ‘একটি সুন্দর বাগান নষ্ট করতে একটি বানরই যথেষ্ট।’ আর বোরহান কবিররা দেশকে নষ্ট করার সেই কাজটাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। মানবাধিকার, আইনের শাসন -এসব বিষয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের বিবেক সমাধিস্থ করে দেহটির কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছেন শাসকগোষ্ঠীর দায়।

বাংলাদেশের বর্তমান সংকটের মূলেই হচ্ছে দেশের মালিক জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাই পারত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে। স্বাধীনতার ৫১ বছর পরে এসে আমরা দেখছি বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার নেই। অথচ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুই হয়েছিল এ ভূখন্ডের মানুষের ভোটের মাধ্যমে দেওয়া রায় না মানার বিরুদ্ধে। বিশ্বে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, নারী অধিকার, খাদ্য,  স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ থাকে একেবারে তলানিতে। যুদ্ধপীড়িত আফগানিস্তান ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের সঙ্গেই শুধু তুলনা চলে বাংলাদেশের। বোরহান কবির বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংসকারীদের অপতৎপরতার সহকারী।

দেশ যখন খাদ্য, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সমস্যায় জর্জরিত তখন কিছু তথাকথিত সাংবাদিক জনগণের দৃষ্টি অন্য খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। জনাব কবির তাদের অন্যতম।

জনাব তারেক রহমান আশির দশকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে যাত্রা করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে গণতান্ত্রিক,  আধুনিক ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি কখনো সরকারে যোগ দেননি। জনতার কাতারেই থেকেছেন। তাঁর পরিকল্পনায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ে আয়োজিত ‘ইউনিয়ন প্রতিনিধি সভা’ ছিল বাংলাদেশে অভূতপূর্ব। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো ভোটের মাধ্যমে বিএনপির সর্বস্তরের সাংগঠনিক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন; যা সব মহলে হয়েছিল প্রশংসিত। তারেক রহমানের এসব যুগান্তকারী রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ভয় পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ বিরোধী চক্র। আর সেখান থেকেই টার্গেট হন তারেক রহমান ও হাওয়া ভবন।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, জনাব কবির সাহেব তার নিবন্ধে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের পেছনে জনাব তারেক রহমানের হাত ছিল বলে যে অভিযোগ করেছেন তা-ও মিথ্যা এবং বানোয়াট। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি এবং হাওয়া ভবনের প্রতি এমন অভিযোগও ভিত্তিহীন।

২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায়িক সংঘাত ঘটেছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ঘটনাকে বিএনপি এবং হাওয়া ভবনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। একটি বিজয়ী দল কোনো অবস্থায়ই নিজ ভূখন্ডে দাঙ্গা-হাঙ্গামা কিংবা সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে না। মূলত বিএনপি সরকারকে বিতর্কিত করতেই এ অঘটনগুলো ঘটিয়েছিল চক্রান্তকারীরা। অথচ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার কারণে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অনেক মা-বোনের ওপর চালিয়েছিল নির্মম নির্যাতন, কেড়ে নিয়েছিল সম্ভ্রম।

১৪ বছর ধরে বাংলাদশের মানুষ ভোটাধিকারহারা। গুম-খুন-হামলা-মামলা জনগণের ওপর চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। দখলদার সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে গ্যাস-বিদ্যুৎ-চাল-ডাল-আটাসহ সব নিত্যপণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে অধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যখন মানুষ রাজপথে, তখন মিথ্যাচার করে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী কাউকে রক্ষা করতে চাচ্ছে।

সব অপপ্রচার রুখে দিয়ে জনতার কাতারে আসুন, এ আহ্বান জানাচ্ছি।

সৈয়দ বোরহান কবীরের বক্তব্য :

৪ মার্চ বাংলাদেশ প্রতিদিনে আমার লেখা কলাম ‘তারেক জিয়ার রাষ্ট্রদ্রোহিতার একটি নমুনা’ শীর্ষক কলামের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি -সংশ্লিষ্ট কয়েকজন। প্রতিবাদপত্রের ধরন ও ভাষা উদ্বেগজনক এবং ভীতিপ্রদ। বিএনপি-সংশ্লিষ্টরা প্রতিবাদপত্রে আমার নাম এবং কলামটির শিরোনাম পর্যন্ত সঠিকভাবে লিখতে পারেননি। প্রথমেই বোঝা যায় পাঠক হিসেবে তারা কত অমনোযোগী এবং দায়িত্বহীন। এ কারণেই এই কলামের মর্মার্থ এবং সত্যতা তারা উপলব্ধি করতে পারেননি বোধ করি। তারেক জিয়া সম্পর্কে আমি যা লিখেছি, তা সবই সত্য এবং ২০০১-০৬ সালের বাস্তবতা। বিএনপি যদি তাদের স্মৃতি হাতড়ায় এবং পুরনো দিনের সংবাদপত্রগুলো একটু ঘেঁটে দেখে, তাহলে ওই সময়ের জন্য তাদের লজ্জিত ও কুণ্ঠিত হওয়া উচিত। আসল সত্য তথ্য পাবেন। কলাম লেখক, কোনো নতুন তথ্যের অবতারণ করেন না বরং প্রতিষ্ঠিত তথ্য ও সংবাদ বিশ্লেষণ করে তার মতামত দেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বিভীষিকা স্মরণ মানেই বর্তমানকে পাশ কাটানো বা ধামাচাপা দেওয়া- এমন উর্বর চিন্তা কোত্থেকে এলো তা বোধগম্য নয়।

প্রতিবাদপত্রের ভাষা প্রমাণ করে বিএনপি এখনো প্রতিক্রিয়ার রাজনীতি এবং হুমকি-ধমকির সংস্কৃতির মধ্যেই আটকে আছে। এভাবে ধমক দিয়ে কলম বন্ধ করা যায় না। আমি যা লিখেছি তা আমার বিশ্বাস, দায়িত্ববোধ থেকেই লিখেছি। আমি আমার লেখার অবস্থানে অটল।

সর্বশেষ খবর