শিরোনাম
শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বায়ুদূষণের বিপদ

যে প্রাণ দেয়, সে-ই আবার প্রাণ নেয়। বায়ু এখন হয়ে উঠছে ঘাতক। পরিবেশবিদদের মতে, বেশির ভাগ শহরেই বায়ুদূষণের অবস্থা প্রায় একই রকম। দূষণ কোনো রাজনৈতিক রং দেখে ছড়ায় না। দেশের বায়ুদূষণ চিত্র বলছে, যে দল যখনই শাসনে থাকুক বায়ূদুষণের অনুপ্রবেশ ঘটে দেশব্যাপী; তবে শহরাঞ্চলে একটু বেশি। দূষণ ছড়ায় মূলত মানুষের ভুল, জীবনযাপন এবং প্রয়োজনীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না-থাকার কারণে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণ হাল দেখে এ কথা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, গোটা দেশের অবস্থা খুব ভালো, বলতে হয় সর্বত্র খারাপ।

স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীদের গবেষণা জানাচ্ছে, দেশের বেশির ভাগ জায়গার বাতাসে এখন বস্তুকণার পরিমাণ ৭৭ শতাংশের বেশি। বাতাসে বস্তুকণার পরিমাণ বাড়াটা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ভালো নয়। কারণ, ধূমপান বা মদ্যপান কোনো ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে কিন্তু দূষিত বাতাস একটা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সামগ্রিকভাবে সাংঘাতিক বিপদ, এমনকি মৃত্যুও ডেকে আনে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা সারা পৃথিবীতেই এখন মানুষের বেঁচে থাকার মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু ঘরে-বাইরে লাগাতার বায়ুদূষণে আক্রান্ত হওয়ার ফলে আমাদের দেশে তার কোনো সুফল আমরা পাচ্ছি না। স্বাস্থ্যহানি ও নানা অসুখ-বিসুখে কমছে আমাদের কর্মক্ষমতা, নষ্ট হচ্ছে কাজের দিন। ‘এটা না-হলে দেশের মানুষের গড় আয়ু ১ বছর ৭ মাস বাড়ত। আগে আমরা জানতাম, বায়ুদূষণ শীতে বাড়ে, অন্য সময় তা কমে। কিন্তু এখন শীত, গ্রীষ্মের ফারাকটা ক্রমেই কমছে। এখন দূষণ আর কোনো নির্দিষ্ট মৌসুমে আটকে নেই। দেশবাসী জীবন বস্তুত এখন যেন একটা দূষণের বারোমাস্যা। শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের রোগ ছাড়াও তা এখন নানা রোগের কারণ। শুধু সংক্রামক রোগের কথাই বা বলি কেন, বায়ুদূষণের ফলে অসংক্রামক রোগও বাড়ছে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের নানা অসুখে মৃত্যু চোখে পড়ার মতো বেড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব জানাচ্ছে, বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি এমন ১৫টি শহরের মধ্যে একটি আমাদের দেশে। ঢাকাতে বায়ুদূষণের মৃত্যুর ঘটনা কম হলেও দূষণ কম নয়। এটা রোখার ব্যাপারে আপনার, আমার যে দায়িত্ব আছে সে কথা আমরা সবাই জানি। তবুও অবস্থাটা খুব একটা বদলাচ্ছে না, তার সবচেয়ে বড় কারণ হলো জেনে বা না-জেনে আমরা কিছু সাধারণ নিয়ম বারবার ভেঙে চলেছি। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমালে বায়ুদূষণ কমবে। তারা বলছেন, অফিসগুলোতে পুলকারে কর্মী আনার কথা। বলা হচ্ছে, রান্নার জ্বালানি হিসেবে কাঠ, কয়লা, কেরোসিন তেল ব্যবহার না করতে। কারণ, এগুলোর ব্যবহার বাতাসে কার্বন নিঃসরণ বাড়ায়। আমরা কি কেউ তা শুনছি? বারবার বলা হচ্ছে, ডিজেল, পেট্রলে চলা যানের বদলে পরিবেশবান্ধব সাইকেল ব্যবহার করা। কিন্তু আমরা কি কেউ তা মানছি? জ্বালানি হিসেবে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার বাড়লে বায়ুদূষণ যে কমে তা এখন প্রমাণিত সত্য। কিন্তু এখনো দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ জ্বালানি হিসেবে কাঠ, কয়লা, কেরোসিন, আগুন পোহানোর জন্য বাতিল টায়ার, কারখানায় ব্যবহৃত তেল মোছা ন্যাকড়া ইত্যাদি ব্যবহার করে চলেছেন। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, ডিজেল গাড়ি শহরের বায়ুদূষণের বড় কারণ। কিন্তু আমরা তা শুনছি কই? নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শহরের রাস্তায় রাস্তায় চলছে ডিজেলচালিত গাড়ি।

                আফতাব চৌধুরী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর