সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

জাকাত কী ও কেন?

মো. আমিনুল ইসলাম

জাকাত কী ও কেন?

জাকাত শব্দের অর্থ পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করা। শরিয়তের ভাষায় সুনির্ধারিত সম্পদ সুনির্ধারিত শর্তে তার হকদারকে বুঝিয়ে দেওয়া। কোনো মুসলমান যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় এবং তা এক বছর পর্যন্ত তার কাছে থাকে তাহলে তাকে তার নির্ধারিত অংশ হকদারের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হলো জাকাত। সুনির্ধারিত অংশটি শরিয়তসম্মতভাবে আদায় না করলে পুরো সম্পদই মুমিনের জন্য হারাম হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য তোমরা জাকাত আদায় করবে। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৭৭)। মুমিন নর-নারী সম্পর্কে বলতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, এরা ন্যায় কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে, এরা নামাজ কায়েম এবং জাকাত আদায় করে। (সুরা তওবা, আয়াত ৭১)।

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে জাকাত অন্যতম। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে মুমিন তার সম্পদকে পবিত্র করে এবং তার মনমানসিকতায় পরিশুদ্ধতা অর্জন করে। ধনী ব্যক্তি যখন গরিব ও অসহায়কে জাকাত দেয় এর মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হয়। জাকাতভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মহানবী (সা.) থেকে শুরু করে খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে সম্পূর্ণ আরব বিশ্বে প্রচলিত ছিল এবং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করেছিল। মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই যারা ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, সালাত কায়েম করেছে, জাকাত  আদায় করেছে তাদের জন্য তাদের মালিকের কাছে যথার্থ প্রতিদান রয়েছে। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৭)। সুবহানাল্লাহ। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোকে পরিপূর্ণভাবে পালন করে আমাদের আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলে সালাত ও জাকাত আদায় করতে হবে। এতে কোনো ওজর দাঁড় করানো বা আপত্তি করা চলবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে সালাত ও জাকাত একে অপরের পরিপূরক। কাদেরকে এ জাকাত দিতে হবে? পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাও বলে দিয়েছেন। সদাকা (জাকাত) হচ্ছে ফকির মিসকিনদের জন্য, এর ব্যবস্থাপনার ওপর নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, যাদের অন্তকরণ দীনের প্রতি অনুরাগী করা প্রয়োজন তাদের জন্য, গোলামি থেকে আজাদ করার মধ্যে, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণমুক্তির মধ্যে, আল্লাহতায়ালার পথে ও মুসাফিরদের জন্য এ সদাকার অর্থ ব্যয় করা হবে। এটা আল্লাহতায়ালার নির্ধারিত ফরজ, আল্লাহতায়ালা বিজ্ঞকুশলী। (সুরা তওবা, আয়াত ৬০)। দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে দেখা যায় কতিপয় ব্যক্তি জাকাত আদায়ের নামে এক ধরনের লৌকিকতা অবলম্বন করে। তারা মার্কেট থেকে স্বল্প মূল্যের জাকাতের শাড়ি কিনে এনে তা গরিব মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করেন আর তা সংগ্রহ করতে গিয়ে পদদলিত হয়ে প্রাণহানিও ঘটে, যা কাম্য নয়। আমাদের এ ধরনের প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে হবে। রসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে এমনভাবে দান সদাকা করে যে ডান হাত দিয়ে কী দান করেছে তা তার বাম হাতও জানে না। (বুখারি শরিফ)। কাদের জাকাত দেওয়া যাবে না : নিকট গরিব আত্মীয় স্বজনকে জাকাত দেওয়া উত্তম। তবে সন্তান, পিতা-মাতা, স্বামী, স্ত্রীকে জাকাত দেওয়া যাবে না। মসজিদ, রাস্তাঘাট, মাদরাসা স্থাপন, কবরস্থান, এতিমখানার বিল্ডিং- এসব নির্মাণকাজে জাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। কোনো অমুসলিমকেও জাকাত দেওয়া যাবে না। যেসব মাদরাসা ও এতিমখানায় লিল্লাহ বোর্ডিং আছে সেখানে জাকাত দেওয়া যাবে। জাকাতের অর্থ দিয়ে কোনো অভাবগ্রস্তকে স্বাবলম্বী করে দেওয়া হলো সবচেয়ে উত্তম কাজ। কোনো ঋণগ্রস্তকে ঋণমুক্ত করে দেওয়াও উত্তম। এতে জাকাতের মূল উদ্দেশ্য সফলতা লাভ করে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, ব্যাংকে জমাকৃত নগদ টাকা, প্রাইজবন্ড অথবা সমমূল্যের ব্যবসার পণ্য থাকলে জাকাত আদায় করতে হবে। অর্থাৎ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তাকে জাকাত আদায় করতে হবে।  জাকাত আদায়ের মাধ্যমে সম্পদ পরিশুদ্ধ হয় এবং সমাজে সামাজিক বৈষম্য দূরীভূত হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সবাইকে জাকাত  আদায় করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর