মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

নববর্ষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মহাপ্রয়াণ

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

নববর্ষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মহাপ্রয়াণ

ঘন ঘন অগ্নিকান্ড, প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা ও নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে আমরা বাংলা নববর্ষ ১৪৩০-কে স্বাগত জানালাম। সেই সঙ্গে গতকাল ছিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। যে মুজিবনগরে আমাদের মহান বিপ্লবী সরকারের শপথ অনুষ্ঠান হয়েছিল। যে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিপ্লবী সরকারকে গার্ড অব অনার দিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এসপি মাহবুব বীরবিক্রম। মানুষের জীবনে সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য নানাভাবে আসে। অনেকে অনেক রকম সৌভাগ্য অর্জন করে। কিন্তু একটি দেশের স্বাধীনতার এ রকম ঐতিহাসিক সাক্ষী খুব কম মানুষ হতে পারে। যেমনটা এসপি মাহবুবের ভাগ্যে জুটেছিল। আমাদের অনেকেই চলে গেছেন, এসপি মাহবুব এখনো বেঁচে আছেন। সেই মুজিবনগর দিবস কত না হেলাফেলায় পার হয়ে যায়। অথচ মুজিবনগর দিবসই হচ্ছে আমাদের সবচাইতে গর্ব এবং গৌরবের। আজকের এই রাজধানী সেদিন ছিল পাকিস্তানি হানাদারদের করায়ত্তে। আমরা গ্রামেগঞ্জে-পাহাড়ে ছুটে বেরিয়েছি। আমাদের তেমন ভালো আশ্রয় ছিল না। যেসব দুর্গম অনুন্নত চরে-ভরে-পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছি সেসব জায়গা অনেকটাই অবহেলিত পড়ে আছে। মুজিবনগরের আম্রকানন অবহেলিত থাকার কথা ছিল না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তো নয়ই। তবু কেন যেন আওয়ামী লীগের আমলেও অনেক কিছু অবহেলিত। এসব বুকে বাঁধে, চোখে লাগে। কিন্তু করার কিছু নেই। আমরা তো সব সময়ই আশা করব যতদিন দেশ থাকবে ততদিন মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দিনগুলো যথাযথ মর্যাদায় পালিত হবে, মানুষের চোখে চোখে থাকবে। যখন তেমন হয় না তখন সত্যিই খুব কষ্ট লাগে, বুকের ভিতর অস্বস্তি জাগে। পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহই জানেন বাংলা ১৪৩০ কেমন যাবে, স্বস্তি না অস্বস্তিতে আমরা বাংলা ১৪৩০, ইংরেজি ২০২৩ পার করব।

ঈদুল ফিতরের আগে আর পাঠকদের পাব না। তাই অগ্রিম ঈদ মুবারক। প্রচন্ড দাবদাহে মানুষের ভীষণ কষ্ট। অনেক জায়গায় ফসল জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। তার পরও মাহে রমজানের রোজা রাখতে তেমন কষ্ট হয়নি। জাতির চরম দুর্ভোগ মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আল্লাহর অপার মেহেরবানিতে রোজা রেখেছি। আল্লাহ কবুল করেছেন কি না তিনিই জানেন। কিন্তু দয়ালু আল্লাহর একজন বান্দা হিসেবে রোজা রাখতে পেরেছি। অসুবিধা ছিল, কষ্ট ছিল, সাহরি খাওয়ার নিশ্চয়তা ছিল না, রোজা ছেড়ে ইফতার করারও কোনো সুযোগ ছিল না। তবু রোজা রেখেছি। শতকরা ৮০-৯০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা রোজা রেখেছে। আমি আমার জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছি, নিরাপদ স্বাচ্ছন্দ্যের সময় মানুষ যতটা আল্লাহ-রসুলের প্রতি ভরসা রাখে বিপদে রাখে তার চাইতে শত গুণ। শেষ বয়সে ডায়াবেটিস থাকার পরও রোজা রাখছি, রাখতে পারছি। কবুল করা-না করা দয়ালু আল্লাহর ব্যাপার। তবে এটা ঠিক, রোজার মধ্যে দৌড়াদৌড়িটা একটু বেশি হচ্ছে। কিছুটা দুর্বল বোধ করি সত্য, কিন্তু খুব একটা খারাপ লাগে না। ইফতারের পরপর মাঝে কয়েকবার রক্ত পরীক্ষা করে দেখেছি ৫.১-৫.৩-এর বেশি কখনো হয়নি। যেটা আগাগোড়াই ছিল ৭-৮-এর মধ্যে। সেটা ৫.১-৫.২ কোনো কিছুই না।

ভালোমন্দ দোষগুণে মানুষ। সে রকম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পবিত্র রোজার মধ্যে শুক্রবার তিনি মারা গেলেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। পয়লা বৈশাখ পবিত্র জুমার দিন তাঁকে কবরস্থ করা হয়েছে। এটাও আল্লাহর এক মহান নিদর্শন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী শত্রুর বুকে গুলি ছোড়েননি। তার পরও সত্যিকার অর্থেই তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। এখন দেশে যে অবস্থা কোটি মানুষ জীবিকার অন্বেষণে পৃথিবীর নানা প্রান্তে পাড়ি জমাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে বিয়ে করে এক-দুই দিন পরই বিদেশে পাড়ি। এমনকি মা-বাবা-ভাই-বোন অসুস্থ হয়ে মৃত্যুশয্যায় ছটফট করা আপনজনকে রেখে অনেকেই বিদেশ চলে যায়। কিন্তু ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ডাক্তারি পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্যে বিদেশে গিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে নিরাপদ জীবনে উচ্চশিক্ষা অর্জনের চেষ্টা করছিলেন। এ রকম সময় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তিনি সবকিছু ফেলে ভারতে চলে আসেন। এসেই ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোগ নেন। তাঁর উদ্যোগে অনেক সেক্টর কমান্ডার হাসিতামাশা করেছিলেন। কেউ কেউ বলেছিলেন, দু-চার জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হলে তাদের ট্রিটমেন্ট করে সুস্থ করার চাইতে আমরা নতুন মানুষ নিয়ে নেব। নতুন মানুষের কোনো অভাব নেই। লাখ লাখ নতুন যোদ্ধা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। তাই আমাদের ফিল্ড হাসপাতাল নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দমবার পাত্র ছিলেন না। সেক্টর কমান্ডারদের কারও কারও হাসিঠাট্টার মধ্যেও তিনি ফিল্ড হাসপাতাল করতে এগিয়ে যান। এ ক্ষেত্রে মুজিবনগর বিপ্লবী সরকার দৃঢ়ভাবে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সমর্থন করে। পৃথিবীতে আরও বহু দেশে যুদ্ধের মধ্যে ফিল্ড হাসপাতাল কাজ করেছে। কিন্তু জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ফিল্ড হাসপাতাল সে এক অভাবনীয় সাফল্যের প্রতীক। যদি তিনি ওভাবে হাসপাতাল গড়ে তুলতে না পারতেন বা গড়ে না তুলতেন তাহলে আরও বেশ কয়েক হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা বিনা চিকিৎসায় মারা যেত, অনেকের অঙ্গহানি হতো। আর শুধু মুক্তিযোদ্ধাই নয়, জাফরুল্লাহর প্রতিষ্ঠিত ফিল্ড হাসপাতাল থেকে সাধারণ মানুষও সেবা পেয়েছেন। নিজে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে আগাগোড়া জড়িত ছিলাম বলে যুদ্ধের সময় চিকিৎসার সে যে কি গুরুত্ব মরমে মরমে উপলব্ধি করেছি। মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল না থাকলে আমাদের আরও কয়েক শ মুক্তিযোদ্ধা বিনা চিকিৎসায় মারা যেত, কয়েক হাজারের অঙ্গহানি হতো। শত শত সাধারণ মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যেত। কাদেরিয়া বাহিনীর ফিল্ড হাসপাতাল ছিল বলে আমরা আহতদের বিনা চিকিৎসায় মরতে দিইনি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ডা. শাহজাদা চৌধুরী, শিক্ষককুলের গর্ব আমজাদ মাস্টার, শওকত মোমেন শাজাহান, এসএমএ মোতালিব, মো. ওসমান গনি, মো. হাফিজুর রহমান, জাহিদুল হক লেবু, মো. বেলায়েত হোসেন, ডাক্তার নিজাম উদ্দিন, কম্পাউন্ডার ডাক্তার আমজাদ আলী, সেলিম তালুকদারসহ আরও কয়েকজনের অক্লান্ত পরিশ্রমে কাদেরিয়া বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল সৃষ্টি হয়েছিল। দুস্থ মানুষের চিকিৎসা যে কত বড় গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যার এ সম্পর্কে ধারণা নেই তাকে তেমন বোঝানো যাবে না। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হাসপাতাল ছিল আমাদের চাইতে হাজার গুণ সুসংগঠিত। অনেকেই সেখানে সেবা দিয়েছেন, কাজ করেছেন। দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু তাঁকে ডেকে নিয়ে বিনা পয়সায় ৪৭ একর জমি দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু আমাকে খুবই ভালোবাসতেন। আমার চাইতে শত গুণ ভালোবাসতেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে। স্বাধীনতার পর মোহাম্মদপুর বাবর রোডে আমাকে ৫ কাঠার বাড়ি দিয়েছিলেন বসবাসের জন্য। পিতার হত্যার পর বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। ’৯০-এ দেশে ফিরে ২০/৩০ বাবর রোডের বাড়ি পেয়েছিলাম, কিন্তু বৈধতা পাইনি। একসময় পূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান সংসদে অবৈধ বাড়ির তালিকায় আমার নাম সবার আগে নিয়েছেন। এই কদিন আগে বোনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। অনেক কথার মাঝে আমার স্ত্রী নাসরীন বাবর রোডের বাড়ি সম্পর্কে বলার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয় বোন আমাকে বলেছিলেন, ‘বজ্র, একটা চিঠি পাঠিয়ে দিও তো।’ বেশ কয়েকদিন পর চিঠি পাঠিয়েছিলাম। চিঠি পাঠানোর চার-পাঁচ দিন পর গণভবন থেকে আমার কাছে চিঠি আসে। পূর্ত সচিবকে সম্বোধন করে কাদের সিদ্দিকীকে ২০/৩০ বাবর রোডের বাড়িটি আইনানুগ করে দেওয়া হোক। মনে হয় কাজ চলছে। কিন্তু এখনো দেওয়া হয়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ৪৭ একর দিয়েছিলেন। যাতে প্রায় ৩ হাজার কাঠা হবে। জাফরুল্লাহ চৌধুরী সত্যিই একজন নিষ্ঠাবান নিবেদিত মানুষ ছিলেন। আওয়ামী সরকারের অনেক কিছুর সঙ্গেই তাঁর বনে না সে কথা তিনি অকপটে বলার চেষ্টা করতেন। যে কারণে আওয়ামী লীগের বহু লোক তাঁকে পছন্দ করেন না। বেশ কিছুটা বিএনপিঘেঁষা ছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে জিয়াউর রহমান, এটা তাঁর মধ্যে কোনো দিন দেখিনি। তাঁরা ১০ ভাইবোন। তা-ও জানলাম তাঁর মৃত্যুর পরে। এ রকম মানুষ অনেক সময় পরিবারের খুব একটা সমর্থন পান না। যেহেতু বেশ কয়েকবার তাঁর ধানমন্ডির বাড়ি গেছি তাই তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে। কখনো ছেলেমেয়েকে দেখিনি। মৃত্যুর পর তাঁর ছেলেকে দূর থেকে হাঁটাহাঁটি করতে দেখেছি। এখন পর্যন্ত কোনো কথাবার্তা হয়নি। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে অনেক কিছুর যেমন মিল ছিল, তেমনি অমিলও ছিল। এ মিল-অমিলের মাঝেও দুজনের মধ্যে আস্থাবিশ্বাসের কোনো কমতি ছিল না। এই তো সেদিন ২৬ মার্চ বঙ্গভবনে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে শেষ দেখা। হুইলচেয়ারে আমার সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আমার খুব একটা ভালো লাগেনি। এ রকম একজন মানুষ যাঁকে অন্যের দয়ায় চলতে হয় সব সময়, এটা কেমন যেন লাগত। অতিথিদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন বসে ছিলেন সেখানে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন হাসিনা তাঁকে যথাযথ সম্মান দিয়েছিলেন। যেটা সত্যিই এক ইতিহাস হয়ে থাকল। এর আগে ১৮ মার্চ সমকাল পত্রিকা থেকে গুণিজন সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল। আমাকে দাওয়াত করেছিল সমকালের সিটি এডিটর শাহেদ চৌধুরী। প্রথমে ছিল ১০ তারিখ। সেভাবেই আমি আমার কর্মসূচি ঠিক করেছিলাম। হঠাৎ শুনলাম ১০ তারিখ নয়, ১৮ তারিখ। ১৮ তারিখ নারায়ণগঞ্জে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কর্মিসভা ছিল। শাহেদকে বলেছিলাম, কেমন হবে? শাহেদ বলেছিল, দাদা, আমরা ৯টা পর্যন্ত থাকব। এর মাঝে আপনি একবার এলেই হবে। আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে ছুটে এসেছিলাম তেজগাঁও সমকাল ভবনে। তখন সন্ধ্যা ৭টা। গাড়ি থেকে নেমে লিফটের দিকে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনই দেখি গাড়ি থেকে নেমে হুইলচেয়ারে বসছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছুটে গিয়ে তাঁর হাত জড়িয়ে ধরেছিলাম। তিনিও ভীষণ আন্তরিকতা নিয়ে আমার দুই হাত চেপে ধরেছিলেন। তাঁর সম্মাননায় বহু লোক এসেছিলেন। বড় বড় সব গুণিজন। আমাদের দেশে কেউ মরে গেলে তাকে নানা বিশেষণে ভরে ফেলা হয়। কিন্তু জীবিতকালে খুব বেশি মানুষকে সম্মান দেওয়া হয় না বা দেখানো হয় না। এ ক্ষেত্রে হা-মীম গ্রুপের প্রাণপুরুষ এ কে আজাদ এক ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রারম্ভিক বক্তৃতায় এ কে আজাদ দারুণ সুন্দর করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে জীবিত থাকতেই সম্মাননা দেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছিলেন। এ কে আজাদ অত সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে পারেন আমার জানা ছিল না। তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এটা জানতাম। কিন্তু অত সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে পারেন জানতাম না। ডা. চৌধুরীকে সম্মাননা মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আমার চোখে অসাধারণ মানুষ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। প্রধান অতিথি প্রথমেই ভাষণ দিচ্ছিলেন। আমি চুপিচুপি পেছন দিয়ে চলে আসছিলাম। হঠাৎই কে যেন হাত চেপে ধরেন। মুখ ফিরে দেখি এ কে আজাদ, ‘কাদের ভাই, কিছু না বলে যাওয়া যাবে না।’ বাধ্য হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণের পর ডা. চৌধুরীর ওপর খোলামেলা দুই কথা বলেছিলাম। আমি বলেছিলাম, এ কে আজাদের দেশের চিরাচরিত রেওয়াজ বা প্রথা ভেঙে একজন সাহসী পুরুষ জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে জীবিত থাকতেই সম্মাননা দেওয়া এ এক অসাধারণ প্রয়াস। এ প্রয়াসের জন্য এ কে আজাদ বহু বছর আলোচিত থাকবেন। তারও আগের কথা ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে পেয়েছিলাম। সেদিনও তাঁর পাশে স্থান হয়েছিল। তারও আগের কথা বাংলাদেশের গৌরবের পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং আমি পাশাপাশি বসেছিলাম। জীবনে কত জায়গায় তাঁর সঙ্গে তাঁর পাশে বসেছি হিসাব করে বলতে পারব না। সেই মানুষটা চলে গেলেন। তাঁর পঞ্চম বারের জানাজায় শরিক হয়েছিলাম সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে অসংখ্য সাধারণ মানুষ জানাজায় শরিক হয়েছিল। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে অসংখ্য গাছপালা আছে বলে অমন ভ্যাপসা গরমে মানুষ টিকতে পেরেছে, জানাজায় শরিক হতে পেরেছে। অনেক বড় বড় নেতানেত্রী, বড় বড় মানুষ ছিলেন জানাজায়। তার মধ্যে ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভিপি নূর। পত্রপত্রিকায় এসেছিল জুমার নামাজের পর ২টায় জানাজা হবে। সেভাবেই গিয়ে শুনি জানাজা হবে আড়াইটায়। হাতল ছাড়া একটা প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে বসেছিলাম। নামাজের সময় ঘনিয়ে এলে চেয়ার ফেলে সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু নামাজের ঠিক আগে আগে আমাদের সামনে দিয়ে আরেক কাতার হয়ে গেল। আমরা দ্বিতীয় কাতারে পড়ে রইলাম। তবে সামনের কাতারের কেউ কেউ এসে তাদের সঙ্গে দাঁড়াতে অনুরোধ করছিল। কিন্তু আমার মন সায় দেয়নি। তাই দ্বিতীয় কাতার থেকে প্রথম কাতারে যাইনি। সারা জীবন আমার কাছে প্রথম আর দ্বিতীয় বলে কিছু মনে হয়নি। যেখানেই দাঁড়াই বা বসি সেটাই আসল। আল্লাহ সেটা মঞ্জুর করলেই হলো। কফিন থেকে বেশ কিছুটা দূরে ছিলাম। পরে দেখলাম কফিনের কাছাকাছি কয়েকজন মহিলাও দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমার কাছে মেয়েদের স্থান সবার ওপরে। তার পরও বলব জানাজায় পুরুষের পাশে মহিলাদের দাঁড়ানোর অনুমতি নেই। জানি না তারা কীভাবে নেবেন। কিন্তু আমি কাছাকাছি থাকলে আমার চোখে পড়লে আমি অবশ্যই তাদের সরে যেতে অনুরোধ করতাম, বলতাম এটা শরিয়ত অনুমোদন করে না। পরম দয়ালু মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন তাঁর বান্দা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বেহেশতবাসী করেন।

 

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর