বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

শবেকদরের বরকত লাভের আমল

মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

শবেকদরের বরকত লাভের আমল

মাহে রমজানের অনন্য মর্যাদার অন্যতম দিক ‘লাইলাতুল কদর’ বা পবিত্র কদরের রাত, যার অপর নাম শবেকদর। আল্লাহতায়ালা মহিমান্বিত এই রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন এবং কদরের রাতকে হাজার মাসের চেয়েও মর্যাদাবান ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রাতে। আর মহিমান্বিত রাত সম্পর্কে আপনি কী জানেন? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম’ (সুরা : কদর ১-৩)।

লাইলাতুল কদরের মর্যাদা

পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা শবেকদর বা কদরের রাতের মর্যাদা প্রমাণিত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘তোমাদের কাছে এ মাস সমুপস্থিত। এতে রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ থেকে যে ব্যক্তি বঞ্চিত হলো সে সমস্ত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। কেবল বঞ্চিত ব্যক্তিরাই তা থেকে বঞ্চিত হয়’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)।

হাদিস বিশারদদের মতে, লাইলাতুল কদর বা কদর রাত রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে রয়েছে। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদিসে অনেক ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে বিজ্ঞ আলেমগণ বলেন, রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা আবশ্যক। কেউ যদি তাতে অক্ষম হয়, তবে সে যেন শেষ তিন বিজোড় রাতে (২৭, ২৯) আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করে। আর তা-ও যদি সম্ভব না হয়, তবে সে যেন ২৭ রমজানের রাতে তা অনুসন্ধান করে।

লাইলাতুল কদর তালাশের নির্দেশ :

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিন নর-নারীদের পবিত্র লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর’ (সহিহ বুখারি)।

লাইলাতুল কদরের আলামত

পবিত্র হাদিসে লাইলাতুল কদরের নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে। উবাই বিন কাব (রা.) তিনি দৃঢ় শপথ করে বললেন, তা (লাইলাতুল কদর) রমজানের ২৭তম রজনী। অতঃপর তিনি মহানবী (সা.)-কে উদ্ধৃত করে বলেন, সে দিনের নিদর্শন হলো, সে দিন সূর্যোদয় হবে; কিন্তু তাতে আলোকরশ্মি থাকবে না (সহিহ মুসলিম)।

‘কদর’ অনুসন্ধানের আমল : পবিত্র হাদিসের আলোকে ‘লাইলাতুল কদর’ অনুসন্ধানের জন্য চারটি আমলের কথা বলেছেন আর তা হলো-

এক. ভিতর ও বাইরের পবিত্রতা : লাইলাতুল কদরের বরকত লাভের প্রধান শর্ত ভিতর ও বাইরের পবিত্রতা লাভ এবং একনিষ্ঠ মনে মহান আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়া। আল্লামা ইবনে রজব বলেন, ‘উত্তম হলো যে রাতে কদর অনুসন্ধান করা হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, গোসল করা, উত্তম কাপড়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা। আর বাহ্যিক সৌন্দর্য সৌন্দর্যের জন্য যথেষ্ট নয়, যদি না মানুষের ভিতরটা সুন্দর হয়। মানুষের ভিতর সুন্দর হয় তাওবা ও আল্লাহমুখী হওয়ার মাধ্যমে’ (লাতায়িফুল মাআরিফ)।

দুই. পবিত্র রাতে নামাজ আদায় ও ইবাদত করা : রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কদরের রাতে ইবাদত ও নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে নেকির আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (সহিহ বুখারি)।

তিন. আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা : হজরত আয়েশা (রা.) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রসুল! আমি যদি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোনটি, তাহলে আমি সে রাতে কী বলব?

তিনি বলেন, ‘তুমি বলো, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, দয়ালু, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন’ (সুনানে তিরমিজি)।

চার. বিজোড় রাতে ইবাদতে মগ্ন থাকা : লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানে শেষ দশকের বিজোড় রাতে ইবাদতে মগ্ন থাকা উত্তম। কেননা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো’ (সহিহ বুখারি)।

আল্লাহতায়ালা প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উসিলায় সবাইকে লাইলাতুল কদরের বরকত ও আল্লাহতায়ালার অপার অনুগ্রহ দান করুন। আমিন।

লেখক : খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর