আলহামদুলিল্লাহ! পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারক বিদায়ের পথে। রোজার আধ্যাত্মিক পরিশোধনের মাধ্যমে প্রতিটি মুসলমানের আত্মা সব রকমের পাপ পঙ্কিলতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করেছে। নিষ্কৃতি পেয়েছে সব রকমের অহংকার, তাকাব্বুরী, ক্ষমতার দাপট ও সম্পদের বড়ত্ব থেকে। ধনী-গরিব, সবল-দুর্বল ও উঁচু-নীচুর বৈষম্যতার দেয়াল ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেছে। অভাব-অনটনে, অর্ধাহারে-অনাহারে, দারিদ্র্যের কশাঘাতে পিষ্ট, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর ব্যক্তির হাহাকার যেন আজ সবার অনুভূত। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এ সেøাগান যেন আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। যেন সবাই এক আল্লাহর বান্দা, এক মালিকের গোলাম। সবকিছুর দাতা মহান আল্লাহ, তিনি বান্দাকে দিতেও পারেন নিতেও পারেন। সব কৃতিত্ব ও প্রশংসার মালিক মহান আল্লাহতায়ালা। এক মাস সিয়াম সাধনার পর তারই পারিশ্রমিক নেওয়ার জন্য সব গোলাম আনন্দচিত্তে ঈদগাহে উপস্থিত হবে। কিন্তু একজন গরিব মুসলিমের পক্ষে সে আনন্দ করার ক্ষমতা কোথায়। তাই নির্দেশ হলো- ধনী মুসলিমগণ তার গরিব মুসলিম ভাইয়ের মুখে হাসি ফোটাও। তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দাও। বুকে টেনে নিয়ে তোমার আনন্দের সঙ্গে তাকেও মিলিয়ে নাও। তবেই তুমি প্রভুর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হবে। মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলা হয়- সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা তার বর্তমান বাজারদর পরিমাণ টাকা বা ব্যবসার পণ্যকে। এ পরিমাণ সম্পদের মালিক এক বছর অতিক্রান্ত হলে তার ওপরে জাকাত ফরজ হয়। তার ৪০ ভাগের একভাগ জাকাত আদায় করতে হয়। তবে উপরোল্লিখিত চার ধরনের সম্পদ ব্যতীত যদি কোনো ব্যক্তির বাড়ি, গাড়ি, জায়গা-জমিন ও অন্যান্য সম্পদসহ ঘরের প্রয়োজন অতিরিক্ত দামি আসবাবপত্র ও মূল্যবান সামগ্রীও যদি থাকে এবং তা ওই নিসাব পরিমাণ সম্পদের বাজারদর মূল্য পরিমাণ হয় তাহলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। মোটকথা যার ওপর জাকাত ফরজ হয়, তার ওপর সদকাতুল ফিতরও ওয়াজিব হয়। তবে সদকাতুল ফিতরের সম্পত্তির ওপর জাকাতের শর্ত প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ এরূপ সম্পত্তি বর্ধনশীল এবং এক বছর অতিবাহিত হওয়াও জরুরি নয়। গম, গমের আটা, জব, জবের আটা এবং খেজুর ও কিসমিস দ্বারা ফিতরা আদায় করা যায়। গম বা গমের আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে অর্ধ সা (১ কেজি ৬৫০ গ্রাম) এবং জব বা জবের আটা কিংবা খেজুর দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম দিতে হবে। রুটি, চাল বা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা দিতে হলে মূল্য হিসেবে দিতে হবে। কিসমিস দিয়ে ফিতরা আদায় করলেও ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম দিতে হবে। দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা উত্তম। আর অন্য সময় মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা উত্তম। যেহেতু গরিবের বিভিন্ন প্রকারের অর্থের প্রয়োজন রয়েছে, সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো প্রয়োজন জানা না থাকলে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করাই সর্বোত্তম। এ বিষয়ে ফকিহগণের ঐকমত্য রয়েছে। সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার সময় হলো ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিক হওয়ার পর। অতএব, সুবহে সাদিক হওয়ার আগেই কেউ মারা গেলে তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হবে না। সুবহে সাদিকের পর কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করলে কিংবা কেউ মুসলমান হলে তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হবে।
লেখক : ইমাম ও খতিব : কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা