বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

অনন্য হুমায়ুন কবির

অনন্য হুমায়ুন কবির

রাজনীতিবিদ, লেখক, দার্শনিক হুমায়ুন কবির ১৯০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলার কোমরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম হুমায়ুন জহিরউদ্দিন আমির-ই-কবির। পিতা কবিরউদ্দিন আহমদ ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। হুমায়ুন কবিরের পিতা ও পিতামহ দুজনেই ছিলেন ‘খান বাহাদুর’ উপাধি ধারী। হুমায়ুন কবির কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। অধ্যয়ন শেষে সরকারি চাকরিতে না গিয়ে শিক্ষকতার মানসে ১৯২৮ সালে বৃত্তি নিয়ে অক্সফোর্ড যান। সেখানে একসেটার কলেজে ‘মডার্ন গ্রেটস’ অর্থাৎ  দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায়ও তিনি অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেন। অধ্যয়নের পাশাপাশি তিনি নিজেকে একজন তুখোড় ছাত্রনেতা ও বাগ্মীরূপে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৩২ সালে রাধাকৃষ্ণনের আমন্ত্রণে হুমায়ুন কবির অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের প্রভাষকরূপে যোগদান করেন। এক বছর পরে তিনি চলে আসেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যচর্চা ও ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের  কৃষক-প্রজা পার্টির পক্ষ থেকে তিনি দীর্ঘ দশ বছর (১৯৩৭-৪৭) বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ছিলেন।

১৯৪৬ সালে হুমায়ুন কবির কংগ্রেস সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদের আমন্ত্রণে তাঁর একান্ত সচিবরূপে যোগদান করেন। পরে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে মাওলানা শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে তিনি পর্যায়ক্রমে যুগ্ম শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৫৬ সালে তিনি ভারতীয় রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু তাঁকে কেন্দ্রীয় সিভিল এভিয়েশনের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত করেন এবং ১৯৫৮ সালে মাওলানা আজাদের মৃত্যুর পর তাঁকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৯ সালে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গের বশির হাট থেকে লোকসভার নির্বাচিত সদস্য ছিলেন।

নেহেরুর মৃত্যুর পর লালবাহাদুর শাস্ত্রীর প্রধান মন্ত্রিত্বের সময় হুমায়ুন কবির পুনরায় শিক্ষামন্ত্রীর পদ লাভ করেন। শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে মাদ্রাজের গভর্নর-পদ দিতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। লোকসভার সদস্য-পদ এবং কংগ্রেস দল ত্যাগ করে বাংলা কংগ্রেস পার্টি গঠন তাঁর পরবর্তী চার বছরের রাজনৈতিক কর্মকান্ড। কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল (১৯৬৭)। হুমায়ুন কবিরের রাজনৈতিক জীবনে ভারতের শিক্ষা ও সংস্কৃতি নীতি চূড়ান্তরূপ লাভ করে।

সাহিত্যক্ষেত্রে প্রথমত কবি হিসেবেই হুমায়ুন কবিরের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তিনটি কাব্যগ্রন্থ স্বপ্নসাধ (১৯২৮), সাথী (১৯৩০) ও অষ্টাদশী (১৯৩৮) প্রকৃতি ও প্রেমবিষয়ক তাঁর স্বচ্ছ রোমান্টিক মানসের পরিচয় বহন করে। বন্ধুদের মতো ইউরোপীয় ধারার আধুনিকতার চর্চা না করে তিনি কাব্যক্ষেত্রে রবীন্দ্র ঐতিহ্যের অনুসরণ করেন। ১৯৪৩ সালে উর্দু থেকে মসদ্দসে হার্লি-এর বাংলা অনুবাদ তাঁর অন্যতম কৃতিত্ব।

সুদীপ্ত সুজন

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর