বুধবার, ৩ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

নদনদীর নাব্য

ড্রেজিং দরকার, প্রহসন নয়

বাংলাদেশকে বলা হয় নদনদী, খাল-বিল হাওর-বাঁওড়ের দেশ। এক সময় দেশের এক অঞ্চল থেকে অপর অঞ্চলে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম ছিল নৌপথ। কালের বিবর্তনে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নৌপথ গুরুত্ব হারিয়েছে। সড়ক ও রেলপথের কারণে নৌপথের গুরুত্ব কমে যাওয়া অস্বাভাবিক। তবে উৎকণ্ঠার কারণ হলো দেশের নদনদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ার ঘটনা। ১৯৬৭ সালের পর ৪৩ বছরে দেশের ২০ হাজার কিলোমিটারের বেশি নৌপথ হারিয়ে গেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১৪ বছরে নৌপথ পুনরুদ্ধারে বিশেষ গুরুত্ব দিলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি সামান্যই। একদিকে চলছে ড্রেজিং, অন্যদিকে ভাঙন আর উজান থেকে আসা পলিতে ভরছে নদী। নদীখেকোদের দখল-দূষণেও নদী অস্তিত্ব হারাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ড্রেজিং, নৌপথ রক্ষায় নামমাত্র বাজেট বরাদ্দ, আন্তসীমান্ত নদীগুলো থেকে পানির ন্যায্য হিস্সা না পাওয়া ও একক কোনো প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নিয়ে নদী নিয়ে কাজ না করায় নদী বাঁচানো যাচ্ছে না। আর নদী মরলে দেশের কৃষি ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়বে। ভয়াবহ খরার মুখে পড়বে দেশ। ১২২ কিলোমিটার খরস্রোতা করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল প্রাচীন পুন্ড্রনগরী। পুন্ড্র সভ্যতার সঙ্গে এখন ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিতে চলেছে করতোয়া নদীও। নদীটির ৪০ কিলোমিটারই এখন মরা নদী। বাকি অংশ কোনো রকমে টিকে আছে। এক সময় ঢাকা থেকে স্টিমারে চড়ে মানুষ যেত চাঁদপুর, বরিশাল, মোংলা হয়ে খুলনা পর্যন্ত। এখন সেটি ইতিহাস।  মোংলায় যেখানে ছিল স্টিমার ঘাট সেখানে গড়ে উঠেছে থানা, ঈদগাহ, খেলার মাঠ, রেস্তোরাঁসহ নানা স্থাপনা। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সারা দেশের নৌপথের এক সাধারণ চিত্র। দেশবাসীর ট্যাক্সের টাকা খরচ করে ড্রেজিং করা হলেও নদী থেকে তোলা বালি নদীতে ফেলায় তা প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। নদনদী রক্ষায় আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতার বদলে জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে প্রতিটি এলাকায় বুদ্ধিবৃত্তির সঙ্গে জড়িত বিশিষ্টজনদের নিয়ে নদীরক্ষা কমিটি গড়তে হবে। নিতে হবে ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ। তা যাতে প্রহসন না হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর