মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

সর্বোচ্চ ইবাদত নামাজ

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

সর্বোচ্চ ইবাদত নামাজ

ইতোমধ্যে মুসলিম বিশ্ব অতি গুরুত্ব ও মর্যাদার সঙ্গে পবিত্র রমজান মাস অতিবাহিত করেছে। পালন করেছে পরম নিষ্ঠার সঙ্গে রমজানের সিয়াম সাধনা। এ মাসের রোজা ও যাবতীয় ইবাদত ছিল অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। যারা এ সুযোগ গ্রহণ করেছে তাদের জন্য রয়েছে অনেক সুসংবাদ।

এ পরিসরে একটি প্রয়োজনীয় বিষয় আলোকপাত করব। রোজা এবং রমজান মাস অবশ্যই অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। ইসলামী শরিয়তে আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত হলো নামাজ। রোজা মুসলমান প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ নরনারীর ওপর ফরজ। এভাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করাও ফরজ। বরং একজন মুসলমান হিসেবে ইমান গ্রহণের পর সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রথম ও প্রধান ইবাদত হলো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়। দেহে জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোনো ব্যক্তির জন্য কোনো অবস্থায় নামাজ না পড়ার বিধান নেই। জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির অসুস্থ অবস্থায়ও নামাজ আদায় করতে হবে।

আল কোরআনে মহান আল্লাহ নামাজের আলোচনা ৮২ বার করেছেন। কোরআনে কারিমের প্রারম্ভিকতায় তিনি ঘোষণা করেন, ‘এটা এমন এক কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই, পথপ্রদর্শক মুত্তাকিনদের জন্য। যারা অদৃশ্যে ইমান আনে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা আল বাকারাহ-২, ৩)

তিনি ইরশাদ করেন, ‘আমার বান্দাদের বলে দিন যারা ইমান গ্রহণ করেছে, তারা নামাজ কায়েম রাখুক এবং আমার দেওয়া রিজিক থেকে গোপনে এবং প্রকাশ্যে ব্যয় করুক ওই দিন আসার আগে, যেদিন কোনো বেচাকেনা নেই এবং বন্ধুত্বও নেই।’ (সুরা ইবরাহিম-৩১)

রসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘পরকালে সর্বপ্রথম মুসলমানদের কাছে তার নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। যদি তা ঠিক হয় তাহলে অবশ্যই সে সফল হবে, মুক্তি পাবে। আর নামাজের হিসাব বিফল হলে সে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসে পরিণত হবে।’ (নাসায়ি, আহমাদ)

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মুসলিম ও অমুসলিমের মধ্যে পার্থক্য ফুটে ওঠে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘একজন মুসলিম ব্যক্তি এবং শিরক, কুফুরের মধ্যে পার্থক্যকারী হচ্ছে নামাজ পরিত্যাগ করা।’ (সহিহ মুসলিম)

নামাজের মাধ্যমে বান্দা সরাসরি তার প্রভুর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায়। তাই নামাজ আদায় করা মহান আল্লাহর নৈকট্যলাভের শ্রেষ্ঠ উপায়। আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘হে মুমনিগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য পার্থনা কর। (সুরা আল বাকারাহ-১৫৩)

নামাজের অন্যতম একটি সৌন্দর্য হচ্ছে, নামাজের সময় সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই একই কাতারে দাঁড়িয়ে এক আল্লাহর কর্তৃত্বের কাছে মাথা নত করে। নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, যারা সঠিকভাবে ও মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায় করে, তাদের নামাজ তাদের অশ্লীল ও  মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।

মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘আপনি নামাজ কায়েম করুন! নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আল আনকাবুত-৪৫)

রসুলুল্লাহ (সা.) ইন্তেকালের আগে উম্মতের জন্য বিশেষ অসিয়তেও নামাজের গুরুত্বারোপ করেছেন, তখনো তিনি পরম আকুতিপূর্ণভাবে ও ব্যাকুল উদ্বিগ্ন হৃদয়ে বলছিলেন, সালাত, সালাত (নামাজ, নামাজ)।

একজন মুসলমানের জীবনে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হলো নামাজ। তাই ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজজীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন সর্বোপরি নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং নামাজ সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠার প্রতি আন্তরিক হওয়া আমাদের ইমানি দায়িত্ব।

              

  লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর