বাংলাদেশ উন্নত মানের চিকন চালের জন্য এতকাল ছিল পরনির্ভরশীল। এ জন্য ভারতীয় বাসমতী চালের ওপর নির্ভর করতে হতো। দেশে একই মানের উচ্চ ফলনশীল বিনা-২৫ ধান শুধু দেশের চাহিদা পূরণ করবে না, উন্নত মানের চাল আমদানির খরচ থেকে দেশ রক্ষা পাবে। বিনা-২৫ ধান ভারতীয় বাসমতী চালের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এটি ভারতীয় বাসমতীর চেয়ে সরু এবং উচ্চ ফলনশীল। বিনা-২৫ ধানের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি অন্যান্য ধানের চেয়ে অনেক আগে কাটা যায়। বিনা-২৫ এর চারা লাগানোর ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ধান কাটতে পারে কৃষক। প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদন হয় ২৪ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত। ফলে পরীক্ষামূলক চাষে মাঠে গিয়েই বিনা-২৫ ধান বাজিমাত করেছে। সরু এবং অতি লম্বা হওয়ায় এর দামও প্রচলিত চালের দামের চেয়ে ঢের বেশি, যা ধান আবাদে কৃষকদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করছে। সবচেয়ে আশার বিষয় হলো- জাতটি আমাদের দেশে ভারতীয় বা পাকিস্তানের বাসমতী চালের বিকল্প পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ফলে শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশি সরু এবং লম্বা চাল রপ্তানিতে নতুন আশা জাগাচ্ছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ ৮ বছরের গবেষণার ফল বিনা-২৫ ধান। এবারই প্রথম বোরো মৌসুমে মাঠপর্যায়ে এই ধানের চাষ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। যেখানেই এই ধান চাষ করা হয়েছে সেখানেই আশাতীত ফলন মিলেছে। বিনা-২৫ ধানের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- ঝড় বৃষ্টি বা প্রচ- বাতাসে হেলে পড়লেও রোদের ছোয়ায় দু-তিন দিনের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। বাংলাদেশের মতো ঝড় বৃষ্টি বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের দেশে এ ধান সে অর্থে আশীর্বাদ। বিঘাপ্রতি ফলন বেশি হওয়ায় ধান চাষিরা বিনা-২৫ ধান চাষে উৎসাহী হবে। চলতি বছর দেশের যেসব এলাকায় এ ধান চাষ হয়েছে প্রতিটি এলাকার অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে বিনা-২৫। বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করার ক্ষেত্রে এ ধান অবদান রাখবে বলে আমরা আশা করছি।