সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ময়ূর সিংহাসন

ময়ূর সিংহাসন

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি সিংহাসন তৈরি করেছিলেন ভারতবর্ষের মুঘল সম্রাট শাহজাহান। স্বর্ণ, দামি দামি রত্নসহ হীরা খচিত ছিল সেই সিংহাসনে। ফারসিতে একে বলা হতো ‘তখত-ই-তাউস্থ। তখত মানে সিংহাসন, আর তাউস শব্দের অর্থ হলো ময়ূর। সিংহাসনের পেছনে অনিন্দ্যসুন্দর পেখম ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি ময়ূরের ছবি থাকায় এটিকে তখত-ই তাউস বা ময়ূর সিংহাসন বলা হয়। ময়ূর সিংহাসন ছিল মূল্যবান স্বর্ণ, হীরা ও দুর্লভ মরকত মণি খচিত।

এই সিংহাসনের ৪টি পায়া ছিল নিরেট স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত। ১২টি মরকত মণি স্তম্ভের ওপর চন্দ্রতাপ ছাদ আচ্ছাদন করা হয়। ছাদের চারদিকে মিনা করা মণি-মুক্তা বসানো ছিল। এর ভিতরের দিকের সবটাই মহামূল্যবান চুন্নি ও পান্না দ্বারা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যেক স্তম্ভের মাথায় মণি-মাণিক্য খচিত এক জোড়া ময়ূর মুখোমুখি বসানো হয়েছিল। প্রতি জোড়া ময়ূরের মধ্যস্থলে একেকটি মণি-মাণিক্য নির্মিত গাছ ছিল। যা দেখলে মনে হতো, ময়ূর দুটি ঠুকরে গাছের ফল খাচ্ছে।

এই সিংহাসনটির এমন কোনো স্থান ছিল না, যেখানে মণি-মুক্তা ছিল না। বিভিন্ন নকশার মধ্যকার ফাঁকা অংশটুকুও ভরাট করা হয় ক্ষুদ্রাকৃতির হীরা দিয়ে। হীরা ও পান্নার কারুকাজ বিশিষ্ট ৩টি সিঁড়ির সাহায্যে সিংহাসনে ওঠা-নামার ব্যবস্থা ছিল। সিংহাসনের ওপরের চাঁদোয়ার চার কোণে বসানো হয়েছিল সারিবদ্ধ মুক্তা। চাঁদোয়াটির নিচেও ছিল হীরা আর মুক্তার বাহারি নকশা। এ ছাড়াও বিরাট আকারের চুনি বসানো ছিল ময়ূরের বুকে। সেখান থেকে ৫০ ক্যারেটের একটি হলুদ রঙের মুক্তা ঝুলে থাকত। নীল রঙের মণি দিয়ে সাজানো হয়েছিল ময়ূরের লেজ। সিংহাসনটিতে বসার জন্য ভিন্ন ভিন্ন দিকে অগণিত মণি-মুক্তা শোভা পেত। ১৫৮৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে পারস্যের মহামান্য সম্রাট আব্বাস তৎকালীন ১ লাখ টাকা মূল্যের একটা হীরা বাদশাহকে উপহার দেন। সম্রাট শাহজাহান পিতার এই উপহার প্রাপ্ত অত্যন্ত দামি হীরাটিও সিংহাসনে যোগ করেন। ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সম্রাট মোহাম্মদ শাহের শাসনামলে, পারস্য সম্রাট নাদির শাহের ভারতবর্ষ অভিযানকালে লুট করে নিয়ে যান সিংহাসনটি। এই ময়ূর সিংহাসনের কারণেই ১৭৪৭ সালে তিনি প্রতিপক্ষের হাতে নির্মমভাবে খুন হন। এরপরই আসল ময়ূর সিংহাসনটি হারিয়ে যায়। নাদির শাহের মৃত্যুর ফলে পারস্যে সৃষ্ট গোলযোগে হয়তো এটি চুরি  হয়েছিল; নয়তো এর বিভিন্ন অংশ খুলে আলাদা করা হয়েছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর