বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

পবিত্র হজে আছে শান্তিশৃঙ্খলার আদর্শ

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

পবিত্র হজে আছে শান্তিশৃঙ্খলার আদর্শ

শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম। ঐক্য, সোহাগ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ স্বর্গীয় সমাজ প্রতিষ্ঠার সুদৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে অবতরণ হয়েছে এ ধর্ম। এ ধর্মের অমিয় পরশে দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মতো দাঁড়াতে পারে একটি পথহারা জাতি। একমাত্র ইসলামই সর্বস্তরের মানুষের ইহ ও পরকালের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। উপহার দিতে পারে আনন্দময় সুখী জীবন, বিনয়ী ও আত্মত্যাগী মানুষ, শ্রেণিহীন বৈষম্যহীন নির্মল স্বচ্ছন্দ সমাজ। গড়তে পারে দ্বন্দ্বমুখর এ বিশ্বে সৌভ্রাতৃত্বের অকৃত্রিম বন্ধন, শান্তিসুখের নীড়। ইসলামের প্রতিটি বিধান মানবতার উজ্জ্বল প্রতীক। সুখশান্তির নির্মল পাথেয়। ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি। হজ হলো ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ। হজ পালন করা মহান আল্লাহর ইবাদত। এতে রয়েছে ইহ ও পরকালের চিরকল্যাণ। রয়েছে সামাজিক রীতিনীতি ও সুখস্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপনের পরম আদর্শ। ঐক্য সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ স্বর্গীয় সমাজ প্রতিষ্ঠার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। মহান আল্লাহ কোরআনে কারিমে বলেন, ‘যে লোক হজের প্রতি পূর্ণ নিয়ত করবে তার জন্য স্ত্রীসহবাস ও আনুষঙ্গিক কিছু জায়েজ নেই। যাবতীয় অশোভন কাজকর্ম এবং ঝগড়া-বিবাদ করাও হজ পালনকালে নিষিদ্ধ।’ (সুরা বাকারা : ১৯৭) মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে, আর সে হজ পালনকালে নারী আসক্তি ও যাবতীয় অশুভ কাজকর্ম থেকে বিরত থাকবে ওই ব্যক্তি মায়ের গর্ভ থেকে নিষ্পাপ ভূমিষ্ঠ হওয়ার মতো গুনাহমুক্তভাবে ফিরে আসবে।’ (সহিহ বুখারি, হা. ১৫২১, সহিহ মুসলিম, হা. ১৩৫০) বর্তমান বিশ্বে হজের চিত্র হলো লাখ লাখ মানুষের বিশাল সমাবেশ। নারী-পুরুষের অপরিমিত ভিড়, অবর্ণনীয় যানজট সেখানে সার্বক্ষণিক বিষয়। আরাফার ময়দানে অবস্থান, মিনায় পাথর নিক্ষেপ এবং কাবাঘরে তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ায় সায়ি মানুষের প্রচণ্ড ভিড় ঠেলেই সম্পন্ন করতে হয়। এটা কি অনাবিল শান্তির পরিবেশ? ঝগড়া নেই, বিবাদ নেই, ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কি নেই। নেই অন্যায় উগ্রতা। অবাধ সেই নারী-পুরুষের বিশাল সমাবেশে নারী কেলেঙ্কারি নেই। নেই ইভ টিজিংয়ের মতো সামাজিক কোনো মহামারি।

হজের মাধ্যমে মুমিনরা আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর নির্দেশিত ধর্মীয় চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়। বিশ্বের সব অঞ্চলের মুসলমানের অংশগ্রহণে একত্রে ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ সৃষ্টি হয়; যা বিশ্বভ্রাতৃত্ব স্থাপনে অনন্য দৃষ্টান্ত। হজ মুসলিম উম্মাহর বর্ণগত, ভাষাগত ও সব ধরনের বৈষম্য দূর করে সৌহর্দ্যপূর্ণ আচরণ শিক্ষা দেয়। হজ পালনকালে পারস্পরিক খোঁজখবর আদান-প্রদানের সুযোগ হয়। হজের শান্তিপূর্ণ আদর্শ এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ শিক্ষা থেকে আমাদের সমাজ আজ দূরে, বহু দূরে। অত্যাচার, মারামারি, হানাহানি, খুন-সন্ত্রাস, হিংসা-বিদ্বেষ আজকের সমাজের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধৈর্য, সহনশীলতা ও সম্প্রীতিপূর্ণ একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের জন্য আমরা হজ পালনের বিধান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। ঐক্য, সোহাগ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ স্বর্গীয় সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন যারা বুকে ধারণ ও লালন করেন, হজের দৃশ্য তাদের জন্য প্রেরণা ও অনুপ্রেরণার উৎসাহ দেয়। শ্রেণিহীন, বৈষম্যহীন, বিবাদমুক্ত সুখশান্তিময় পরিবেশ গড়ার পাথেয় হবে। সব পরীক্ষায় ইবরাহিম (আ.) শতভাগ সাফল্য লাভ করেছেন। সাফল্যের স্বীকৃতি ও সনদ আল্লাহতায়ালা কোরআনে ঘোষণা করেছেন। সাফল্যের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ তাঁকে মানবসমাজের নেতৃত্ব প্রদান করেছেন।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর