বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
ইতিহাস

আলজেরিয়ায় গণহত্যা

ফরাসিরা নিজেদের দাবি করে দুনিয়ার সবচেয়ে সংস্কৃতিমান জাতি। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রবক্তা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতেও তারা ভালোবাসে। অথচ এই ফরাসিরা অন্য ইউরোপীয়দের মতো বিভিন্ন দেশে ছলেবলে কৌশলে উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল। নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতেও ফরাসিদের জুড়ি ছিল না। তাদের চোখে উপনিবেশের বাসিন্দারা ছিল ‘ইতরপ্রাণী’। নিজেদের তারা ভাবত অসভ্য, অর্ধসভ্য মানুষের ত্রাতা। ফরাসি বুদ্ধিজীবীরাও এ তত্ত্ব ফেরি করেছেন। ফরাসি ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিক অ্যালেক্সিস দ্য তকিউভিলে ১৮৩৫ সালে প্রকাশিত তাঁর বহুল বিতর্কিত ‘উবসড়পৎধপু রহ অসবৎরপধ’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘আমরা যদি আমাদের চিন্তাধারার প্রতি লক্ষ করি, আমাদের প্রায় এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় যে, ইউরোপীয়রা মানব জাতির এক ভিন্ন গোত্রভুক্ত সম্প্রদায়, যেমন ইতরপ্রাণীর বিপরীতে মানব সম্প্রদায়। সে তার নিজের প্রয়োজনে তাদের বশীভূত করে এবং যখন তা করতে ব্যর্থ হয় তখন ইতরদের বিনাশ সাধন করে।’

এ বিনাশের মাত্রাটা বেশি ছিল আফ্রিকা মহাদেশে। আফ্রিকার অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদ কুক্ষিগত করতে হেন অপকর্ম নেই যা করেনি ইউরোপীয়রা। তাদের কাছে আফ্রিকার মানুষ ছিল ওরাং ওটাং জাতীয় জংলি। ইউরোপের নেতৃস্থানীয় দেশ ফ্রান্স উনিশ শতকের গোড়ায় উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে। বর্তমানে ফ্রান্সের আয়তন ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৮৪৩ বর্গ কিলোমিটার। অথচ ১৯৬০ সাল পর্যন্ত এ দেশটির অধিভুক্ত এলাকা ছিল ১ কোটি ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৭ বর্গকিলোমিটার। এর বড় অংশ ছিল আফ্রিকা মহাদেশে। ১৮৩০ সালে আফ্রিকা দখলের মধ্য দিয়ে ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় ফরাসিরা। ফরাসি শাসনে নির্মম নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয় আলজেরীয়রা। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ১৩০ বছর ধরে তারা আলজেরিয়া শাসন করে। কথিত অসভ্য ও অর্ধসভ্য আলজেরীয়দের ১৩০ বছরের ‘সভ্যতার মিশনে’ তারা ২০ লাখের বেশি মানুষকে হত্যা করে। ফরাসিরা আলজেরিয়া দখলের সময় প্রতিরোধের সম্মুখীন হলেই হিংস্র মূর্তিতে প্রতিরোধকারীদের মোকাবিলা করেছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ফরাসিরা তাদের রক্তপিপাসু চেহারায় বদল আনে। প্রতিশ্রুতি দেয় জয়ী হলে উপনিবেশগুলোর কল্যাণকে তারা প্রাধান্য দেবে। আলজেরীয়রা অনেক বেশি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জেনারেল শার্ল দ্য গলের আহ্বানে আলজেরিয়ার তরুণরা ফ্রান্সের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। ১৯৪৫ সালে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে ফ্রান্স ও মিত্রবাহিনী জয়ী হয়। স্বপ্ন দেখা শুরু করে আলজেরীয়রা। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বিজয় উদযাপনের জন্য ১৯৪৫ সালের ৮ মে আলজেরিয়ার সেফিত শহরে জমায়েত হয় তরুণরা। সেখানে সাল বোউজিত নামে এক কিশোর স্বাধীন আলজেরিয়ার পতাকা নিয়ে আসে। তা দেখে আলজেরীয়দের অনেকেই স্বাধীনতার পক্ষে স্লোগান দেওয়া শুরু করে। আলজেরীয়রা ভেবেছিল তারা যেহেতু ফ্রান্সের পক্ষে লড়েছে সেহেতু ফরাসিরা তাদের এ দাবিকে সম্মান জানাবে। কিন্তু ঘটে বিপরীত। এ সময় সেখানে জেনারেল দুঁভালের নেতৃত্বে ফরাসি সেনারা গুলি চালালে ওই কিশোর নিহত হয়। পুরো এলাকায় তাণ্ডব শুরু করে ফরাসি সেনারা। ওই দিন সেফিতে ১ হাজার আলজেরীয় নিহত হয়।     

অপূর্ব আজাদ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর