বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

চন্দ্রনাথ পাহাড়

চন্দ্রনাথ পাহাড়

বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডে রয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান চন্দ্রনাথ পাহাড়। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের চতুর্দশী তিথিতে এখানে তিন দিনব্যাপী বসে ঐতিহ্যবাহী শিব চতুর্দশী মেলা। তবে মেলা তিন দিন হলেও এর স্থিতিকাল থাকে তিন চার সপ্তাহ। প্রতি বছর এ মেলায় দেশ-বিদেশ থেকে লাখ লাখ পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটে। চন্দ্রনাথের মন্দিরকে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিসেবে ভাবা হয়।

সীতাকুণ্ড বাজার থেকে পূর্বদিকে সাড়ে ৩ কিলোমিটার পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত তীর্থস্থান চন্দ্রনাথ মন্দির। সমতল ভূমি থেকে এই শিব মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ১৩০০ মিটার।

চন্দ্রনাথ পাহাড় হিমালয় থেকে বিচ্ছিন্ন পূর্বাঞ্চলীয় অংশ। এ পাহাড় হিমালয়ের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ঘুরে ভারতের আসাম এবং ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্য দিয়ে ফেনী নদী পার হয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে মিশেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সত্যযুগে দক্ষ যজ্ঞে সতীমাতা দেহ ত্যাগ করলে মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। তখন শিবকে শান্ত করতে বিষ্ণুদেব সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ৫১ খণ্ডে ছেদন করেন। তার একটি অংশের মধ্যে সতীর বাম হস্ত পড়েছিল এই সীতাকুণ্ডে। ৮০০ বছর আগে গৌরের বিখ্যাত আদিশূরের বংশধর রাজা বিশ্বম্ভর সমুদ্রপথে চন্দ্রনাথে পৌঁছার চেষ্টা করেন। সে সময় ত্রিপুরার শাসক রাজা ধন মানিক্য এ মন্দির থেকে শিবের মূর্তি তাঁর রাজ্যে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। প্রচলিত আছে, নেপালের এক রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পৃথিবীর পাঁচ কোণে পাঁচটি শিব মন্দির নির্মাণ করেন। এর মধ্যে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের শিব মন্দির অন্যতম।

পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, এখানে মহামুনি ভার্গব বসবাস করতেন। সত্যযুগে অযোদ্ধার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র তার বনবাসের সময় এখানে এসেছিলেন। রাম সীতার বনবাস-এর কিছু চিহ্ন পাওয়া যায় সীতাকুণ্ডে। তারা আসবেন জানতে পেরে মহামুনি ভার্গব এখানে স্নানের জন্য তিনটি কুণ্ড বা কুয়া সৃষ্টি করেন। এরপর রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতা এই কুণ্ডে স্নান করেন। এরপর থেকেই স্থানের নামকরণ করা হয় সীতাকুণ্ড। যেটিতে রাম স্নান করেছিলেন সেটির নামকরণ করা হয় রামকুণ্ড। রয়েছে লক্ষণ কুণ্ড ও রামের ভক্ত হনুমান জির মন্দির। তবে বর্তমানে কুণ্ডগুলো শুকিয়ে গেছে। ঐতিহাসিক কাল থেকে ইটের দেয়ালে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে এসব পৌরাণিক স্থান।

এই শিব মন্দির কখন এ স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা কোনোভাবে জানা সম্ভব নয়। তবে সতীর খণ্ড দেহ যেসব স্থানে পড়েছিল সেসব স্থানে পরম বৈষ্ণব শিব সদা বিরাজমান বলে বিশ্বাস করা হয়। পৌরাণিক স্মৃতিবিজড়িত অসংখ্য মঠ-মন্দির আছে এই পাহাড়ে। এখানে রয়েছে স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির যা স্বয়ং নিজেই ভূ অর্থাৎ মাটি থেকে উৎপত্তি হয়েছিল। এটিকে ক্রমদিশ্বর স্বয়ম্ভুনাথ শিব মন্দিরও বলা হয়ে থাকে। মূলত এই মন্দির দর্শন করে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আরোহণ করে তীর্থযাত্রীরা। এ ছাড়া চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পূর্বপাশে গহিন অরণ্যে রয়েছে পাতাল কালীবাড়ি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর