রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

অসুস্থদের জন্য হজরত বদিউজ্জামান নূরসীর নসিহত

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

অসুস্থদের জন্য হজরত বদিউজ্জামান নূরসীর নসিহত

বান্দাকে পরীক্ষার জন্য খোদায়ী যত পদ্ধতি আছে ‘অসুস্থতা’ তার অন্যতম। কিছু কিছু মানুষের অসুখ লেগেই থাকে। কেউ কেউ হঠাৎ বড় অসুখের খবরে মুষড়ে পড়েন। হতাশার অন্ধকার জীবনের আশার প্রদীপগুলো একে একে নিভিয়ে দেয়। কিন্তু যাদের কলব জিন্দা তারা অসুখ বিষয়টিকে দেখেন অন্য চোখে। তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা বদিউজ্জামান সাঈদ নূরসী ছিলেন তেমনই একজন কলব জিন্দা মানুষ। অসুস্থ রোগীদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তিনি লিখেছেন ২৫টি নসিহত। এগুলো তিনি পেয়েছেন কাশফের হালতে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নসিহত পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি। প্রথম উপদেশে নূরসী বলেন, হে নিরুপায় অসুস্থ ভাই! মন খারাপ কর না। ধৈর্য হারাইও না। গভীরভাবে ভাবলে বুঝতে পারবে তোমার এ অসুস্থতা আসলে অসুস্থতা নয়, আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত। ভেবে দেখ! জীবন একটা মূলধন। যা বরফের মতো দ্রুত গলে যাচ্ছে। যে ব্যক্তি আনন্দ-সুখে আছে, সে জীবনের মানে বোঝার সুযোগ পায় না। হাসতে খেলতে জীবন-যৌবন শেষ করে ফেলছে। কিন্তু তোমার তো সে ব্যস্ততা নেই। রোগের নেয়ামতে আছে অফুরন্ত সময়। জীবন নিয়ে ভাবার ফুরসত তোমাকে মাওলার আরও কাছে নিয়ে যাবে। জীবন নামক মূলধন তোমার চোখের পলকে শেষ হয় না। বরং রোগ যন্ত্রণার কারণে জীবন তোমার কাছে অনেক দীর্ঘ মনে হয়। ফলে দীর্ঘ জীবনের মূলধনের মুনাফাও অন্যদের চেয়ে বেশিই পাবে তুমি। নূরসীর দ্বিতীয় উপদেশ- ভেবে দেখ, সুস্থ ব্যক্তি ইবাদত করলে সওয়াব পায়, আর তুমি অসুস্থ হওয়ার কারণে ইবাদত না করলেও সওয়াব পাচ্ছ। অসুস্থ থাকার কারণে জীবন তোমার কাছে দীর্ঘ মনে হয়। আল্লাহ তোমার জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ জীবনের প্রতিফল লিখে রাখছেন। কীভাবে? বিভিন্ন রেওয়াত থেকে জানা যায়, ব্যক্তির এক মিনিটের অসুস্থতা ১ ঘণ্টার ইবাদতের সমান। শোকরিয়ার জজবা অনুযায়ী সওয়াবের প্রতিদান বেশি-কম হয়ে থাকে। তুমি যদি অসুস্থতার জন্য কোনো অভিযোগ না কর, বরং হজরত আইয়ুব নবীর মতো খোদার সিদ্ধান্তে খুশি থাক তাহলে আশা করা যায়, তোমার প্রতি মিনিটের অসুস্থতার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা হাজার মিনিটের ইবাদতের সমান সওয়াব লিখে দেবেন।

তৃতীয় নসিহতে নূরসী বলেন, হে রোগী বন্ধু! এ দুনিয়ার জীবন আমাদের আসল ঠিকানা নয়। প্রতিনিয়তই মানুষ দুনিয়া ছেড়ে আসল বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যাচ্ছে। কিন্তু হায়! অন্যের চলে যাওয়া দেখে আমরা সতর্ক হই না। গুনাহের জীবন ছেড়ে পরকালের প্রস্তুতি নিই না। কেন নিই না? আমাদের যৌবন, সুস্থতা, অর্থবিত্ত আমাদের পরকাল-মৃত্যু ও কবরের কথা ভুলিয়ে রাখে। কিন্তু তুমি রোগের কারণে সর্বক্ষণ মৃত্যু চিন্তায় ডুবে থাক। পাপের কথা তোমার মনে জায়গা পায় না। যেহেতু একজন সুস্থ মানুষ ও তোমার ঠিকানা একই, তাহলে এ দুই দিনের দুনিয়ায় অসুখ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে লাভ কী। বরং আল্লাহর শোকরিয়া আদায় কর তিনি তোমাকে ভালোবেসে সর্বক্ষণিক রিমাইন্ডার তথা অসুস্থতা দিয়েছেন। ফলে আখেরাতের প্রতিযোগিতায় সুস্থ গাফেল মানুষগুলো থেকে তুমি এগিয়ে থাকছ। এটাই আসল সফলতা।

হে মাজুর-অক্ষম ভাই! অসুস্থতা নিয়ে অভিযোগ করার সুযোগই তোমার নেই। তুমি কী নিয়ে অভিযোগ করবে? কার কাছে অভিযোগ জানাবে? এই যে তোমার হাত, তোমার পা, মাথা, হৃৎপিন্ড, রক্ত এককথায় তোমার পুরো দেহ- এর মালিক কি তুমি? যিনি মালিক তার ইচ্ছা হয়েছে তোমাকে অসুখ দিয়েছেন। তিনি চাইলে তো এমনিতেই তোমাকে রোগে ভোগাতে পারতেন। কিন্তু তিনি ওয়াদা করেছেন, এ রোগের বিনিময়ে আখেরাতে তোমাকে অনেক বেশি আনন্দের জীবন দান করবেন। তাহলে তোমার অভিযোগের কোনো সুযোগ আছে কি? নেই। চতুর্থ উপদেশে নূরসী বলেন, হে অসুস্থ বন্ধু! তুমি যদি যুবক হয়ে থাক তাহলে আমি বলব অসুস্থতাই তোমার জন্য আসল সুস্থতা। আমি এক অধম বান্দা হওয়া সত্ত্বেও অনেক যুবক আমার কাছে নিজের অসুস্থতার কথা বলে দোয়া নিতে আসে। আমি খেয়াল করেছি, অসুস্থ যুবকরা সুস্থ যুবকদের তুলনায় বেশি আল্লাহভীরু-ইবাদতগোজার। সুস্থ যুবকরা যেখানে ফরজ নামাজই পড়ে না, অসুস্থরা সেখানে নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়ছে। সুস্থ যুবকগুলো যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মদ আর অশ্লীলতায় কাটিয়ে দেয়, অসুস্থ যুবকরা সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোরআন তেলাওয়াত করে কাটিয়ে দেয়। দোয়া নিতে আসা যুবকদের আমি সান্ত্বনা দিয়ে বলতাম, আমি তোমার অসুখের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু বিশ্বাস কর, তুমি এখন যেভাবে আল্লাহর কথা স্মরণ কর, কবরের ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাক সুস্থ থাকলে এমনটি হয়তো থাকতে না। তাই আমি দোয়া করছি, তোমাকে মাওলার আরও কাছাকাছি না যাওয়া পর্যন্ত যেন অসুস্থতা তোমার থেকে বিদায় না নেয়।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীরসাহেব, আউলিয়ানগর

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর