রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

টঙ্ক আন্দোলন

টঙ্ক আন্দোলন ১৯৪৬ থেকে ’৫০ সালে উত্তর ময়মনসিংহে সংঘটিত কৃষক আন্দোলন। স্থানীয় ভাষায় ‘টঙ্ক’ শব্দটি জমিতে উৎপাদিত পণ্যের আকারে প্রদেয় খাজনাকে বোঝায়। কেন এটাকে টঙ্ক বলা হয় তা স্পষ্ট নয়। প্রথাগতভাবে টঙ্ক রায়তরা প্রতি ১.২৫ একর জমির জন্য ১০ থেকে ১৫ মণ ধান খাজনা দিত। টাকার হিসাবে এটি নগদ খাজনা হারের দ্বিগুণের বেশি। এজন্য টঙ্ক এলাকার রায়তরা অন্য রায়তদের টাকায় প্রদত্ত খাজনার সঙ্গে ধানে পরিশোধ্য খাজনার সমতার জন্য চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু জমিদাররা টঙ্ক রায়তদের সাধারণ রায়ত হিসেবে মেনে নিতে ছিল অনিচ্ছুক। তাদের যুক্তি ছিল টঙ্ক রায়তরা ভূমিদাস নয় বটে, তবে সেজন্য তারা রায়তি অধিকার ও কৃষিপণ্যের বদলে নগদ টাকায় খাজনা দেওয়ার অধিকার পেতে পারে না। ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষকসভা তেভাগা, নানকার, নাচোলসহ অনেক কৃষক আন্দোলন পরিচালনা করেছিল। কৃষকসভার ময়মনসিংহ জেলার কমিউনিস্ট নেতা মণি সিংহ টঙ্ক আন্দোলন সংগঠিত করেন। বিশেষ করে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবর্দী উপজেলায় টঙ্ক ভোগদখল সবচেয়ে বেশি ছিল। এ জায়গাগুলোয় প্রধানত গারো ও হাজং গোষ্ঠীর রায়তরা চাষাবাদ করত। সুসং দুর্গাপুরের জমিদার কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে টঙ্ক কৃষক ছয় দফা দাবিনামা প্রস্তুত করে। তাদের দাবি ছিল টঙ্ক প্রথার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি, টঙ্ক কৃষকের ভূমির অধিকারের স্বীকৃতি, পরগনায় নগদ টাকায় দেয় হারের নিরিখে খাজনা নির্ধারণ, টঙ্ক খাজনার বকেয়া দাবি না করা, জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ও সাম্রাজ্যবাদের উচ্ছেদ। আন্দোলনকারীদের গ্রামগুলোয় পুলিশ চড়াও হলে গ্রামের মানুষ ও কমিউনিস্ট স্বেচ্ছাসেবীরা একজোট হয়ে তাদের প্রতিরোধ করেন। পুলিশ অনেককে গ্রেফতার করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কিছুকালের জন্য কৃষকের আন্দোলন স্তিমিত থাকে। কিন্তু ১৯৪৮ সালের টঙ্ক আন্দোলন আবার জোরদার হয়ে ওঠে এবং ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। পূর্ববঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ বলে সব টঙ্ক কৃষককে তাদের দখলীয় জমির স্বাভাবিক মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর