সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

তারিখ-ই-শেরশাহী

অপূর্ব আজাদ

তারিখ-ই-শেরশাহী একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ। এটি রচনা করেন আব্বাস খান সরওয়ানী নামের একজন আফগান। যিনি মুঘল সম্রাট আকবরের অধীনে সংবাদ লেখক হিসেবে কাজ করতেন। পৃষ্ঠপোষক আকবরের নির্দেশে ইতিহাস প্রণয়নে উদ্যোগী হন। প্রথমে এ ইতিহাস গ্রন্থের নামকরণ করা হয় তোহফাহ-ই-আকবরশাহী এবং তারিখ-ই-শেরশাহী বইটির প্রথম অধ্যায়ের শিরোনাম। তোহফাহ-ই-আকবরশাহী ছিল দিল্লির লোদি ও শূর সুলতানদের বিস্তারিত ইতিহাস। কিন্তু বর্তমানে গ্রন্থটির শুধু তারিখ-ই-শেরশাহী শিরোনামের অংশটি পাওয়া যায়। তারিখ-ই-শেরশাহী এমন এক ব্যক্তিত্ব দ্বারা রচিত যাঁর ছিল শেরশাহের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ ছিলেন। আব্বাস সরওয়ানী তাঁর তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে আরও অনেকের নাম উল্লেখ করেন; যারা আফগান সুলতানদের শাসনকালে উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তারিখ-ই-শেরশাহীতে সমসাময়িক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কথাও রয়েছে। অল্প সময়ের জন্য হলেও আব্বাস খান সরওয়ানী আকবরের অধীনে মুঘল দরবারে সভাসদ ছিলেন। এ সুযোগে তিনি সরকারি দলিল-দস্তাবেজ ও মুঘল গ্রন্থাগার ব্যবহারের সুযোগ পান। তিনি যদিও মুঘল সম্রাটের অধীনে একজন সরকারি বেতনভুক কর্মচারী হিসেবে ইতিহাস রচনা করেন, তবু শেরশাহকে এক আদর্শ শাসক হিসেবে চিত্রিত করতে ও তাঁর বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কার প্রবর্তনের জন্য সাধুবাদ দিতে ভোলেননি। তিনি স্বয়ং একজন আফগান হওয়ায় আফগানদের গোত্রীয় কলহ এবং আমির ওমরাদের হিংসাপরায়ণতা সম্বন্ধে সজাগ ছিলেন। মুঘলদের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে আফগানদের দুর্ভাগ্যের জন্য তিনি একেই দায়ী করেন। হিজরি ৯৯৪ বা ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে তারিখ-ই-শেরশাহী লেখা শেষ হয়।

বাংলার ইতিহাস জানার জন্য তারিখ-ই-শেরশাহী এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। শেরশাহের হাতে বাংলা কীভাবে স্বাধীনতা হারায় তার বিশ্লেষণ সরওয়ানীর ইতিহাসে পাওয়া যায়। বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহ (১৫৩৩-৩৮) তাঁর পিতা ও ভাইয়ের কাছ থেকে সুসংগঠিত প্রশাসনিক বিলি-ব্যবস্থাসহ এক বিরাট রাজ্য উত্তরাধিকার সূত্রে পান। তবু শেরশাহ অতি সহজেই তাঁর কাছ থেকে বাংলা ছিনিয়ে নেন। একদিকে গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহের বোকামি ও অন্যদিকে শেরশাহের বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতা এটা সম্ভব করে বলে তিনি অভিমত দেন। সামান্য এক জায়গিরদারের সন্তান থেকে শেরশাহ বিরাট অঞ্চলের প্রভু হয়েছিলেন এবং এ ভিত্তির জোরেই তিনি দিল্লির সিংহাসন দখলের প্রতিযোগিতায় নামেন। মুসলমানরা যদিও ৩০০ বছরের অধিককাল ধরে বাংলা শাসন করে তবু সমসাময়িককালে বাংলা মুল্লুকে লিখিত কোনো ইতিহাস গ্রন্থ আজ অবধি পাওয়া যায়নি। বাংলার স্বাধীনতা বিলোপ ও শেরশাহ কর্তৃক বাংলা দখলের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি একমাত্র আব্বাস সরওয়ানীর তারিখ-ই-শেরশাহীতেই পাওয়া যায়।            

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর