মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাসাইল পৌর নির্বাচন

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

বাসাইল পৌর নির্বাচন

গত ৪ মার্চ ছোট ভাই ইকবাল সিদ্দিকী পরপারে চলে গেছে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘ ৩০ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইকবাল তিলকে তাল করেছে, একটি সুন্দর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। কচিকাঁচা থেকে শুরু করে সেটা এখন ইকবাল সিদ্দিকী এডুকেশন সোসাইটি নামে মহিরুহ। ১৫০০-১৬০০ ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা করে। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো প্রস্ফুটিত গোলাপের মতো। ৯ জুন কচিকাঁচা একাডেমির কয়েকজন কর্মকর্তা আমার বাড়ি এসেছিলেন, পরদিন ১০ জুন ইকবাল সিদ্দিকী শিক্ষাঙ্গনে ফল দিবস। আমি বিষয়টা বুঝতে পারিনি। আমার মনে হয়েছে কোনো পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে। একাডেমির আঙিনায় দেখলাম কিছু বাচ্চা দুই সারিতে দাঁড়িয়ে আছে, একটু দূরে শিক্ষক-কর্মচারীরা। বিষয়টা আমার ভালো লাগেনি। বলে এসেছি, কোনো জাতীয় অনুষ্ঠান থাকলে বাচ্চারা দুই সারিতে দাঁড়ালেও দাঁড়াতে পারে। কিন্তু সব সময় নয়। একাডেমির আঙিনায় একটি নির্দিষ্ট রুমে বসে ছিলাম। সভাপতি আবদুর রহমান বলল, ‘আপনি না গেলে ছাত্রছাত্রীরা ভুখা থাকবে, খাবে না।’ কী খাবে না? যেখানে বসে ছিলাম সেখানেও টি টেবিলে থরে থরে দেশি ফল সাজানো। আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, পেঁপে, লিচু, কলা, তাল, লটকন, আঙুর, আনারস, নাশপাতি, জামরুল, করমচা, আতা, আমড়া আরও অনেক রকমের ফল। আমি আম খুব পছন্দ করি। আম আর আনারসের কয়েক টুকরো মুখে দিয়েছিলাম। তখনই বুঝলাম ফল দিবস কোনো পরীক্ষার ফল নয়। ফল দিবস দেশি ফল সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে খাওয়া। দোতলায় ছিল থ্রি-ফোরের বাচ্চাদের টেবিল ভর্তি নানা রকমের ফল। আর সেই ফল সামনে নিয়ে ৮-১০ বছর থেকে ১২ বছরের পরীর মতো সুন্দর ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা, রাজপুত্রের মতো ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে। বহুদিন পর বাচ্চাদের মধ্যে বিলীন হয়ে গিয়েছিলাম। বড় ভালো লেগেছে অনুষ্ঠানটি। আমি অনেক কিছু দেখেছি। কিন্তু ফল দিবস আমার মাথায় আসেনি যেটা চার বছর আগে ইকবাল সিদ্দিকী পালন শুরু করেছিল। যে সময় আমাদের ইকবালের বড় বেশি প্রয়োজন ছিল সে সময় আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। দুপুরে বড় আনন্দ করে ইকবাল সিদ্দিকী এডুকেশন সোসাইটি কমপ্লেক্সে খেয়ে টাঙ্গাইল এসেছিলাম। টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভায় একটি নির্বাচন চলছে। ২০১৮ সালের পর আমরা কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। সেদিন ১৬ মে আমরা নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলাম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং কমিশনের অন্য কমিশনারদের আশ্বাসে আমরা বিশ্বাস করেছি। সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি অবাধ ও নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান। তাঁর প্রতিশ্রুতিতে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। তাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গামছার প্রার্থী রাহাত হাসান টিপুর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলাম। ১০ তারিখ নৌকা মার্কার আবদুর রহিমের জন্য বাসাইল বাসস্ট্যান্ডে একটি সভার আয়োজন করেছিল। নির্বাচন কমিশন সে সভাটি হতে দেয়নি। নির্বাচন বিধিমালায় কোনো এমপি, মন্ত্রী বা অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের প্রচার করার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনী এলাকায় বসতবাড়ি না থাকলে তার যাতায়াতের সুযোগ নেই। আমি এখন কিছুই না। তাই অবাধে ঘুরে বেড়াই। জোয়াহেরুল ইসলাম এমপিকে নৌকার প্রচারে সমাবেশ করতে না দেওয়া যথার্থ হয়েছে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থীকেও বলেছে, পথসভা করুন। কিন্তু হোন্ডা নিয়ে মিছিল করবেন না। শোনার পর আমি বলেছি, যে যে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে সবটাই মেনে চলতে হবে। আজ প্রায় ২০ বছর ছোট্ট একটা জিপগাড়িতে মাইক লাগিয়ে গামছার প্রচার করা হয়। চার-পাঁচটি নির্বাচনেও জিপে মাইক লাগিয়ে প্রচার করা হয়েছে। সামনে পেছনে দুই দিকে হর্ন ছিল। নির্বাচন কমিশনের নীতিমালায় নাকি এক হর্ন। জানি না। সে এক হর্নই ব্যবহার হচ্ছে। গতকাল একজন মহিলা ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, জিপগাড়িতে প্রচার করা যাবে না। আমি নেতা-কর্মীদের বলে দিয়েছি, গত ১৫-২০ বছর যে গাড়ি মাইক মারছে তখন কোনো আইনি বাধা না থাকলে এখন কেন? সে যাই হোক, বাধাটি কাগজে লিখে দিলেই আমরা মান্য করব। আর যদি না থাকে তাহলে যথারীতি চলবে। আমি চাই নির্বাচনটা উৎসবমুখর প্রভাবমুক্ত হোক। নৌকার প্রার্থী আবদুর রহিম আগে জাসদের ছিল। তাদের আত্মীয়স্বজন প্রায় সবাই আমাকে খুবই ভালোবাসে, সম্মান করে। রহিমও আমাকে প্রচুর সম্মান করত। আরেকজন বিএনপির নেতা এনামুল করিম অটল জনাব আহমেদ আজমের লোক। খুবই সোজা সরল। কেউ বলছে অত্র এলাকার এমপি জোয়াহেরুল ইসলাম তাকে দাঁড় করিয়েছেন। তা যাই হোক, সেদিন বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কার পত্রে শুধু এটুকু লেখা থাকলেই চলত যে আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি সেজন্য আপনাকে বহিষ্কার করা হলো। কিন্তু বেইমান মীরজাফর বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তার বহিষ্কার পত্রের পুরোটাই এখানে তুলে দিচ্ছি-

‘সূত্র নং- বিএনপি/সাধারণ/৭৭/১৮৪/২০২৩    তারিখ : ৯ জুন ২০২৩

প্রতি,

এনামুল করিম অটল

সভাপতি, বাসাইল উপজেলা বিএনপি

টাঙ্গাইল।

বিষয় : আজীবন বহিষ্কার।

জনাব,

আগামী ২১ জুন ২০২৩ অনুষ্ঠিতব্য বাসাইল পৌরসভার প্রহসনের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে গত ৫ জুন ২০২৩ তারিখে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হলেও আপনি কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দেননি, যা গুরুতর অসদাচরণ।

নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করে গত ১৫ বছর ধরে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা যারা গুম-খুন ও পৈশাচিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারসহ দেশের গণতন্ত্রকামী বিপুল জনগোষ্ঠীর আকাক্সক্ষার প্রতি আপনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

দলীয় সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনাকে এহেন অবজ্ঞা ও ঔদ্ধত্যের জন্য বিএনপির গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে নির্দেশক্রমে আপনাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো। গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাসে আপনার নাম একজন বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর হিসেবে উচ্চারিত হবে।

এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

(অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী)

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’

যাক, এবার জাতীয় বিষয়ে আসি। কদিন থেকে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ বা ছোট মন্ত্রিসভা অথবা বড় মন্ত্রিসভা গঠনের জল্পনাকল্পনা নিয়ে। বিষয়টাা নিরাসক্তভাবে ভাবতে হবে। সাংবিধানিক এই কাঠামোয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কোনো সুযোগ নেই। হ্যাঁ, সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে এবং সেটা পরে অনুমোদন করা হলে অনেক কিছুই করা যায়। কিন্তু সংবিধানের বর্তমান নির্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অসংখ্যবার মন্ত্রিসভা ছোটবড় করতে পারেন। এমনকি তিনি একা থেকে সবাইকে বাতিল করে দিতে পারেন। ছয় মাসের জন্য যাকে পছন্দ তাকেই মন্ত্রী বানাতে পারেন। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কোনো সুযোগ নেই। সংবিধানে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। হ্যাঁ, সবকিছু করার সুযোগ আছে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। আন্দোলন সফল না হলে কিছুই হবে না। সত্যিকার অর্থে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি যা বলছে তার অনেক কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। নিশ্চয় সামান্য কিছু গ্রহণযোগ্য থাকতেও পারে। তবে সব নয়। গ্রহণযোগ্যের চাইতে অগ্রহণযোগ্যই বেশি। কত বছর হয়ে গেল বিএনপি হাওয়া ভবনের জন্য কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি। যেমন জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধে ভয়াবহ অন্যায়-অবিচার করার পরও জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেনি। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ’৭১-এ আমাদের ওপর যে অত্যাচার করেছে, এখন নিজেদের ওপর তা তারা করছে। ইমরান খান একজন সফল ক্রিকেট খেলোয়াড়। তাঁর নেতৃত্বে পাকিস্তান বিশ্বজয়ী হয়েছে। তাঁর সম্পর্কে আমার তেমন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তিনি একজন প্রকৃত নেতা হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে তাঁকে তাঁর মন্ত্রিসভাকে নানা ষড়যন্ত্র করে ভেঙে দেওয়ার পর তিনি আরও অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন, পাকিস্তানবাসীর কাছে বিশ্বস্ত হয়ে উঠেছেন। পাকিস্তানের কাঠামোয় বঙ্গবন্ধুর পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য কোনো নেতা যদি থেকে থাকেন তিনি একমাত্র ইমরান খান। ইমরান খানের ওপর সামরিক বাহিনী ও অন্যরা যেভাবে অন্যায় ও জোরজুলুম করেছে তাতে তাঁর পাকিস্তানে যেমন জনপ্রিয়তা বেড়েছে, পাকিস্তানের বাইরেও বেড়েছে। সত্যিকার অর্থেই ইমরান খান এখন বিশ্বনন্দিত একজন নেতা। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির ওপর নির্মম নির্যাতন, অত্যাচার, মানুষজন মেরে ফেলা, ঘরদুয়ার জ্বালিয়ে -পুড়িয়ে দেওয়ায় আমাদের কাছে হয়েছে চরম ঘৃণিত। এখন ইমরান খানের ওপর, ইমরান খানের দলের ওপর অত্যাচার করতে গিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাকিস্তানেও বিতর্কিত, ঘৃণিত হচ্ছে। সব সময় শুনে এসেছি ন্যায় ও সত্যের পরাজয় নেই। সরকার থেকে বিদায় হলে মানুষ তাকে নিয়ে কত টিটকারী, কত কিছু করে। পাকিস্তানের নেতা হিসেবে একসময়ের উদাহরণ জুলফিকার আলী ভুট্টো। তিনি ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে রেলগাড়িতে চড়ে লাহোর থেকে লারকানায় গিয়েছিলেন। প্ল্যাটফর্মে লাখো লোক সমাগত হয়েছিল। ট্রেনে বসে একটি রুমালে চোখ মুছে ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেটা কাড়াকাড়ি করে যিনি দখলে নিতে পেরেছিলেন তার কাছ থেকে লক্ষ টাকায় বিত্তশালীরা কিনে নিয়েছিল। তখন খুব সুন্দর একটি রুমালের দাম ছিল ৪-৬ আনা। ইমরান খানের ব্যাপারটা তার চাইতেও বেশি। ইমরান খান গদিচ্যুত হওয়ার পর যে কটি নির্বাচন হয়েছে তার দল সবকটি নির্বাচনে ৮০-৯০ ভাগ জয়ী হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সে পৃথিবীব্যাপী অর্থ সাহায্য চাইলে একবার ৪০০-৬০০ কোটি আরেকবার দেড়-দুই হাজার কোটি পেয়েছেন। দুই যাত্রায় ইমরান খান ৪-৫ ঘণ্টা চ্যানেলে ছিলেন। এমন জনপ্রিয়তা পাকিস্তানের ইতিহাসে আর দ্বিতীয় কেউ নেই। ইমরান খানকে প্রশাসন অথবা সেনাবাহিনী মেরে ফেলতে পারে। কিন্তু তাঁকে মুছে ফেলতে পারবে না। আমাদের পিতা জীবিত মুজিবের চাইতে মৃত মুজিব অনেক বেশি শক্তিশালী। ঠিক তেমনি ইমরান খানকে মেরে ফেললে তিনি একজন জনপ্রিয় মানুষ হিসেবে পৃথিবীর ইতিহাসে বেঁচে থাকবেন।

পাকিস্তানে সত্যিকার অর্থে বর্তমানে প্রকৃত নেতা ইমরান খান। আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধ করি তখন তিনি একজন ক্রিকেট খেলোয়াড় ছিলেন। আজ তিনি পাকিস্তানের নন্দিত নেতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসের প্রশংসাও করতে হবে। আমরা আমেরিকা বা অন্য কোনো দেশের করদরাজ্য নই। তাই আমাদের ওপর যা খুশি তাই চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। যত টিটকারীই মারুন প্রয়োজনে সাত সমুদ্রের ওপারে আমেরিকা যাব না- এটা খুব দোষের কথা নয়। আর এ ধরনের কথা বঙ্গবন্ধুর কন্যার পক্ষেই বলা সম্ভব। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই ভুলত্রুটি আছে আলাপ-আলোচনার পথ আছে। পীর হাবিব অসময়ে চলে গিয়ে আমাদের সবাইকে দুর্বল করেছে। পরম করুণাময় আল্লাহ পীর হাবিবকে লেখার অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে ভাবি, যার যা সাজে না তিনি কি তা না বলে থাকতে পারেন না। সময়টা আসলেই দুর্যোগপূর্ণ। বলতে চাই না তবু পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে না বলেও পারি না। আমার প্রিয় বোন কী কারণে মমতাজকে সংসদে নিয়েছিলেন তার কিছুই বুঝি না। মমতাজের স্বামী আবদুর রশিদ বয়াতি মুক্তিযুদ্ধের পর আমায় গুরু বলে মানত। আধ্যাত্মিক লাইনের লোকজনের শ্রদ্ধাভক্তিই আলাদা। রশিদেরও তেমনটা ছিল। ’৯০-এ দেশে ফেরার পর বাসাইলের সুন্যায় রশিদ বয়াতিকে ৫ হাজার টাকায় আনা হয়েছিল। সঙ্গে এসেছিল মমতাজ। গান শুনে খুশি হয়ে শ্রোতারা রশিদকে যেমন ২-৩ হাজার টাকা দিয়েছিল তেমনি মমতাজকেও দিয়েছিল। আমিও ১ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। এটা সেই ’৯১-’৯২ সালের কথা। রশিদ বয়াতির গানের মধ্যে ছিল ভক্তি। সে গানের মাধ্যমে সাধনা করতে চাইত। মমতাজ যখন আস্তে আস্তে বড় হয় তখন গান গাইতে গিয়ে সে চায় খ্যাতি, সুনাম, অর্থবিত্ত। এ নিয়ে দুজনের মাঝে বিরোধ বাধে। পরিণামে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। কিছুদিন পরে রশিদ মারা যায়। এরপর মমতাজ টাঙ্গাইল এসেছে, সখিপুর এসেছে। আমরা তাকে বিপুল অর্থ দিয়েছি। একবার টাঙ্গাইল হানাদারমুক্ত দিবসে মমতাজ এসেছিল। তাকে আমরা ৪ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। আল্লাহ তাকে গলা দিয়েছেন। তার গলায় সুর বাস করে। তবে সংসদ কোনো গানের আসর নয়, সংসদ সারা দেশের মানুষের আশা আকাক্সক্ষার পবিত্র ঠিকানা। সেখানে কোনোরকম ক্যারিকেচার করা সত্যিকার অর্থেই ভালো নয়। মেয়েটি আমাকে সব সময় পিতার মতো দেখেছে। এখন যশ-খ্যাতি বৃদ্ধি পাওয়ায় তেমন আছে না বদলে গেছে, কিছুই জানি না। কারণ প্রায় এক যুগ তেমন কথাবার্তা হয়নি।

 

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর