মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

হজ পালন করতে হবে নিয়ম মেনে সঠিকভাবে

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

হজ পালন করতে হবে নিয়ম মেনে সঠিকভাবে

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি ভিত্তির অন্যতম একটি হজ। সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলিমের জন্য হজ আদায় করা জীবনে একবারের জন্য ফরজ। যেহেতু হজ অর্থনৈতিক ও শারীরিক সম্পৃক্ত আমল। এবং পৃথিবীর সব মুসলমানের জন্য একটি মাত্র জায়গা, মক্কাতুল মুকাররমায় তা আদায় করতে হয়। কেননা সুনির্দিষ্ট নিয়তে, সুনির্দিষ্ট সময়ে, সুনির্দিষ্ট কাজ, সুনির্দিষ্ট জায়গায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে আদায় করার নামই হলো হজ। তাই হজের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ যাত্রায় বের হওয়ার আগেই তার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি এবং মকবুল হজ আদায় করার জন্য তার বিধিবিধানগুলোর জ্ঞান অর্জন করাও জরুরি। তাই মানসিক, শারীরিক ও ধর্মীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং মনে মনে উপলব্ধি করা যে, আমি কাফনের কাপড় অর্থাৎ ইহরামের সাদা কাপড় পড়ে সারা জীবনের জন্য আমার পরিবার থেকে বিদায় নিচ্ছি, হয়তো এ পৃথিবীতে আর কখনো তাদের সঙ্গে দেখা হবে না, এ যেন চিরবিদায়। তাই আমার ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলো এখনই সমাধান করা উচিত। যথা ১. পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনকে তাকওয়া অবলম্বন, তথা ইসলামী জীবনযাপনের তাগিদসহ উপদেশ দান করা। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা। তাকওয়া ও খোদাভীতির ওপর পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত রাখা। আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। ২. কারও সঙ্গে কোনো লেনদেন থাকলে তা যথাসাধ্য চুকিয়ে ফেলা এবং পুরোপুরি চুকানো সম্ভব না হলে তা লিখে রাখা এবং কয়েকজনকে সাক্ষী রাখা। ৩. অতীতের গুনারাশির জন্য মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে খাঁটি মনে তওবা করে নেওয়া এবং এখন থেকেই গুনার কাজ ছেড়ে দেওয়া, অতীতের গুনার জন্য অনুশোচনা করা, লজ্জিত হওয়া ও ভবিষ্যতে আর কখনো কোনো প্রকারের গুনা না করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া। ৪. কারও ধনসম্পদ জমিজিরাত বা অন্য কোনো হক নিজের জিম্মায় থাকলে তা আদায় করে দেওয়া। উপরন্তু কারও কোনো কষ্টের কারণ ঘটিয়ে থাকলে তার জন্য সরাসরি ক্ষমা চেয়ে নিয়ে দায়মুক্ত হওয়া। ৫. সম্পূর্ণ হালালভাবে অর্জিত সম্পদ দিয়ে হজ আদায় করা। কেননা আল্লাহতায়ালা পবিত্র, তিনি অপবিত্র কোনো জিনিস গ্রহণ করেন না। ৬. মানুষের কাছে হাত পেতে হজের খরচ চাওয়া থেকে বিরত থাকা, হজের জন্য হাত পাতা খুবই নিন্দনীয়। ৭. মনে-প্রাণে নিয়ত বিশুদ্ধ করে নেওয়া, কেননা হজ হবে একান্তই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে, নামধাম ও জৌলুস প্রকাশের উদ্দেশ্যে নয়। ৮. হজ ও ওমরাহের মাসলা সঠিকভাবে শিক্ষা করা, কেননা রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা আমার কাছ থেকে হজের নিয়মকানুন শিখে নাও। ৯. উত্তম, আন্তরিক ও নেককার সফরসঙ্গী নির্বাচন করা। কেননা উত্তম সফরসঙ্গী ইবাদত-বন্দেগির সহায়ক হয়ে থাকে, বিপদে-আপদে বিভুঁইয়ে সহানুভূতিশীল ও বিবেকবান সফর সাথি ছাড়া বিশেষ অসুবিধা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে হজের মাসলা জানা অভিজ্ঞ আলেম ও সুন্নতের অনুসারী সাথি মকবুল হজ হাসিলের বিশেষ সহায়ক। ১০. ইহরাম অবস্থায় নিজেকে সর্বোতভাবে সব রকমের গুনার কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখা, কেননা অশ্লীল কার্যাদি ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে বিরত থেকে হজ পালনকারীর জন্যই মকবুলিয়ত ও জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে। ১১. মাতা-পিতা জীবিত থাকলে এবং তাদের সেবা-শুশ্রƒষার প্রয়োজন থাকলে বা পথ বিপজ্জনক হলে তাদের খুশিমনে অনুমতি গ্রহণ করা।

হজ ফরজ হওয়ার শর্ত : ১. মুসলমান হওয়া ২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ৩. সুস্থ মস্তিষ্ক হওয়া ৪. আজাদ হওয়া ৫. হজ পালনে দৈহিক ও আর্থিক সংগতি থাকা ৬. হজের সময় হওয়া ৭. হজ যাত্রাপথের সার্বিক নিরাপত্তা থাকা ৮. বিধর্মী রাষ্টের নাগরিক নওমুসলিমের পক্ষে হজ ফরজ হওয়ার জ্ঞান থাকা ৯. নারী হজযাত্রীর জন্য সঙ্গে মাহরাম থাকা।

হজের ফরজ তিনটি : ১. ইহরাম বাঁধা বা আনুষ্ঠানিকভাবে হজের নিয়ত করা ২. আরাফাতে অবস্থান করা, ৯ জিলহজের সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে ১০ জিলহজের ফজরের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় কিছুক্ষণের জন্য হলেও ৩. তাওয়াফে জিয়ারত ১০ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত যে কোনো দিন কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। উপরোল্লিখিত কোনো একটিও ছুটে গেলে হজ বাতিল হয়ে যাবে এবং পরবর্তী বছর তার কাজা আদায় করা ফরজ হবে।

হজের ওয়াজিব : ১. মিকাতের আগেই ইহরাম বাঁধা ২. সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করা ৩. মুজদালিফায় অবস্থান করা ৪. শয়তানকে কঙ্কর মারা ৫. হজে কিরান ও তামাত্তু আদায়কারী ব্যক্তির কোরবানি করা এবং তার কঙ্কর মারা ও মাথা মু-নের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সম্পাদন করা ৬. মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটা ৭. তাওয়াফে জিয়ারত করা, যা আইয়ামে নহরের মধ্যে সম্পাদন করা ৮. সাফা-মারওয়া সাইয়ি করা ৯. মিকাতের বাইরের হাজিদের জন্য তাওয়াফে সদর বা বিদায়ী তাওয়াফ করা। এরপর দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আফসোসের সঙ্গে মক্কা ত্যাগ করা। উপরোল্লিখিত কোনো একটি ওয়াজিব ছুটে গেলে হজ আদায় হয়ে যাবে, তবে দম দিতে হবে। মহান রব্বুল আলামিন পৃথিবীর সব মুসলমান নরনারীকে হজ আদায় করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণ খান, ঢাকা

সর্বশেষ খবর