বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

লাশের মিউজিয়াম

পৃথিবীতে লাশ দাফনের বিভিন্ন পদ্ধতি চালু রয়েছে। কিন্তু মিউজিয়ামে লাশ রাখার পদ্ধতি সম্ভবত চালু ছিল একমাত্র ইতালির সিসিলিতে। সিসিলির পালমেরো এলাকায় সপ্তদশ শতাব্দীতে চালু হয় একটি বিশেষ লাশের মিউজিয়ামে লাশ সংরক্ষণের পদ্ধতি। ১৯২০ সাল পর্যন্ত সিসিলি শহরের ক্যাটাকম্বতে অদ্ভুত পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে শত শত লাশ। একসময় লাশের এই মিউজিয়ামটি দেখভাল করতেন ৫০০-এর মতো যাজক।

১৫৯৯ সালে ফাদার সিলভেস্ত্রো নামের একজন ধর্মযাজক মারা যান। তার পরপরই মারা যায় ৪০ জন যাজক। প্লেগ রোগে তাদের মৃত্যু ঘটে। এসব ধর্মযাজক সে সময় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া প্লেগ রোগীর সেবা করতে এ রোগে আক্রান্ত হন এবং নিজেরাও প্রাণ হারান। এসব যাজকের লাশ ক্যাটাকম্বের একটি ভূগর্ভস্থ গৃহে সংরক্ষণ করা হয়। এ নিয়ে এই লাশ সংরক্ষণাগারের ধর্মীয় মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে। তা সিসিলির ধনীদের বেশ প্রলুব্ধ করে। তাদের মধ্যে এই পবিত্র স্থানে নিজেদের লাশ সংরক্ষণ করার বাসনা জেগে ওঠে।

এখানে লাশ সেলারে এক বছর রাখা হতো। এভাবে লাশের জলীয় সব উপকরণ শুকিয়ে যেত। তারপর সেই শুকনো লাশ ভিজানো হতো ভিনেগারে। এরপর লাশের দেহে খড় লাগানো হতো। তৈরি হতো মোটামুটিভাবে মানবদেহের একটি আকার। তারপর তার ওপর জামা-কাপড় পরানো হতো। সে অবস্থায় সেগুলো তাকের ওপর সোজাভাবে দাঁড়িয়ে বেঁধে রাখা হতো। লাশের এই মিউজিয়ামে শত শত লাশ এভাবে সংরক্ষণ করা হয় ৩০০ বছর ধরে। উনবিংশ শতাব্দীতে লাশ সংরক্ষণে আর্সেনিক কিংবা মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়ার প্রলেপ লাগানো হতো লাশের গায়ে। এর ফলে মৃতদেহের ত্বক সতেজ বলে মনে হতো।

১৮৮০ সালে এই মিউজিয়ামে লাশ সংরক্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ৪০ বছর পর ১৯২০ সালে দুই বছর বয়সী এক শিশুর লাশ সংরক্ষণ করা হয় ওই আজব লাশ মিউজিয়ামে। শিশুটির নাম ছিল রোজালিয়া লোম্বার্ডো। মেয়েটির বাবা ছিলেন চিকিৎসক। তার জেদের কাছে ক্যাটাকম্বের যাজকরা হার মানেন। ইনজেকশনের মাধ্যমে রোজালিয়ার বাবা তার শিশুকন্যার লাশটি সংরক্ষণ করেন কাচের একটি শবাধারে। এখনো দেখলে মনে হয় শিশুটি যেন ঘুমিয়ে আছে। বিশাল এই লাশের মিউজিয়ামে একসময় পরলোকগত আত্মীয়ের জন্য জড়ো হতো তাদের আত্মীয়রা। চলত ভোজন উৎসব। মৃতদের হাতে হাত রেখে স্বজনদের কেউ কেউ করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিত। যেহেতু এখানে শুধু ধনাঢ্যদের লাশ সংরক্ষণ করা হতো যেহেতু তাদের আত্মীয়রা বিপুল অর্থ দান করত এই মিউজিয়ামটিতে। যা দিয়ে ৫০০-এর বেশি যাজকের ভরণ-পোষণ মেটানো যেমন সম্ভব হতো, তেমনি প্রতিদিন শত শত গরিব মানুষের মধ্যে খাবার বিলানো হতো।

সুদীপ্ত সুজন

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর