যুগশ্রেষ্ঠ ওলিয়ে কামেল মাওলানা শাহ সুফি আলহাজ তোয়াজউদ্দীন আহমদ (রহ.) ৩১ বছর আগে ১৯৯২ সালের ১৬ জুন ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে হক্কানি মুজাদ্দিদে জমান আমিরুশ শরিয়ত কুতুবুল আলম হজরত মাওলানা শাহ সুফি আলহাজ আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.)-এর অন্যতম প্রধান খলিফা ও প্রিয় রুহানি সন্তান। সুফি তোয়াজউদ্দীন ‘দ্বারিয়াপুরের পীর সাহেব’ হিসেবেই সমধিক পরিচিত। এই মহান সুফির জন্ম ১৯০৯ সালে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার দ্বারিয়াপুর গ্রামে। বাবা মিনহাজউদ্দীন ও মা মোছাম্মাৎ জমিউন্নেসা। ছোটবেলায় আল্লাহ-প্রেমের মজ্জুব হালতের কারণে তাঁকে অল্প বয়সেই ফুরফুরা শরিফের পীর আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.)-এর কাছে পাঠানো হয়। পীরসাহেব প্রথম দর্শনেই বালক তোয়াজউদ্দীনকে হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই দেন এবং তাঁর জীবন গঠনের কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ আট মতান্তরে ১২ বছর পীরের সান্নিধ্যে থেকে তিনি জাহেরি ও বাতেনি বিদ্যায় সম্যকজ্ঞান লাভ করে পূর্ণাঙ্গ ইলম হাসিলের মাধ্যমে কামালিয়াতের সুউচ্চ মাকামে পৌঁছে যান। এ সময় তাঁর পীর মুজাদ্দিদে জমান (রহ.) তাঁকে স্বীকৃতিস্বরূপ লিখিত খেলাফতনামা ও পিরহান মোবারকসহ সসম্মানে প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৩৩ সালে দেশে পাঠিয়ে দেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তিনি খেলাফত লাভ করেন। মুজাদ্দিদে জমান (রহ.) যেমন ভারতবর্ষের নানা রকম কুসংস্কার ও শিরক-বিদাতের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন, জিহাদ করেছেন। সুফি তোয়াজউদ্দীন আহমদও তেমনি তাঁর পীরের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আল্লাহতায়ালা ও তাঁর প্রিয় রসুল (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানকে বাস্তবায়নের জন্য আজীবন ক্লান্তিহীন কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন। দীনের প্রশ্নে কোনো আপস করেননি।
শাহ সুফি তোয়াজউদ্দীন ছিলেন প্রকৃত মুত্তাকি-পরহেজগার, ফানাফিশ শায়েখ, ফানাফির রসুল এবং ফানাফিল্লাহ মাকামের আদর্শ মানুষ। স্বনামখ্যাত গুণী সৈয়দ আলী আহসান, অধ্যাপক আবদুল গফুর, অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ এবং ডা. (ক্যাপ্টেন) আবদুল বাছেতের মতো অনেকে তাঁর সোহবতে এসেছেন এবং তাঁর সম্পর্কে সুউচ্চ ধারণা পোষণ করেছেন। প্রখ্যাত ভাষাবিদ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তো ছিলেন হুজুর কেবলার পীরভাই। হুজুর কেবলার সংস্পর্শে এসে অনেক মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতের নেয়ামত হাসিল করেছেন, অনেকে ভালো মানুষে পরিণত হয়েছে, মুত্তাকিও হয়েছে। সুফি তোয়াজউদ্দীন আহমদ (রহ.) দ্বারিয়াপুর শরিফের পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত। আজও প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ তাঁর মাজার জিয়ারতে আসে। ১৯৮৭ সালে শাহ সুফি তোয়াজউদ্দীনের মেজো ছেলে অধ্যাপক আবুল হাসান মুহম্মদ আবদুল কাইয়ূম গদিনশিন পীর মনোনীত হন।
অধ্যাপক কাইয়ূম ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর মহামারি করোনায় ভুগে মারা যান। তিনিও তাঁর পিতার মাজারের পাশে শায়িত। গদিনশিন মনোনীত হয়েছেন পীর অধ্যাপক কাইয়ূম (রহ.)-এর একমাত্র পুত্র আলহাজ শাহ আবুল মনযর মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ মিঠু। যিনি তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন।মো. বশির হোসেন মিয়া