শনিবার, ১৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

কাছ থেকে দেখা সিরাজুল আলম খান

শরীফ নুরুল আম্বিয়া

কাছ থেকে দেখা সিরাজুল আলম খান

শুক্রবার ৯ জুন দুপুরে হাসপাতালের সাপোর্ট সিস্টেম খুলে নিলে সিরাজুল আলম খান মৃত্যুবরণ করেন। স্বাভাবিক মৃত্যুই বলা যায়, তবে আরও কিছুদিন বেঁচে থাকলে অস্বাভাবিক হতো না। যৌবনে নিয়ম-শৃঙ্খলায় জীবন যাপিত হলে সেটাই ছিল স্বাভাবিক।

শরীর তাঁর ভালো যাচ্ছিল না অনেক দিন। দুবার বাইপাস হয়েছে, হিপজয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে সাইপ্রাসের এক হাসপাতালে কয়েক বছর আগে। ব্যথা-বেদনা কাশি নিয়ে কষ্টেই জীবন চলছিল শেষ দিকে। যখন ভালো ছিলেন শেরাটনে আড্ডা, পরে কখনো ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের অক্সফোর্ড স্কুলের এক অফিস কক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম ও যুদ্ধে যারা ছিলেন, কাছ থেকে তাঁকে যারা দেখেছেন, তাঁর মৃত্যুতে তাদের হৃদয় মথিত এবং শোকাহত। সিরাজ ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৬৯ সালের আন্দোলনের সময়। তাঁর সান্নিধ্যে থেকেই আমি ছাত্র আন্দোলন ও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। সিরাজ ভাই ’৬৯ সালে এবং তারপরও বুয়েটে আসতেন এবং সাধারণত আহসানুল্লাহ হলের ২০২/২০৪ নম্বর রুমে রাতযাপন করতেন। ওখানে মাঝে মাঝে আড্ডা হতো। সংগ্রামের কথা হতো, সাহস সঞ্চারী কথা বলতেন, যে কোনো বিষয়ে প্রতিশ্রুতির ওপর খুব গুরুত্ব দিতেন। চলনে-বলনে-অভিব্যক্তিতে আকৃষ্ট হতো ছাত্র-যুবকরা। এক রকম সম্মোহনী শক্তি ছিল তাঁর মধ্যে। হরতালের পিকেটিংয়ের জন্য যারা যাবে, তাদের ফজরের আজানের পরপরই নামতে হবে, দরকার হলে রাতে একসঙ্গে থাকবে। কথা কাজের গরমিল একদম অপছন্দ ছিল তাঁর। চলার মতো ও সাংগঠনিক কাজ করার মতো প্রয়োজনীয় পয়সা ছিল না কখনোই তাঁর হাতে, বঙ্গবন্ধুর সূত্রে কিছু পাওয়া যেত। কিন্তু পয়সার জন্য কাজ বন্ধ থাকবে তা কখনো মানতেন না। ছাত্রলীগ কিছুটা নিজস্ব চাঁদায় চলত, সত্তরের পর শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে শ্রমিক নেতারা কিছু দিত। এখন তো দেশে সব উল্টো চলে।

শরৎসাহিত্য তাঁর পছন্দ ছিল, ‘পথের দাবী’ প্রিয় উপন্যাস ছিল, সাবেক দূত কামরুদ্দীন আহমদের ‘Sociopolitical History of East Bengal’ সবাইকে পড়তে বলতেন। বাঙালি জাতি গঠনের গোড়ার কথা, তার বিকাশ নিয়ে কথা হতো। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের গৌরবগাথা আড্ডার বিষয় ছিল। নিজের দেশে নিজের মতো করে সমাজতন্ত্র করার ভাবনা ছিল, চে গুয়েভারা, ফিদেল কাস্ত্রো অনেকটা আইকনের পর্যায়ে ছিল তাঁর কাছে, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ অধ্যয়ন করতেন। বাঙালি জনগণের মুক্তির পথ অনুসন্ধানে সব সময় চিন্তা করেছেন।

সিরাজ ভাই রাজপথের নেতা ছিলেন, কর্মী ছিলেন, সংগঠক ছিলেন, সংগ্রামের পরিকল্পনাকারীও ছিলেন। নিজে হরতালের পিকেটিং করতেন, স্লোগান দিতেন। ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করতে পারতেন, পরে একনাগাড়ে কয়েক দিন ঘুমিয়ে হয়তো পুষিয়ে নিতেন। পোশাকে-আশাকে-চলনে কখনো পরিপাটি থাকা তাঁর ভাবনাতে ছিল না। মনে পড়ে, ১৯৭০ সালের ১৪ আগস্ট সারা রাত স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের পোস্টার লাগিয়েছি তাঁর সঙ্গে, ইনুর গাড়ি ছিল সঙ্গে, জগন্নাথ কলেজের নজরুল শ্রমিক লীগ অফিসে বসে লিখেছিল, সঙ্গে সানি সালাউদ্দিন ছিল। মুক্তিযুদ্ধে নজরুল দাউদকান্দিতে শহীদ হয়েছে, ঘাটে তার কবর আছে। বিভিন্ন সূত্রে বোমা ও অনিয়মিত যুদ্ধের উপকরণ আসত সিরাজ ভাইয়ের কাছে, উদ্দেশ্য প্রতিরোধযুদ্ধে দরকার মতো ব্যবহার করা, উনি সে সবও পরীক্ষা করতেন নিজে উপস্থিত থেকে, পিকেটিং ও পুলিশ মোকাবিলা ছিল নৈমিত্তিক।

সিরাজ ভাই স্বাধীনতার অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে ধ্যান-জ্ঞ্যান-কর্মে নিজেকে ষোলআনা নিয়োজিত করেছিলেন। আরও অনেকে হয়তো স্বাধীনতার কথা ভাবতেন, কিন্তু বাস্তব সাংগঠনিক রাজনীতিতে ঘাটতির কারণে তাঁরা কেউই বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেননি। সিরাজ ভাই ছিলেন স্বাধীনতার সত্যিকার একজন রূপকার। সে জন্য সংগঠন করেছেন, কর্মী তৈরি করেছেন, ’৬২ সালে নিউক্লিয়াস দিয়ে শুরু করেছেন।

বঙ্গবন্ধু ছয় দফা কর্মসূচি দেওয়ার পর নিউক্লিয়াসে যে প্রাণ সঞ্চারিত হয় সে কথা সিরাজ ভাই নিজে বলেছেন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফার পক্ষে ৭ জুনের হরতাল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিরাজ ভাই অগ্রসর হন। কিন্তু আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা সালাম খান, মৌলানা তর্কবাগীশ, জহীরুদ্দীন, রাজশাহীর মজিবর রহমান, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, যশোরের রওশন আলী প্রমুখ এবং ছাত্রনেতা ফেরদৌস কোরেশী, আল-মুজাহিদীরা ছয় দফার বিরোধিতা করায় এবং বঙ্গবন্ধুসহ অন্য ছয় দফাপন্থিরা কারারুদ্ধ হলে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক কঠিন হয়ে পড়ে। ছয় দফাবিরোধীরা একদিকে আট দফা কর্মসূচিভিত্তিক পিডিএমএ যোগ দেয়, অন্যদিকে আইয়ুব খান ছয় দফা আন্দোলন বানচাল করার জন্য নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আমেনা বেগমের সহযোগিতায় এবং ছয় দফার পক্ষে তৃণমূল ছাত্রলীগের দৃঢ় অবস্থান এবং সিরাজ ভাইয়ের দক্ষ নেতৃত্বে এ পরিস্থিতির উত্তরণ হয়েছিল। তবে ছয় দফাকে বানচাল করার পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ১৯৬৮ সালের জুন মাসে বঙ্গবন্ধুকে ১ নম্বর আসামি করে ৩৫ জনের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চালু করা হলে, বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার মিশন নিয়ে সিরাজ ভাই ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন করার দিকে মনোনিবেশ করেন। ঊনসত্তরের এই ছাত্র আন্দোলনে শেখ মুজিবকে শুধু শর্তহীনভাবে মুক্তই করা হয়নি, ২২ ফেব্রুয়ারির বিশাল জনসমুদ্রে ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। বাস্তবে এক নতুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থান হয়। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করতেই হয়, বেগম মুজিব আন্দোলনে সিরাজ ভাইকে সহযোগিতা করেছেন, জেল সাক্ষাতের সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর বার্তা বয়ে আনতেন। এই আন্দোলনে বাঙালি জাতীয়তাবাদী স্লোগানের ঢেউ বয়ে যায় নিউক্লিয়াসের তৎপরতায়।

সিরাজ ভাই, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফকে নিয়ে ১৯৬২ সালে যে নিউক্লিয়াস গঠন করেছিলেন, তা ওই সময়ে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে পরিচিত ছিল। সদস্য বাড়তে লাগল দ্রুত। ঊনসত্তরের আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগে স্বাধীনতাপন্থিরা ব্যাপক শক্তি সঞ্চয় করে এবং ছয় দফার আন্দোলনকে এক দফার আন্দোলনে পরিণত করার কাজ শুরু হয়। ১৯৭০-এর ছাত্রলীগ সম্মেলনে স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্রের পক্ষে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ সংহত করা হয়। ‘জয় বাংলা’ হয়ে ওঠে আমাদের প্রিয় স্লোগান।

পাকিস্তানিরা আমাদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না মনে করে সশস্ত্র আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা ভাবা হয়, যারা ট্রেনিং নেবে, জেলা পর্যায় থেকে সে তালিকা তৈরি করা হয়। কিন্তু নির্বাচন করে ছয় দফাভিত্তিক সংবিধান তৈরি করার ম্যান্ডেট অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলে ট্রেনিংয়ের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয় এবং নির্বাচনে সর্বাত্মক জয়লাভের জন্য ছাত্রলীগ-শ্রমিক লীগ সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করার বিষয় নিউক্লিয়াস তথা সিরাজুল আলম খান নিশ্চিত করেন।

১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত হয়ে গেলে উদ্ভূত পরিস্থিতি পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানো হয়। ২ মার্চ মানচিত্র খচিত স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন, ৩ তারিখে স্বাধীনতার ইশতেহারের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক, জাতীয় সংগীত ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের ঘোষণার মাধ্যমে সারা দেশকে স্বাধীনতামুখী করে তোলা হয়। একাত্তরের ৭ মার্চে সম্ভবত সিরাজ ভাই বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য চাপ দেন, কেননা তাঁর ওপর কর্মীদের চাপ ছিল। ১৫ মার্চ ইয়াহিয়ার সঙ্গে সংলাপ শুরু হলে স্বায়ত্তশাসনপন্থিরা ষড়যন্ত্র করে কোনো আপসের পথ যাতে বের করতে না পারে, সে জন্য বঙ্গবন্ধু ভবন অভিমুখে ছাত্র-শ্রমিক-কর্মচারীদের শত শত মিছিল ঠেলে দেওয়া হয়। ২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে জয় বাংলা বাহিনীর কুচকাওয়াজ ও সারা দেশে পতাকা উত্তোলন করে পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেক ঠুঁকে দেন সিরাজ ভাই। এভাবেই স্বাধীনতা ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর সামনে থেকে সব বাধা অপসারিত করা হলো। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পর্যন্ত সিরাজ ভাইয়ের নির্দেশ পালনের জন্য ছাত্র-শ্রমিক অঙ্গনের সব কর্মী প্রস্তুত থাকত। জনগণের সমর্থন এবং ছাত্র-শ্রমিকদের তৎপরতায় বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন সফল হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ বাস্তবায়নে নিউক্লিয়াস ছিল তৎপর।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেখ মণি, সিরাজুল আলম, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখের নেতৃত্বে বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনী গঠন করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। নিউক্লিয়াসের সঙ্গে যুক্ত আমরা বেশির ভাগ কর্মী মুজিব বাহিনীতে যোগ দিই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কলহ ও মুজিব বাহিনীর সঙ্গে তাজউদ্দীন সাহেবের সমন্বয়হীনতার সুযোগ নিয়ে এক সময় প্রবাসী সরকার অস্থিতিশীল হওয়ার উপক্রম হয়। সিরাজ ভাই ওই সংকটময় মুহূর্তে সরকার স্থিতিশীল রাখতে তাজউদ্দীন সাহেবকে সমর্থন দিয়েছেন দৃঢ়তার সঙ্গে।

আমাদের মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সিরাজুল আলম খান ছয় দফার পতাকা বহন করেছেন নির্ভয়ে, কৌশলে গ্রেফতার এড়িয়ে চলেছেন, শ্রমিকদের সংযুক্ত করে আন্দোলন শক্তিশালী করেছেন। শ্রমিক অঙ্গনে শক্তিশালী RSP  নেতাদের ছয় দফা সংগ্রামে যুক্ত করতে নিবিড়ভাবে কাজ করেন। আদমজী, পোস্তগোলা, ডেমরা, তেজগাঁওসহ সব শ্রমিক এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতেন। প্রায়ই রাত ১২টার পর নীলক্ষেতের আনোয়ারা রেস্টুরেন্টে আমাদের আড্ডায় হাজির হতেন তাঁর ল্যাম্ব্রাডায় চড়ে। ছয় দফার আন্দোলন স্বাধীনতার লক্ষ্যে আপসহীন ধারায় এগিয়ে নেন এবং স্বাধীনতা ঘোষণা করার দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত করেন, রাজপথের সংগ্রামের মাধ্যমে আপসকামী ধারা নিষ্ক্রিয় করে দেন। স্বাধীনতা-উত্তরকালে একটি সমাজতন্ত্রমুখী রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য যুব সমাজকে প্রস্তুত করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সিরাজ ভাইয়ের মতের অমিলের কথা সবাই জানে। উনি দেশ গঠনের জন্য জাতীয় সরকার করার কথা বলেছিলেন। সিরাজ ভাই বঙ্গবন্ধুকে দল-মতের ঊর্ধ্বে রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু বঙ্গবন্ধু সংসদীয় ব্যবস্থায় নিজে প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছেন। আবার আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা নতুন শক্তিকে ধারণ করার কোনো পথও দেখাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করার যে অভিযোগ জাসদ ও সিরাজ ভাইয়ের ওপর করা হয়, তা মোটেও যৌক্তিক নয়। আওয়ামী লীগের ওপর হতাশ বঙ্গবন্ধু বাকশাল করলেন, সে সময়ের জনবিচ্ছিন্ন কলহপ্রিয় আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থাকেনি, তারা মোশতাকের সঙ্গেই থেকেছে।

সংসদীয় ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগের বিকল্প দল গঠন অপরিহার্য ছিল, তাই জাসদ গঠিত হয়েছিল। জাসদে সক্রিয় সব ধারা সংঘবদ্ধ রাখতে সিরাজ ভাইয়ের ব্যর্থতা আছে। ১৭ মার্চ ১৯৭৪ ছিল অপ্রত্যাশিত, ঘেরাও আন্দোলন হয়েছে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ছাড়া। গণবাহিনী গঠন ছিল আত্মরক্ষার তাগিদে, নির্যাতনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এক বাস্তবতা। এতে আমি তাঁর কোনো ভুল দেখি না। ৭ নভেম্বর ’৭৫-এর অভ্যুত্থানে সিরাজ ভাই খেলোয়াড় ছিলেন না। ১৯৮১ সালে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর দলে নানামুখী মত আর ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। এই দায় সিনিয়র সবার।

জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর, দেশ শাসনে পেশাজীবীদের ভূমিকা, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, গণমুখী ওষুধনীতি বাস্তবায়ন ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে রাজনীতিতে সক্রিয় হন, আ স ম রব তাঁকে সমর্থন করেন। আমরা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছিলাম। ১৯৮৫ সালের পর আমার সঙ্গে সিরাজ ভাইয়ের রাজনৈতিক যোগাযোগ ছিল না। তবে সামাজিক যোগাযোগ ছিল।

এরশাদের পতনের পর রাজনীতিতে তাঁর সক্রিয় তৎপরতা দেখা যায়নি। বিভিন্ন লেখায় তিনি গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, বিকেন্দ্রীকরণ, প্রদেশ গঠন, ফেডারেল কাঠামোর শাসনব্যবস্থা কায়েম ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর এসব চিন্তা উন্মুক্ত, তিনি এখন সবকিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেছেন। জাসদের ব্যর্থতার কিছু দায় তাঁর থাকতে পারে। তবে দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা সচল রাখতে তদানীন্তন সরকারের ব্যর্থতার দায় সিরাজ ভাইয়ের ওপর চাপানো অনুচিত।

ছয় দফার সংগ্রাম থেকে শুরু করে দেশকে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে আনা এবং অবিচলভাবে মুক্তিযুদ্ধ সফল করতে তাঁর যে অসামান্য অবদান সে জন্য তিনি চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁকে সশ্রদ্ধ সালাম ও তাঁর আত্মত্যাগের জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ জাসদ

সর্বশেষ খবর