বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

অজগর ঐ আসছে তেড়ে...

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

অজগর ঐ আসছে তেড়ে...

আমার মতো পঞ্চাশোর্ধ অনেকেই হয়তো বাংলা অক্ষর জ্ঞান শেষে পড়েছেন- “অজগর ঐ আসছে তেড়ে, আমটি আমি খাব পেড়ে, ইঁদুর ছানা ভয়ে মরে, ঈগল পাখি পাছে ধরে।” এই সাধারণ ও সহজ সরল কথাগুলো সাজিয়ে ভারতের শিল্পী আর ডি বর্মণ ছোটদের জন্য বাংলায় একটা মিষ্টি গানও গেয়েছিলেন। সহজ সরল এই কথাগুলোর মধ্যে কোনো রাজনীতি বা গল্প থাকার কথা নয়। আবার অতি উৎসাহী সমাজতাত্ত্বিকরা এই কথামালায় যদি দুর্বল ইঁদুরের ওপর সবল অজগর বা হিংস্র ঈগলের অত্যাচারের তত্ত্ব খুঁজে পান তাহলেও দোষ দেওয়া যাবে না। জীবনের শুরুতেই অজগর আর ঈগলের ভয় ছড়িয়ে শিশুমনে হীনমন্যতার বীজ বপনের অভযোগও তুলতে পারেন কেউ কেউ। ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখলে অজগর আর ঈগল তথা বিপদ শঙ্কুল পৃথিবীর অস্তিত্ব শিশু মনে জানান দেওয়া দোষের কিছু নয়। এক কথায় বলতে গেলে সবই দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। আমাদের নির্বাচন, আমাদের সংবিধান, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি-সবই কি তেমন, যে যেমনটা ব্যাখ্যা করে স্বার্থ উদ্ধার করতে পারে?

মধুময় জ্যৈষ্ঠ মাস শেষে এবং আষাঢ়ের শুরুতে চারদিকে যখন আমের ছড়াছড়ি, তখন আম খেতে খেতে ছোটবেলায় পড়া ওপরের কথাগুলো মনে পড়ল বিগত কয়েক দিনের ঘটনা প্রবাহের জেরে। আজ বাংলাদেশকে কেন যেন একটি আমের বাগান মনে হয়, যেখানে মৌসুম বুঝে সুমিষ্ট আম পেড়ে নিতে উঠে পড়ে লেগেছে একদল দৃশ্য কিংবা অদৃশ্য আম ব্যাপারী। বহু কৃষকের বছরের পর বছর ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে গড়ে ওঠা বাগানের পাকা আমের সন্ধানে নেমেছে এই ব্যাপারীরা, যেমনটা ঠিক ২৬৬ বছর আগে ১৯৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম বাগানে নেমেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। আবার তাদের দেশীয় দোসররাও কেউ কেউ মীরজাফর আর ঘসেটি বেগমের মতো সাজানো বাগানের ভিতরে ঢোকার সব অলিগলি ব্যাপারীদের বাতলে দিচ্ছেন। ১৭৫৭ সালের জুন মাসে করা মীরজাফর গংয়ের ভুলের খেসারত আমাদের দিতে হয়েছে প্রায় ২০০ বছর ধরে। তাই ২০২৩-এর জুনে আবার না কেউ কোনো ভুল করে বসে, এই দুশ্চিন্তাও ভাঁজ ফেলেছে অনেকের কপালে। অন্যদিকে আম বাগানের মালিক, চাষি ও পাহারাদারদের ভবিষ্যৎ নিয়েও দুর্ভাবনার শেষ নেই। তারা আজ যেন এক একটি ইঁদুরে পরিণত হয়েছেন। সামনে বিশাল অজগর ও পাছে ঈগল কখন যে অব্যর্থ নজর, ধারালো ঠোঁট আর তীক্ষè নখ নিয়ে ছোঁ মারবে-সেই দুশ্চিন্তায় অস্থির সময় পার করছে ইঁদুরগুলো।

স্বাধীনতার প্রায় ৫২ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশ আর কখনো এমন দ্বিমুখী সংকটে পড়েছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে এমন এক অবস্থানে বিরাজ করছে যেখান থেকে সীমান্ত পথে বিভিন্ন দিক থেকে ভারত ও মিয়ানমারে প্রবেশ এবং সে দেশে যে কোনো ঘটনা বা অঘটন ঘটানো সম্ভব। আবার বাংলাদেশে মূল ঘাঁটি গেড়ে বা শক্তি সঞ্চয় করে ভারত ও মিয়ানমারকে ব্যবহার করে নেপাল, চীন, পাকিস্তান, ভুটান ও শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কিছু দেশে প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব। বাংলাদেশকে ঘাঁটি হিসেবে পেলে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে যে কোনো বাণিজ্যিক অবরোধ বা নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজের ওপর খবরদারি ও নজরদারিতে সক্ষম হবে দূরের যে কোনো দেশ। প্রায় ১৭ কোটি মানুষে সমৃদ্ধ আজকের বাংলাদেশ আয়তনের তুলনামূলক মাপকাঠিতে ছোট্ট একটি রাষ্ট্র। এদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯১.০৪ শতাংশ মুসলমান। অন্যদিকে এ দেশের জনসংখ্যার প্রায় ২৭.৯৬ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর, সংখ্যার বিচারে যা প্রায় ৪.৫৯ কোটি। (সূত্র : সরকারি তথ্য বিবরণী)। এই বিশাল যুব সম্প্রদায়ের মাত্র ৫ শতাংশ, যা সংখ্যায় প্রায় ২৩ লাখ, যে কোনোভাবে যদি অস্ত্র হাতে পায় এবং যে কোনো মতবাদ বা যে কোনো দেশের পক্ষ বা বিপক্ষ অবলম্বনের জন্য যদি উদ্বুদ্ধ হয় তবে তা সামাল দেওয়া যে কোনো দেশি-বিদেশি শক্তির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এত অল্প জমিতে এত বেশি মুসলমানের অস্তিত্বও বিশ্বে বিরল। বিশ্ব অর্থনীতির বিরূপ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে প্রস্তুত প্রতিযোগিতামূলক মূল্যের তৈরি পোশাক উষ্ণতা ছড়ায় বিশ্বের প্রায় ৪২টি দেশে (সূত্র : বিজিএমইএ)। জাতিসংঘের শান্তি কার্যক্রম ও মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশের অর্থনীতি, নির্মাণ শিল্প ও সেবা খাত আজ বাংলাদেশের সামরিক শক্তি ও জনশক্তিনির্ভর। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের বাজার বিশ্বের বহু দেশের এবং অসংখ্য বহুজাতিক কোম্পানির বাণিজ্যের উর্বর ক্ষেত্র। বাংলাদেশে বহু মানুষ বেকার থাকলেও ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ বহু দেশের নাগরিক বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ নানা ক্ষেত্রে বৈধ ও অবৈধভাবে চাকরি করছে এবং মূল্যবান ডলার নিজ নিজ দেশে পাঠাচ্ছে। চীনের বিমান ও সমুদ্রবন্দর থেকে শত শত টন পণ্য প্রতিনিয়ত যাত্রা করে বাংলাদেশের বাজারের দিকে। ধান, পাট, গবাদিপশু, মিঠা পানির মাছ, সবজি, স্থানীয় ফলসহ নানা কৃষিপণ্য উৎপাদনে তাক লাগানো সাফল্য বাংলাদেশের। ‘এমন দেশটি কোথাও গেলে পাবে নাকো তুমি’- কবির এমন কথার এক বাস্তবতা আজকের বাংলাদেশজুড়ে। এ জন্যই আমাদের কাছের ও দূরের প্রতিবেশী, মুসলিম বিশ্বসহ বিশ্বের বহু দেশ, বহু পরাশক্তি, বহু জোট, বহু ব্যাংক ও বহু আমদানি-রপ্তানিকারকের ঈগল বা শকুন দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে।

বাংলাদেশের ওপর আজ তীক্ষè নজরের নেপথ্যে আরও রয়েছে বিশ্ব রাজনীতির নতুন সমীকরণ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র তথা আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই বলয়ে বিভক্ত ছিল বিশ্ব রাজনীতি। আশির দশকে উদার গণতন্ত্র ও ধনতন্ত্রের আধিপত্যে সমাজতন্ত্রে দৈন্য দেখা দেয় ও শেষ বিচারে ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি ও রাশিয়ার উত্থান ঘটে। এরপর প্রায় এক দশক বিশ্বজুড়ে আমেরিকার প্রায় একক কর্তৃত্ব বজায় ছিল। নতুন শতাব্দীতে অর্থাৎ ২০০১ সাল থেকে বিশ্ব অর্থনীতির নেতৃত্বে দ্রুত এগোতে থাকে চীন। আর অর্থনীতিতে নেতৃত্বে থাকার স্বার্থে বিশ্ব রাজনীতিতেই নতুন নিয়ামক হয়ে ওঠে আজকের চীন। অন্যদিকে ভøাদিমির পুতিনের ক্যারিশমায় রাশিয়াও অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ক্রমান্বয়ে নতুন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ওঠে ও বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও নিজের প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। তবে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে রাশিয়ার তুলনায় চীন অতিমাত্রায় আগ্রাসী হয়ে ওঠায় চিন্তার ভাঁজ দেখা দেয় আমেরিকার কপালে। তাই চীনকে সামাল দিতে আমেরিকার উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় একে একে গড়ে ওঠে নানা ধরনের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামরিক জোট যার অন্যতম ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও আমেরিকার জোট কোয়ার্ড। মূলত চীনকে বোতলবন্দি করতেই এই উদ্যোগ বলে ধারণা করা হয়। এই উদ্যোগের প্রতি অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও সমর্থন চায় কোয়ার্ড বা এ চারটি দেশ। অন্যদিকে ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না ও সাউথ আফ্রিকা; এ পাঁচটি দেশের আদ্যাক্ষর নিয়ে আবির্ভূত হয় ব্রিকস নামের নতুন জোট। এই জোটকে আমেরিকার আরেক সৃষ্টি জি সেভেন ব্লক অর্থাৎ কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, ইংল্যান্ড ও আমেরিকাকে নিয়ে গড়া জোটের প্রতিদ্বন্দ্বী ধরা হয়। চায়না বেল্ট অ্যান্ড রোড নামক নতুন উদ্যোগ নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের মধ্যে ১৫০টি দেশে ঋণ বিতরণ ও অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদানের পথে দ্রুত এগোতে থাকে। এর বিপরীতে জি সেভেন জোট মাঠে নামে ‘বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড’ বা ‘বি থ্রি ওয়ার্ল্ড’ নামক নতুন উদ্যোগ নিয়ে, যা দেশে দেশে মূলত ঋণ বিতরণের মাধ্যমে চীনের ওপর বিশ্বের নির্ভরতা হ্রাস ও নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সচেষ্ট থাকে। চীন ও আমেরিকাবিরোধী সব জোট ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও নিজের দিকে ভিড়িয়ে রাখার ছক কষে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকার অবস্থানকে ভারত অন্ধভাবে সমর্থন করবে বলে আমেরিকার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। ভারতের কখনো আমেরিকা আবার কখনো রাশিয়ার প্রতি ঝোঁকের কারণে ভারতকে চিরদিনের জন্য পরীক্ষিত বন্ধু তালিকায় ফেলতে এই তিন দেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতি ভারতের অন্ধ সমর্থন চীন এবং আমেরিকা উভয় দেশেরই চিন্তার কারণ। তাই চীন, আমেরিকা ও রাশিয়া বাংলাদেশকে নিজের পক্ষে নিয়ে প্রয়োজনে ভারত, মিয়ানমার তথা চীনের বিরুদ্ধে এমনকি পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধেও কার্যকর প্রদক্ষেপ নিতে উদগ্রীব হয়ে আছে। ফলে বাংলাদেশ যেন এক আম বাগানে পরিণত হয়েছে, যার দিকে জমিতে অজগর তেড়ে আসছে আর মাথার ওপর চক্কর দিচ্ছে ঈগল ও শকুন।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে কারচুপি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত ও বাক-স্বাধীনতা হরণের মতো আরও কিছু অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ভবিষ্যতে আমেরিকার ভিসা না দেওয়া নীতি ঘোষিত হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমেরিকার নাক গলানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে চীন। ভারতও নানাভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের হয়ে আমেরিকাকে বোঝানোর পথে হাঁটবে বলে ধারণা করা হয়। নির্বাচন নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখেও চীন ও ভারত শেখ হাসিনার পাশেই ছিল। বাংলাদেশে চীনের বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ ও ভারতের নানামুখী স্বার্থ রক্ষার জটিল অঙ্ক শেখ হাসিনাকে বারবার সমর্থন এনে দিয়েছে। এদিকে ভারত অন্ধভাবে আমেরিকাকে সমর্থন না দেওয়ায় পশ্চিমা বিশ্বের ধারণা চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঐক্য আমেরিকা তথা বিশ্ব শান্তির বিপক্ষে বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে। আর ভারতকে চাপের মধ্যে রাখতে রাখতে বাংলাদেশে নিজ পছন্দের সরকার বসাতে উদগ্রীব আমেরিকা। এর সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, বিশ্ব বাণিজ্যে ডলার বনাম বিকল্প বিনিময় মুদ্রা, মুসলমান বনাম অমুসলমান প্রভাবের মতো বিষয়গুলো বাংলাদেশের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। জাতির এই ক্রান্তিকালে সর্বমহলের বিচক্ষণতা একান্ত কাম্য। এদেশে আর কোনো সংকট না হোক-এটাই আমজনতার চাওয়া। লেখাটা শেষ করার মুহূর্তে টিভির পর্দায় দেখলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের বিভিন্ন নেতানেত্রীকে বাংলাদেশের সুস্বাদু আম পাঠাচ্ছেন। এই আমের বিপরীতে ভারতের সীমান্ত থেকে যদি আর কোনো ফেলানি বা আমজনতার লাশ ফেরত না আসে, তবেই আম কূটনীতি সার্থক হবে। আমেরিকা, চীন বা রাশিয়া কেবল আমেই তুষ্ট নয়। বিশ্বব্যাপী এই তিন দেশের সব কর্ম কিংবা নিন্দুকের ভাষায় অপকর্মে বাংলাদেশের সমর্থন তাদের প্রত্যাশা। এ সময় সংকট নির্দেশনে জাতীয় ঐক্য ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের ঘাটতিতে ভবিষ্যতে বড় ভুল হয়ে যেতে পারে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আমাদের জাতীয় সংগীতের একটি চরণে রয়েছে- “ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে...।’ আমের পাগল করা ঘ্রাণ আর সুমিষ্ট স্বাদ আমাদের যেন বাস্তবতা ভুলিয়ে না দেয়। আমাদের ভুল তথা ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে সুযোগ নিয়ে বিদেশিরা আম চুষে নিবে এবং আমাদের দিকে আঁটি ছুড়ে মারবে। এ জন্যই কি ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং বহু জীবন আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল? এ দেশের জনসংখ্যা যখন ৮ কোটি ছিল, তখন বরেণ্য গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু একটি অসাধারণ গান লিখেছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে সে গান গেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন কোটি মানুষের চোখে পানি ঝরিয়েছিলেন। সে গানের একটি অংশ স্মরণ করেই লেখাটি শেষ করব- “ওরে এক ফাগুনে ফোটে নাই এ ফুল/, কত মেঘের জল শুকাইছে ফোটাইতে এ ফুল/, ...কত মেঘের জল ফুরাইছে বাঁচাইতে এ ফুল/, ও কত মায়ের ভরা কোল হইছে গো খালি/, ... লক্ষ কোটি প্রাণ বাঁচে যার বুকের শুধায়/, ওরে এমন ফুলের বাগান হায় কোথায়/, ৩০ লক্ষ প্রাণ ঘুমায় রে গাছেরই তলায়/, ও কত রক্ত পানির মতো দিসি গো ঢালি/, ও আমার আট কোটি ফুল/, দেখো গো মালি/, শক্ত হাতে বাইন্ধ মালি লোহারও জালি।” বাংলাদেশ নামের বাগানের মালিরা তথা দেশের নেতা-নেত্রীরা এ গানটি কি একটু শুনবেন? একটু অনুধাবন করবেন এই গানের মর্ম বাণী? না নিজ ও দলের স্বার্থ উদ্ধারে আমাদের আবারও অজগর আর ঈগলের ভয় দেখিয়ে বলবেন “অজগর ঐ আসছে তেড়ে...ঈগল পাখি পাচ্ছে ধরে”।

                ♦ লেখক : গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

                Email; [email protected]

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর